|
|
|
|
বলছে হাসপাতালের নথি |
দু’দিনে তৈরি রিপোর্ট পড়েই ছিল চার দিন |
রানা সেনগুপ্ত • বর্ধমান |
খুনের ঘটনাটি ঘটেছিল ২২ ফেব্রুয়ারি। আর দুই সিপিএম নেতার ময়না-তদন্ত রিপোর্ট তৈরি হয়ে গিয়েছিল ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালেই। যা কি না বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগে পড়ে ছিল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২৯ ফেব্রুয়ারি বর্ধমান থানার এক কনস্টেবল এসে ওখান থেকে সেটি নিয়ে গিয়েছিলেন।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের ‘পিএম খাতা’য় এই তথ্যই লেখা রয়েছে।
স্বাভাবিক ভাবেই বিভাগের শিক্ষক ও কর্মীরা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন না, প্রদীপ তা এবং কমল গায়েন হত্যা-মামলায় ময়না-তদন্ত রিপোর্ট পুলিশ শুক্রবার সকালে কলকাতা হাইকোর্টে জমা দিতে পারল না কেন। এতে তাঁদের অনেকের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভেরও সৃষ্টি হয়েছে। এক জনের কথায়, “আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিপোর্ট বানিয়ে দিয়েছি। তবু পুলিশ তা ঠিক সময়ে দিতে না-পারায় আমাদের বিভাগের দক্ষতা নিয়েই তো ভুল ধারণা হল হাইকোর্টের! এটা মোটেই ঠিক হল না।”
বর্ধমান মেডিক্যালের ফরেন্সিক মেডিসিনের ‘পিএম’ খাতায় ১৮৬ নম্বরে রয়েছে সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সদস্য কমল গায়েনের নাম। বর্ধমান থানার ইউডি কেস নম্বর ১৯২/১২। গত ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। ওই খাতারই পরের পৃষ্ঠায় প্রথম নামটি সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক প্রদীপ তা-র। বর্ধমান থানার ইউডি কেস নম্বর ১৯৩/১২। তাঁর মৃতদেহের ময়না-তদন্তও হয় ২২ ফেব্রুয়ারি। দু’টোই করেন বর্ধমান মেডিক্যালের ফরেন্সিক মেডিসিন (এফএসএম) বিভাগের প্রধান দীপঙ্কর গুহরায়।
ওই বিভাগের এক কর্তা এ দিন বলেন, “সম্প্রতি রাজ্য সরকার রীতিমতো নির্দেশ জারি করে বলেছে, সমস্ত মর্গের ময়না-তদন্ত রিপোর্ট দু’দিনের মধ্যে দিতে হবে। সব ক্ষেত্রে আমরা তা মেনে চলি। নিহত দুই সিপিএম নেতার পিএম-রিপোর্টও ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালের মধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছিল।” কর্তাটির আরও দাবি, “আমাদের তরফে কোনও গাফিলতি হয়নি। পুলিশই দেরি করেছে। হাইকোর্ট আমাদের কাছে জানতে চাইলে আমরা এটাই বলব।”
কিন্তু ওঁদের বিভাগের তথ্য তো এ-ও বলছে যে, দু’দিন আগে (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুই সিপিএম নেতার পিএম-রিপোর্ট ওখান থেকে সংগ্রহ করেছিলেন বর্ধমান থানার কনস্টেবল অজিত দাস (কনস্টেবল নং ১২৩৫৬)। এ দিন হাইকোর্টে তা জমা না-পড়ার ব্যাপারে পুলিশের কী বক্তব্য?
জেলা পুলিশ-কর্তারা এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এক কর্তার মন্তব্য, “যা বলার, সরকারি আইনজীবী আদালতকে বলেছেন। সেটাই আমাদের বক্তব্য।”
পুলিশ মন্তব্য এড়ালেও রাজ্যের আইনমন্ত্রী তথা বর্ধমান জেলার মন্ত্রী মলয় ঘটক কিন্তু দায়টা কার্যত হাসপাতালের উপরেই চাপিয়েছেন। এ দিন মন্ত্রীর দাবি, “ময়না-তদন্ত রিপোর্ট চিকিৎসকেরা পর পর নম্বর মেনে দেন। এ ক্ষেত্রে মলয়বাবুর জবাব, “হাইকোর্ট নির্দেশ দেওয়ায় ‘সিরিয়াল’ ভেঙে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে।”
আইনমন্ত্রীর যুক্তি শুনে আর এক বার অবাক হয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যালের ফরেন্সিক মেডিসিনের চিকিৎসক-কর্মীরা। ময়না-তদন্তের খাতা খুলে তাঁরা ফের দেখিয়ে দিয়েছেন, ২৯ ফেব্রুয়ারি কোন কনস্টেবল দুই সিপিএম নেতার পিএম-রিপোর্ট নিয়ে গিয়েছেন। আর এই বিতর্ক প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, “শুনেছি, ময়না-তদন্তের রিপোর্টে ২২ ফেব্রুয়ারির সই আছে। দুর্ভাগ্যজনক যে, তা সত্ত্বেও রিপোর্ট জমা পড়েনি! বিচারালয়ে না-গেলে সেটা কবে জমা পড়ত, জানি না!”
শুধু ময়না-তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে নয়। দিনে-দুপুরে প্রকাশ্য রাজপথে দু’জনকে খুন করা হলেও পুলিশ যথেষ্ট সংখ্যক মানুষের জবানবন্দি কেন নিল না, হাইকোর্ট এ দিন সে প্রশ্নও তুলেছে। পাশাপাশি অভিযোগ উঠেছে প্রত্যক্ষদর্শীদের সকলের বয়ান না-নেওয়ার। হত্যাকাণ্ডের পরে প্রদীপ তা’র ছোট ভাই প্রবীর তা দাবি করেছিলেন, তিনি ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী।
সিপিএমের বর্ধমান জেলা কমিটির সম্পাদক অমল হালদারের অভিযোগ, “প্রবীরবাবু বা প্রদীপবাবুর স্ত্রী চিত্রলেখাদেবীর বয়ান লিপিবদ্ধ করতে পুলিশ গড়িমসি করেছে। প্রদীপবাবুর বাড়ির লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করছে। তদন্ত চলছে ঢিলেঢালা ভাবে। তবে এখনই সিবিআই তদন্তের দাবি জানাচ্ছি না। নিরপেক্ষ তদন্ত চাই।” |
|
|
|
|
|