‘নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ’ এনে দলের প্রধানকে সরিয়ে দিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যরা। বৃহস্পতিবার তুফানগঞ্জ-১ ব্লকের চিলাখানা-২ পঞ্চায়েতে ঘটনাটি ঘটেছে। অপসারিত প্রধানের নাম মনোজ বর্মা। তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “উন্নয়নের কাজে গতি আনার পাশাপাশি সরকারি প্রকল্পের সুবিধে বাসিন্দাদের কাছে দ্রুত পৌঁছে দিতে দল ওই সিদ্ধান্ত নেয়।” ৮ সদস্য বিশিষ্ট ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্বাচনের সময় তৃণমূল কংগ্রেস ৫টি, বিজেপি ২টি ও সিপিএম ১টি আসনে জয়ী হয়। প্রধান হন তৃণমূলের মনোজ বর্মা। পরে সিপিএম ও বিজেপির ১ জন করে সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন। অনাস্থা ভোটে তারা ছাড়াও বিজেপির বাকী ১ সদস্য উপস্থিত ছিলেন। প্রপ্রধানের ঘনিষ্ঠ মহলের অভিযোগ, দায়িত্ব নেওয়ার পরে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে দরিয়াবালাই ঘাটপাড় পর্যন্ত রাস্তা তৈরির ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে চিলাখানা-২ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি জগদীশ বর্মনের সঙ্গে প্রধানের বিরোধ শুরু। অঞ্চল সভাপতির ঘনিষ্ঠের বদলে খোলা টেন্ডারে নিয়ম মেনে টেন্ডার প্রাপককে বরাত দেওয়া হলে ওই বিরোধ চরম আকার নেয়। পরে বাকিরা বিল সংস্কার সহ আরও কয়েকটি ক্ষেত্রেও পছন্দের ঠিকাদার নিয়োগ নিয়ে গোলমাল চরমে পৌঁছয়। এসবের জেরে অঞ্চল সভাপতি প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার ছক কষেন। বৃহস্পতিবার তলবি সভায় ভোটাভুটিতে ৭-০ ব্যবধানে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব গৃহীত হয়। বিদায়ী গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মনোজ বর্মা সাফ বলেছেন, “অঞ্চল সভাপতির অন্যায় নির্দেশ মেনে সরকারি উন্নয়নের কাজে তার পছন্দের ঠিকাদারকে বরাত দিতে পারিনি বলে বিরোধের সূত্রপাত হয়। তার উপরে এলাকায় কৃষি জমি নষ্ট করে ইটভাটার মাটি কাটার প্রতিবাদ করায় তার ক্ষোভ বেড়ে যায়। এ সবের খেসারত হিসেবে আমাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল। গোটা ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি।” অঞ্চল সভাপতির অনুগামী শিবিরের অভিযোগ, বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে মনোজবাবু দলের কর্মসূচি এড়িয়ে যেতেন। পঞ্চায়েত সদস্যদেরও কিছু না জানিয়ে একা সিদ্ধান্ত নিতেন। তার জেরেই সকল সদস্য একজোট হয়ে অনাস্থা আনার সিদ্ধান্ত নেন। চিলাখানা-২ অঞ্চল তৃণমূল সভাপতি জগদীশ বর্মন বলেন, “ভিত্তিহীন অভিযোগ। প্রধান পদ খোয়ানোয় দিশেহারা হয়ে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ওই সব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আমার পছন্দের ঠিকাদার কেউ নেই। ফলে কারও হয়ে সুপারিশের প্রশ্নই নেই।” সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতেন মনোজবাবু। কোন পঞ্চায়েত সদস্যের মতামত শুনতেন না বলে সকলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল।” জেলা তৃণমূল সভাপতির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত অঞ্চল সভাপতির বক্তব্য মানতে চাননি জেলার অন্যতম প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা আব্দুল জলিল আহমেদ। তাঁর বক্তব্য, “মনোজ কাজের ছেলে। পঞ্চায়েত ভোটের কয়েকমাস বাকি। তার আগে ওকে যে ভাবে সরানো হল তা ঠিক হল না। এতে স্থানীয় মানুষের কাছে ভুল বার্তা গেল।” |