যাঁকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, বালুরঘাট জেলা হাসপাতালের সেই সুপার ছুটিতে চলে গিয়েছেন। ফলে হাসপাতালের প্রসূতিকে ভর্তি না-নেওয়া ও বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে আলট্রাসোনোগ্রাফি করতে পাঠানোর অভিযোগের তদন্তে কোনও অগ্রগতি হয়নি। গত রবিবার বালুরঘাটের রিন্টু দাস নামে ওই প্রসূতি হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক ওয়ার্ডের বাইরেই দেখার পরে বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে আলট্রাসোনোগ্রাফি করতে পাঠান বলে অভিযোগ। সেখানে আলট্রোসোনোগ্রাফি চলাকালীন প্রসূতির প্রসব শুরু হয়। ওই অবস্থায় পরিবারের লোকেরা তড়িঘড়ি তাঁকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করান। কিন্তু রিন্টু দেবীর সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে বাঁচানো যায়নি। রিন্টু দেবীর স্বামীর অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা স্বাস্থ্য দফতর তদন্তের নির্দেশ দিলেও সুপারই যেখানে ছুটিতে সেখানে আদৌ বিচার পাবেন কি না সেই বিষয়ে সন্দিহান প্রসূতির পরিবার। বৃহস্পতিবার প্রসূতির স্বামী সুমনবাবু বালুরঘাটের বিধায়ক তথা কারামন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তীর সঙ্গে দেখা করে সুবিচারের আর্জি জানান। স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সুরেশ মণ্ডলের গাফিলতিতেই যে সদ্যোজাতের মৃত্যু হয়েছে সেই অভিযোগও জানান তিনি। সব শুনে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা কারামন্ত্রী বিষয়টি দেখবেন বলে সুমনবাবুকে আশ্বাস দেন। কারামন্ত্রী বলেন, “রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর থেকে ঘটনার তদন্ত হবে বলে জানানো হয়েছে।” যদিও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস দাবি করেন, “জেলা স্তরে তদন্ত শুরু হয়েছে। হাসপাতাল সুপারকে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে। ওই তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর রাজ্য স্তরে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সুমনবাবু বলেন, “ঘটনার দিন সকালে প্রসব বেদনায় কাতর স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে ওই চিকিৎসক ‘গর্ভস্থ সন্তান ও মা, দু’জনেই ভাল আছে’ বলে জানিয়ে বাইরে থেকে ইউএসজি করিয়ে রিপোর্ট দেখাতে বলেছিলেন। সে সময় হাসপাতালে ভর্তি এবং ডিসচার্জ সংক্রান্ত কোনও কাগজই দেওয়া হয়নি। পরে যখন ফের স্ত্রীকে আনা হয় তার পরেই ভর্তি ও ডিসচার্জ সার্টিফিকেট দেওয়া হয়। অভিযোগ জানানোর পরেও স্বাস্থ্য দফতর কী করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। কারামন্ত্রীকে সব জানিয়েছি।” বালুরঘাট জেলা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিনই প্রসূতির পরিবারের মুখ থেকে সমস্ত ঘটনাটি জানার পরে তদন্তের আশ্বাস দেন সুপার বুদ্ধদেব মণ্ডল। তার পরেই তৃণমূল প্রভাবিত প্রোগ্রেসিভ হেলথ ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের সংগঠন জয়েন্ট কাউন্সিল অভিযুক্ত চিকিৎসকের পাশে দাঁড়িয়েছে। এমনকী, প্রসূতিকে ভর্তি নেওয়ার ব্যাপারে চিকিৎসকের গাফিলতি সংক্রান্ত যে বিবৃতি সুপার দিয়েছিলেন তা প্রত্যাহার করানোর জন্য চাপ সৃষ্টিও করা হয় বলে অভিযোগ। বিষয়টি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশের পরে ফের তৃণমূল প্রভাবিত ওই চিকিৎসক সংগঠনের পক্ষ থেকে সুপারকে চাপ দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পরেই ছুটিতে চলে যান সুপার। এদিন কলকাতা থেকে সুপার বুদ্ধদেববাবু বলেন, “আমি এ সম্পর্কে কিছু বলব না।” অন্যদিকে ওই তৃণমূল প্রভাবিত চিকিৎসক সংগঠনের সম্পাদক অলক মাইতি এ দিন দাবি করেন, চিকিৎসকের গাফিলতি সম্পর্কিত যে বিবৃতি সুপার দিয়েছিলেন তা যে ভুল সে কথা তিনি লিখিত ভাবে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “আসন্ন প্রসবাকে সেদিন ভর্তি করা হয়েছিল। তা ছাড়া এসব কথা সুপার প্রকাশ্যে বলতে পারেন না বলে আপত্তি জানানো হয়েছিল। চাপ দিয়ে লিখে নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” জয়েন্ট কাউন্সিল অব হেলথের জেলা সম্পাদক স্বপন দাশগুপ্তও দাবি করেন, ঘটনার দিন ওই চিকিৎসক আসন্ন প্রসবা ওই মহিলাকে ডিসচার্জ করেননি। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল বলে চিকিৎসক বাইরে থেকে ইউএসজি করাতে বলেছিলেন। তিনি বলেন, “ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। তবে রবিবার বা ছুটির দিনে এ ধরনের ঘটনায় অন কল টেকনিশিয়ানদের ডাকা হয়।” কোঅর্ডিনেশন কমিটি ভুক্ত নন মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের জেলা সম্পাদক মৃণাল চৌধুরি বলেন, “ওই প্রসূতিকে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ডিসচার্জ করেননি বলে শুনেছি। আমরাও চাই ঘটনার সঠিক তদন্ত হোক।”
খুন। দুষ্কৃতীদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে খুন হলেন যুবক। বৃহস্পতিবার সকালে ইসলামপুর থানার মাদারিপুর এলাকায় ক্যানালের পাশ থেকে যুবকের দেহটি উদ্ধার হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম মহম্মদ সেলিম (২৫)। বাড়ি ইসলামপুর থানার ধনতলা এলাকায়। এদিন মৃতদেহটি পড়ে থাকতে দেখে বাসিন্দারা পুলিশকে খবর দেন। ওই যুবকের বাবা কামরুল জামাল জানান, মঙ্গলবার রাতে ছেলে বাড়ি থেকে বেরোয়। না ফেরায় বৃহস্পতিবার ইসলামপুর থানায় নিখোঁজের অভিযোগ করতে গিয়েছিলেন। সেখানেই ছেলের খুন হওয়ার খবর পান। পুলিশের অনুমান, ওই যুবককে খুন করে দেহ এলাকায় ফেলে যায় দুষ্কৃতীরা। |