স্মারকলিপি বিডিও ও পঞ্চায়েত প্রধানকে |
বিনা টেন্ডারে নালা তৈরির অভিযোগ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
বিনা টেন্ডারে নিকাশি নালা তৈরির অভিযোগ উঠেছে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের বিরুদ্ধে। শিলিগুড়ির অদূরে আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের অমরপল্লি এলাকায় ৮ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকায় ২৫ মিটার দীর্ঘ ওই নালা তৈরি করা হচ্ছে। মহকুমা পরিষদের ঠিকাদারদের একাংশের অভিযোগ, টেন্ডার ছাড়াই ওই কাজের পিছনে কোনও ‘লেনদেন’ হয়ে থাকতে পারে। তবে ঠিকাদারদের আরেকটি অংশ দাবি করেন, কোনও লেনদেন হয়নি। এই অবস্থায় প্রকৃত সত্য উদঘাটনের জন্য তদন্তের দাবি তুলেছেন এলাকার সিপিএম এবং তৃণমূল সমর্থকেরা। শুধু তাই নয়, ওই ঠিকাদার কী ভাবে ওই কাজ করছেন সেই প্রশ্নও তুলেছেন মাটিগাড়া ব্লক তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ ঘোষ, আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা সুকুমার বর্মন, প্রদীপ বর্মনেরা। বৃহস্পতিবার এই ব্যাপারে এলাকার বাসিন্দারা মাটিগাড়ার বিডিও বীরবিক্রম রাই এবং আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সিপিএমের দক্ষবালা বর্মনকে স্মারকলিপিও দেন। ওই তৃণমূল নেতা বলেন, “২৫ মিটার দীর্ঘ নালা তৈরি করতে ৮ লক্ষ টাকা লাগে না। দুর্নীতি আড়াল করতেই এই কাজের জন্য টেন্ডার হয়নি। এই ঘটনায় পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ জড়িত রয়েছেন বলে আমাদের সন্দেহ। সেই জন্যই তদন্তের দাবি করা হচ্ছে।” শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি পাসকেল মিনজের বক্তব্য, “বিনা টেন্ডারে নালা তৈরি হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।” অভিযুক্ত পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। টেন্ডার ছাড়া নালা তৈরির কাজে নামার ব্যাপারে তাঁর ব্যাখ্যা, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের আলসিয়া বাজারের বেহাল রাস্তা সংস্কারের জন্য ওই ৮ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। পরে ওই কাজটি স্থগিত রেখে অমরপল্লিতে নালা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। পূর্ত কমাধ্যক্ষ বলেন, “আলসিয়া বাজারের কাজের জন্যই টেন্ডার হয়। পরে স্থায়ী সমিতিতে কাজের জায়গা বদলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওয়ার্ক অর্ডারে কাজের জায়গার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।” সরকারি নিয়ম অনুসারেই কোনও একটি বিশেষ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকা অন্যত্র খরচ করা যায় না। স্থায়ী সমিতি এই ব্যাপারে অনুমতি দিলেও নতুন করে টেন্ডার ডাকা হয়নি কেন? পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের বক্তব্য, “কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে। আমার বিরুদ্ধে লোক খেপানো হচ্ছে।” এই ব্যাপারে মহকুমার পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক সুবলচন্দ্র রায় বলেন, “অভিযোগ খতিয়ে দেখে মন্তব্য করব।” মহকুমা পরিষদের বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আইনুল হক বলেন, “এ ভাবে এক জায়গার জন্য বরাদ্দ টাকা অন্যত্র খরচ করা যায় না। বিনা টেন্ডারে কাজ হয়েছে কি না খোঁজ নিয়ে দেখব।” মহকুমা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর বর্ষায় আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের আলসিয়া বাজার এলাকার রাস্তাঘাট ভেঙে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কিছু বাড়ি। মহকুমা পরিষদ থেকে ৮ লক্ষ ৩৬ হাজার টাকায় রাস্তা সংস্কারের পরিকল্পনা হয়। তার পরে কী ভাবে ওই টাকা অমরপল্লিতে নানা তৈরির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে সেই প্রশ্ন তুলেছেন আঠারোখাই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানও। তাঁকে অন্ধকারে রেখেই এটা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। প্রধান বলেন, “এদিন এলাকার বাসিন্দারা অমরপল্লির কাজটি নিয়ে বিক্ষোভ ও ঘেরাওয়ের সময়ে কাগজপত্র দেখান। তার আগে অমরপল্লির কাজের বিষয়ে কিছুই জানতাম না। অথচ আমাদের এলাকার কোথায়, কোন কাজ হবে সেটা তো আমরা ঠিক করব। সবাধিপতি আমাদের দলেরই নেতা। তাঁর কাছেই বিষয়টি জানতে চাইব।”
|