|
|
|
|
১০০ দিনের কাজের প্রকল্প |
হুগলির ৯২টি পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে ‘ব্যবস্থা’ নেওয়ার নির্দেশ প্রশাসনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আরামবাগ |
১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে হুগলি জেলার ২০৭টি পঞ্চায়েতকেই ফেব্রুয়ারি মাসে নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার খাতে খরচ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জেলাশাসক শ্রীপ্রিয়া রঙ্গরাজন। কিন্তু সেই নির্দেশ না মানায় ৯২টি পঞ্চায়েতের সংশ্লিষ্ট কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিলেন তিনি।
গত মঙ্গলবারই ওই নির্দেশ জেলার ১৮টি ব্লকের বিডিওদের কাছে পৌঁছয়। নির্দেশের প্রতিলিপি মহকুমাশাসকদের কাছেও পাঠানো হয়। জেলাশাসক বলেন, “১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের যে আইন রয়েছে, তার সফল রূপায়ণের লক্ষ্যে যাবতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প রূপায়ণের ক্ষেত্রে আবশ্যিক তথ্য দেওয়া না হলে এবং নিয়মকানুন মানা না হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে ৯২টি পঞ্চায়েত ওই নির্দেশ মানেনি বলে জেলাশাসক চিহ্নিত করেছেন, তার মধ্যে রয়েছে আরামবাগ মহকুমার ৩২টি, শ্রীরামপুরের ১৮টি, চন্দননগরের ১৩টি এবং চুঁচুড়া সদর মহকুমার ২৯টি। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগী বলেন, “যে সব পঞ্চায়েত নিয়ম মানেনি, সেই সব পঞ্চায়েতের প্রধান, নির্বাহী সহায়ক এবং নির্মাণ সহায়কদের শো-কজ করা হচ্ছে। উত্তর পাওয়ার পরেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” একই সুরে চুঁচুড়া সদর মহকুমার মহকুমাশাসক জলি চৌধুরীও বলেন, “শো-কজ করে ২৯টি পঞ্চায়েতের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কেন নির্মাণ সামগ্রী খাতে খরচ করা হল।” একই বক্তব্য চন্দননগরের মহকুমাশাসক ভি ললিতালক্ষ্মীরও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আইন অনুযায়ী, ওই প্রকল্পের কোনও কাজে শ্রমিকদের মজুরি বাবদ নূন্যতম ৬০ শতাংশ এবং নির্মাণ সামগ্রী খাতে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ খরচ করতে পারে পঞ্চায়েতগুলি। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি জেলাশাসক ওই প্রকল্পে টাকা খরচের ক্ষেত্রে জেলার ২০৭টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ৫৮টিকে ‘কালো তালিকা’ভুক্ত করে নির্দেশ দেন, পরবর্তী সিদ্ধান্ত না জানানো পর্যন্ত ওই পঞ্চায়েতগুলি নির্মাণ সামগ্রী (বোল্ডার-মোরাম ইত্যাদি) ব্যবহার করে কাজ করতে পারবে না। পরে তিনি সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশ দেন, জেলার সব ক’টি পঞ্চায়েতই ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত কোনও নির্মাণ সামগ্রীর কাজ করতে পারবে না। নির্মাণ সামগ্রী খাতে খরচ বন্ধ থাকবে। এই নির্দেশের মাধ্যমে গরিব মানুষ যাতে মজুরি খাতে বেশি টাকা পান, সেটাই চেয়েছিল জেলা প্রশআসন। কিন্তু ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে জেলাশাসক পঞ্চায়েতগুলির কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে গিয়ে দেখেন, নির্মাণ সামগ্রী খাতে খরচ সংক্রান্ত নির্দেশ ৯২টি পঞ্চায়েতে মানা হয়নি। এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১৮ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা পর্যন্ত নির্মাণ সামগ্রী খাতে ব্যয় করা হয়েছে। এর পরেই ওই পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন জেলাশাসক।
কিন্তু জেলাশাসকের ওই নির্দেশের ফলে, প্রকল্প রূপায়ণে সমস্যা হয়েছে বলে অভিমত ওই ৯২টির মধ্যে কয়েকটি পঞ্চায়েতের প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মীদের। যেমন, আরামবাগের একটি পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, “নির্মাণ সামগ্রী ছাড়া অনেক কাজই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।” উদাহরণ হিসেবে তিনি জানান, পুকুর সংস্কারের পরে ঘাট তৈরি করতে গেলে কিছু ঝামা বা ইট-সিমেন্ট প্রয়োজন। কাজ অসম্পূর্ণ রাখা যায় না। অন্য একটি পঞ্চায়েতের নির্মাণ সহায়ক বলেন, “একেবারে নির্মাণ সামগ্রী বর্জিত অবস্থায় কাজ করতে হলে শ্রমিকেরা মাত্র ৫-৭ দিন কাজ পাবেন।” কিছু অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপের জন্য নিয়ম অনুযায়ী মজুরি ৬০ শতাংশ এবং নির্মাণ সামগ্রী খাতে ৪০ শতাংশ খরচের অনুপাত রাখা যাচ্ছে না বলে তাঁর অভিমত। এ ব্যাপের জেলাশাসক জানিয়েছেন, নির্মাণ সামগ্রী খাতে খরচ পরেও করা যেতে পারে। কিন্তু শ্রমিকেরা যাতে কাজ করার পরেই মজুরি পেয়ে যান, তার জন্যই ওই নির্দেশ জারি করা হয়। তবে, চলতি মাসে ওই নির্দেশ জারি থাকবে কি না, এ নিয়ে জেলাশাসক কোনও মন্তব্য করেননি। |
|
|
|
|
|