|
|
|
|
মহকুমা ফুটবল নিয়ে বিতর্ক |
লিগ শেষ না করেই পরবর্তী পর্যায়ে তিন দল |
প্রকাশ পাল • কলকাতা |
লিগ শেষ না করেই ‘নজিরবিহীন’ ভাবে প্রথম ডিভিশন থেকে দুইয়ের বদলে তিনটি দলকে তুলে দেওয়া হল সুপার ডিভিশনে। এমনই ঘটনা ঘটেছে হুগলির শ্রীরামপুর মহকুমা ফুটবল লিগে। ‘বিতর্ক’ সামাল দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও ‘বিতর্ক’ তাতে চাপা থাকছে না।
এমনিতেই ২০১১ সালের ফুটবল লিগ চালাতে গিয়ে কার্যত ‘ল্যাজেগোবরে’ হয়েছে শ্রীরামপুর মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা। বছর গড়িয়ে গেলেও লিগ শেষ করা যায়নি। শুধু খেলা শেষ করতে না পারাই নয়, যথাসময়ে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে দলবদল। সব মিলিয়ে, খেলা পরিচালনা নিয়ে ক্ষুব্ধ ফুটবলপ্রেমীরা। ক্লাবগুলির মানসিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
২২টি দলকে নিয়ে করে প্রথম ডিভিশনের লিগের খেলা আরম্ভ হয়েছিল। লিগ পর্যায়ের খেলা শেষে আটটি দলকে নিয়ে নকআউট পর্যায়ে খেলা শুরু হয়। সেমিফাইনালে ওঠে ভদ্রকালী-কোতরং যুব সঙ্ঘ, কোন্নগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন, নবগ্রাম সেবক সঙ্ঘ এবং শ্রীরামপুর স্পোর্টিং ক্লাব। বিপত্তি বাধে শ্রীরামপুর স্পোর্টিং ক্লাবের একটি চিঠি পাওয়া নিয়ে। সেমিফাইনালে তাদের খেলা পড়ে সেবক সঙ্ঘের সঙ্গে।
ক্রীড়া সংস্থার দাবি, প্রথমে শ্রীরামপুর স্টেডিয়ামে খেলা হওয়ার কথা থাকলেও শেষমেষ স্পোর্টিংয়ের সেমিফাইনাল খেলা ফেলা হয় চাঁপদানির ইন্দিরা ময়দানে। সেই সংক্রান্ত চিঠি পিয়ন মারফত স্পোর্টিং ক্লাবে পাঠিয়েও দেওয়া হয়। স্পোর্টিং কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেন, ওই চিঠি তাঁদের হাতে দেওয়া হয়নি। নবগ্রাম সেবক সঙ্ঘ অবশ্য জানায়, ইন্দিরা ময়দানে খেলা হওয়ার কথা চিঠি দিয়ে তাদের জানানো হয়েছিল।
নির্ধারিত দিনে নবগ্রামের দলটি ইন্দিরা ময়দানে উপস্থিত হয়। স্পোর্টিং অবশ্য শ্রীরামপুর স্টেডিয়ামে যায়। ওই মাঠে তখন ভদ্রকালী-কোতরং যুব সঙ্ঘ এবং কোন্নগর ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের মধ্যে সেমিফাইনাল খেলার তোড়জোড় চলছিল। শ্রীরামপুরের দলটির দাবি, ওই মাঠে গিয়ে তারা জানতে পারে তাদের খেলা অন্য মাঠে। অভিযোগ, তখন স্পোর্টিংয়ের বাধায় অন্য সেমিফাইনালটিও হতে পারেনি (পরে খেলাটি হয়। ফ্রেন্ডস ইউনিয়ন ১-০ গোলে জিতে ফাইনালে পৌঁছয়)। অন্য দিকে, শ্রীরামপুর স্পোর্টিং ইন্দিরা ময়দানে উপস্থিত না থাকায় ক্রীড়া সংস্থার এক্সিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে সেবক সঙ্ঘকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। এই নিয়েই জট পাকায়। ওই বৈঠকে সদস্যদের ঘেরাওয়ের অভিযোগ ওঠে স্পোর্টিংয়ের ছেলেদের বিরুদ্ধে। তুমুল হই-হট্টগোল হয়।
শ্রীরামপুর স্পোর্টিং এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে জেনারেল কমিটিতে ‘রিপ্লে’র দাবি জানায় তারা। স্পোর্টিং এবং ক্রীড়া সংস্থা যুযুধান দু’পক্ষই নিজেদের বক্তব্যে অনড় থাকে। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ নিয়ে টালবাহানা চলতে থাকে। ক্রীড়া সংস্থার পিয়নও লিখিত ভাবে দু’বার দু’রকম কথা জানান (এর পর থেকে পিয়নকে ‘বসিয়ে রাখা’ হয়েছে)। জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে সাধারণ সভায় স্থির হয়, সেবক সঙ্ঘকে রাজি করিয়ে রিপ্লে করানোর চেষ্টা করা হবে। সংস্থার কার্যকরী সভাপতি তথা রিষড়ার প্রাক্তন পুরপ্রধান দিলীপ সরকার ওই ক্লাবের সঙ্গে কথাও বলেন। সেবক সঙ্ঘ অবশ্য ওই প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
গত শনিবার ফের সাধারণ সভা হয়। সংস্থা সূত্রের খবর, যুগ্ম সম্পাদক সৌমেন ঘোষ, সদস্য শম্ভুনাথ রায় এবং কুনাল ঘোষ রিপ্লে করেই সমস্যা সমাধানের কথা বলেন। অন্য যুগ্ম সম্পাদক তরুণ মিত্র, এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্য গৌতম ঘোষ-সহ সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য অবশ্য ৩টি দলকেই সুপার ডিভিশনে তোলার পক্ষে রায় দেন। শেষমেশ সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হয়।
যদিও, ওই সিদ্ধান্তের ফলে জট রয়েই গেল। কেননা ক্রীড়া সংস্থারই একাংশ প্রশ্ন তুলছেন, প্রথমত, একটি চিঠি আদৌ পৌঁছেছে কিনা, তা প্রমাণই করা গেল না। দ্বিতীয়ত, প্রথম ডিভিশনের চ্যাম্পিয়ন এবং রানার্স দলের সুপার ডিভিশনে সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৩টি দলকে তুলে দেওয়া হল। তৃতীয়ত, খেলা শেষ না হওয়ায় কে চ্যাম্পিয়ন বা কে রানার্স তা স্থির হল না। ফলে সরকারি ভাবে আদৌ লিগ শেষ হল না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্রীড়া সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, “প্রতিযোগিতা শেষ না করেই কী ভাবে বৈধ ভাবে পরবর্তী পর্যায়ের খেলা করানো সম্ভব? এর আগেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে রিপ্লের নজির আছে। কিন্তু নিয়ম ভেঙে অতিরিক্ত একটি দলকে তুলে দেওয়ার কোনও দৃষ্টান্ত আছে কিনা, জানি না।” সংস্থার এক পদাধিকারী অবশ্য বলেন, “খেলা শেষ করতে একটি বিকল্প প্রস্তাব এসেছে। সেটি নিয়ে আলোচনা করা হবে।”
সংস্থার কার্যকরী সভাপতি দিলীপ সরকার বলেন, “কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্যই সমস্যা হয়েছে। খেলার স্বার্থেই কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে সকলে যদি খেলাটার প্রতি আন্তরিক হয়, তবেই এ ধরনের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।” এ দিনের সাধারণ সভায় তিনটি দলকে সুপার ডিভিশনে তোলার পাশাপাশি শ্রীরামপুর স্পোর্টিংয়ের নিন্দা করা হয় একটি খেলা বানচাল করার জন্য। এ বিষয়ে তাদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। ভবিষ্যতে চিঠিপত্র পৌঁছনোর ব্যাপারে দুই সম্পাদককে ‘সতর্ক’ থাকতে বলা হয়েছে। |
|
|
|
|
|