বাংলাদেশের সঙ্গে ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তিতে প্রথমে লিখিত ভাবে সায় দিয়েও পরে আপত্তি তোলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে ক্ষুব্ধ কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশ সরকার দ্রুত ওই চুক্তির রূপায়ণের জন্য নয়াদিল্লির উপরে চাপ দিচ্ছে। ছিটমহলের বাসিন্দারাও কেন্দ্রের কাছে একই দাবি তুলেছেন। কিন্তু মমতার আপত্তির কথা ভেবে মনমোহন সরকারকে সতর্ক পদক্ষেপ করতে হচ্ছে।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে মনমোহন সিংহ ও শেখ হাসিনার মধ্যে ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি হয়। এ দেশে নিয়ম অনুযায়ী, যে কোনও আন্তর্জাতিক চুক্তিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সিলমোহরই যথেষ্ট। কিন্তু ছিটমহল হস্তান্তরের ফলে যেহেতু আন্তর্জাতিক সীমান্ত নতুন করে নির্ধারণ হবে, তাই এ ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সরকারকে সেই সংবিধান সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করতে হবে। কিন্তু মমতার আপত্তির জন্য এখনও সংবিধান সংশোধনী বিলে অনুমোদন দিতে পারেনি কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম অবশ্য বলছেন, চুক্তি অনুযায়ী সংবিধান সংশোধন করেই তার বাস্তবায়ন হবে। সম্প্রতি দিল্লিতে দু’দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে চুক্তি রূপায়ণের প্রসঙ্গ তোলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকেও খাতুন এ ব্যাপারে অনুরোধ জানান। খাতুনকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, বাজেট অধিবেশনেই সংবিধান সংশোধনী বিল আনা হবে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যের সীমান্ত-লাগোয়া যে সব ‘ছিট’ বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের জমি বলে মমতা সেগুলি বাংলাদেশের হাতে তুলে দিতে রাজি নন।
ইউপিএ সরকারের প্রশ্ন, সেপ্টেম্বরে মনমোহন সিংহের বাংলাদেশ সফরের আগে পশ্চিমবঙ্গ, অসমের মতো সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির থেকে সম্মতি চাওয়া হয়েছিল। তখন পশ্চিমবঙ্গের তরফে লিখিত সম্মতি দেওয়া হয়। বাম জমানাও নয়, রাজ্যে পালাবদলের পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানাতেই এই সম্মতি দেওয়া হয়েছিল। তা হলে এখন আপত্তি কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে মনমোহন সরকার। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, ছিটমহল সমস্যার সমাধানে ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তিতে ছিটমহল সমস্যা সমাধানের কথা বলা হয়। বাংলাদেশ সেই চুক্তিতে সিলমোহর বসালেও ভারত এত দিন তা করেনি। এখন সংবিধান সংশোধনের পর ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি এবং নতুন চুক্তিতে অনুমোদন দেওয়ার কথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার।
রাজনৈতিক শিবিরের অবশ্য বক্তব্য, মমতা যদি আপত্তি না-ও করেন, তা হলেও এই সংবিধান সংশোধনী বিল সরকারের পক্ষে পাশ করানো কঠিন। কারণ বিজেপিও ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তির বিরোধিতা করছে। সংবিধান সংশোধন করতে গেলে সংসদের দুই কক্ষেই দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন প্রয়োজন। রাজ্যসভায় এমনিতেই সরকার সংখ্যালঘু। ফলে চিদম্বরম মুখে যা-ই বলুন, প্রধান শরিক দল ও প্রধান বিরোধী দলের আপত্তি সত্ত্বেও সেখানে ছিটমহল হস্তান্তর চুক্তি পাশ করানো সরকারের পক্ষে কঠিন হবে। বিজেপির দাবি, বাংলাদেশের মধ্যে যে সব ভারতীয় ‘ছিট’ রয়েছে, তার বাসিন্দাদের বাংলাদেশের নাগরিকত্বই নিতে হবে। কোনও ভাবেই তাঁদের ভারতীয় নাগরিক হওয়ার সুযোগ দেওয়া চলবে না। কারণ সে ক্ষেত্রে অনুপ্রবেশ বাড়বে। অথচ চুক্তি অনুযায়ী, ছিটমহলের বাসিন্দারা নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী যে কোনও দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করতে পারবেন। |