শেষ হাসি কে হাসবেন? রাহুল গাঁধী নাকি অখিলেশ সিংহ যাদব? নাকি দু’জনেই?
উত্তরপ্রদেশে সপ্তম ও শেষ দফার ভোট গ্রহণ হবে পরশু দিন। তার আগে আজই হিন্দি বলয়ের সবথেকে বড় রাজ্যে নির্বাচনী প্রচার শেষ হল। উত্তরপ্রদেশের ভোটে এ বার সবচেয়ে চোখে পড়ার মতো ‘মেহনত’ করেছেন যে দুই নেতা, তাঁরা দু’জনেই তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি। যাঁরা সমানে সমানে টক্করও দিতে চেয়েছেন একে অপরকে।
প্রথম জন রাহুল গাঁধী। উত্তরপ্রদেশে দলের কাণ্ডারী হয়ে উঠে যিনি কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। রাজ্যে কংগ্রেসের হৃতগৌরব ফেরাতে চাইছেন। অন্য জন মুলায়ম সিংহের পুত্র অখিলেশ সিংহ যাদব। সমাজবাদী পার্টিকে ফের উত্তরপ্রদেশের তখতে বসানোর চেষ্টা করছেন তিনি। পুরোদস্তুর রাহুলের মতো না হলেও সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী-নির্বাচন থেকে প্রচারকৌশল, এ বার বারো আনাই নির্ধারণ করেছেন অখিলেশ। |
রাহুল গাঁধী |
অখিলেশ সিংহ যাদব |
|
১৪ নভেম্বর থেকে উত্তরপ্রদেশে আনুষ্ঠানিক ভোট-প্রচার শুরু করেছিলেন রাহুল। তার পর থেকে ৪৮ দিন সেখানে প্রচারে গিয়েছেন তিনি। ২১১টি জনসভা করেছেন, ১৮টি বিধানসভায় তাঁর রোড শো হয়েছে। সাম্প্রতিক কালে কংগ্রেসের কোনও কেন্দ্রীয় নেতার কোনও রাজ্যে ভোট-প্রচারে এমন পরিশ্রমের দৃষ্টান্ত নেই। স্বাভাবিক ভাবেই গাঁধী পরিবারের রাজনৈতিক গরিমার কারণে তাঁর সেই প্রচার অন্যদের তুলনায় সংবাদমাধ্যমের আলো কিছুটা বেশি কেড়েছে। কিন্তু অখিলেশও কম যাননি। ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ১৮ জানুয়ারি পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে সাইকেল র্যালি করেছেন অখিলেশ। তার পর থেকে প্রতিদিন প্রচারে বেরিয়েছেন তিনি। রোড শো করেছেন। তাঁরও প্রচারে উপচে পড়েছে ভিড়।
স্বাভাবিক ভাবেই উত্তরপ্রদেশের ভোটে নবীন প্রজন্মের এই দুই নেতার সাফল্যের সম্ভাবনা নিয়ে কৌতূহলের পারদ চড়ছে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ সারির নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ফল ভাল হলে সংশয়াতীত ভাবেই তা রাহুলের কৃতিত্ব বলে বিবেচিত হবে। তা ছাড়া ভোটের ফল যাই হোক না কেন, উত্তরপ্রদেশের ভোট রাহুল গাঁধীকে আগের তুলনায় অনেক পরিণত করেছে। কংগ্রেস হাইকমান্ড তথা সনিয়া গাঁধী কোনও রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতির খোঁজখবর নিতে বরাবর দলের সাধারণ সম্পাদক ও রাজ্য স্তরের নেতাদের ওপর ভরসা করেছেন। রাহুল এ বার সেই ব্যবস্থাও ভেঙে দিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের আনাচেকানাচে ঘুরে জাতপাত ও জমির রাজনৈতিক বাস্তবতা সম্পর্কে ‘ফার্স্ট হ্যান্ড’ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন তিনি।
সমাজবাদী পার্টির নেতৃত্বের মতে, অখিলেশও দলে পরিবর্তন এনেছেন। বেনোজল দূর করে ‘গুন্ডা-বদমায়েশদের’ তাড়িয়েছেন। কোনও দাগিকে প্রার্থী করেননি। মুলায়ম জমানায় ‘গুন্ডারাজ’ নিয়ে জনমানসে যে অসন্তোষ ছিল, তা দূর করতে সচেষ্ট হয়েছেন। রাহুল যখন আগ্রাসী প্রচার করে তাঁর গুস্সা দেখিয়েছেন, অখিলেশ প্রচার করেছেন নিচু স্বরে। তিনি তাঁর বিনয়কে তুলে ধরতে চেয়েছেন মানুষের সামনে। তাঁর সেই আচরণের কদরও করেছে মানুষ। দলের এক শীর্ষ নেতার কথায়, সপা মূলত মুলায়মের নেতৃত্ব-নির্ভর একটি আঞ্চলিক দল। এই ধরনের দলে একটা সময়ের পর নেতৃত্বের সংকট বড় হয়ে ওঠে। যেমন লালুপ্রসাদের দলে হয়েছে। ফলে অখিলেশ যদি সফল হন, তা সপা-রও পুনরুজ্জীবন ঘটাবে।
তবে এমনটা অনিবার্য নয় যে, এই দুই তরুণ নেতার এক জন সফল হলে অন্য জন ব্যর্থ হবেন। সমাজবাদী পার্টি যদি ১৬০টি বা তার বেশি আসন পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হয়ে উঠতে পারে, তা হলে তা অখিলেশেরই সাফল্য বলে বিবেচিত হবে। সেই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ৬০টির মতো আসন পেলে তা-ও কম সাফল্য নয়। এবং সেই কৃতিত্ব পাবেন রাহুলই। যদিও রাহুল ঘনিষ্ঠদের মতে, ভবিষ্যতে অখিলেশ-রাহুল দ্বৈরথের তীব্রতা বাড়বে বই কমবে না। কারণ, উত্তরপ্রদেশে সপাকে দুর্বল করতে পারলে তবেই সেখানে কংগ্রেস শক্তিশালী হবে। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ভোটের পর কী হবে তা এখনই বলা সম্ভব নয়। হতেই পারে রাজনৈতিক পরিস্থিতি সমাজবাদী পার্টিকে অন্তত বাইরে থেকে সমর্থন করার জন্য কংগ্রেসকে বাধ্য করবে। |