বহু দিন আগে তৈরি হয়েছে, অথচ বার্ষিক মূল্যায়ন হয়নি শহরে ছড়িয়ে থাকা এমন সমস্ত বাড়ির মূল্যায়ন করার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা।
শহরে কোথায় কত তলার বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তার নথি মূল্যায়ন বিভাগে পাঠানোর কোনও ব্যবস্থা নেই কলকাতা পুরসভায়। ফলে, বাড়ি তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যায়ন করার সুযোগ কম। যদিও পুর-আইনে ব্যবস্থা আছে যে, কোনও নতুন বাড়ি হলে বা পুরনো বাড়ির কোনও অংশ বাড়ানো হলেই ‘সুয়ো মোটো’ মূল্যায়ন করার দায়িত্ব ওয়ার্ড পরিদর্শকের। কিন্তু অভিযোগ, সেই কাজটি হচ্ছে না বহুদিন ধরেই। ফলে শহরে বেশ কয়েক হাজার বাড়ি দীর্ঘ দিন আগে তৈরি হয়ে গেলেও তার মূল্যায়ন করা হয়নি। আর এর জন্য কোটি কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পুরসভা। বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর করা হচ্ছে। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট পরিদর্শককে চিহ্নিত করা হবে বলেও পুরসভা সূত্রের খবর।
প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী, সম্পত্তির মালিক পুরসভার কাছে বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মিউটেশনের আবেদন না-করা পর্যন্ত সেই বাড়ির বার্ষিক মূল্যায়ন করা হয় না। ফলে পুরকরও দিতে হয় না সংশ্লিষ্ট জমির মালিককে। এতে বছরে অন্তত কয়েকশো কোটি টাকার কর হারাচ্ছে পুরসভা। মেয়র পারিষদ (মূল্যায়ন) দেবব্রত মজুমদার ওই খবর জানিয়েছেন। তাঁর বিভাগের করা একটি হিসেবে মূল্যায়ন হয়নি এমন বাড়ির সংখ্যা শহরের মোট সম্পত্তির ৬০ শতাংশের বেশি। তাঁর মতে, ওই সব বাড়ির বার্ষিক মূল্যায়ন করে কর আদায় করতে পারলে পুরসভার বছরে ১০০০ কোটি টাকা বেশি আয় হওয়ার কথা।
মেয়র পারিষদ জানিয়েছেন, জমির মূল্যায়ন হওয়ার পরে সেই জমিতে বাড়ি তৈরি হয়েছে কিন্তু বাড়ির মূল্যায়ন করা হয়নি, এমন সব বাড়ির বার্ষিক মূল্যায়ন করতে বিভাগকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কাজটি শেষ করতে হবে চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে। তিনি অবশ্য এ-ও বলেন, শহরে মোট কত বাড়ি রয়েছে, তার কোনও নথি পুরসভার কাছে নেই।
মেয়র পারিষদ বলেন, এখন থেকে পুরসভা নতুন বাড়ির অনুমোদন দিলেই তার একটি প্রতিলিপি আ্যাসেসমেন্ট বিভাগে পাঠাতে হবে। একই ভাবে কোথাও নতুন করে জলের বা নিকাশি সংযোগ নেওয়া হলে তার সব তথ্য অ্যাসেসমেন্ট বিভাগে পাঠাতে হবে। যাতে বিভাগ দ্রুত সেই বাড়ির মূল্যায়ন করতে পারে।
পুরসভার এক অফিসারের বক্তব্য, পুরকর ফাঁকি দেওয়ার জন্য নিত্যনতুন পদ্ধতি বার হচ্ছে। যেমন, এক শ্রেণির জমির মালিক ও প্রোমোটারের মধ্যে এক রকম চুক্তি হচ্ছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী বহুতল বা ছোট যে বাড়িই হোক, তার মূল প্ল্যান অনুমোদনের সময়ে জমির মালিকের নামেই তা করা হচ্ছে। প্রোমোটার তাঁর প্রাপ্য অংশ বিক্রি করে চলে যাওয়ার পরেও তাই মূল জমির উপরেই আগে থেকে ধার্য কর কার্যকর থেকে যাচ্ছে। ফলে অনেকে ওই সুযোগ নিয়ে দীর্ঘ দিন মিউটেশন ফেলে রাখছেন। আর এক শ্রেণির মানুষ আছেন, মূলত নিম্ন ও মধ্যবিত্ত, যাঁরা ফ্ল্যাট কেনার পরেই মিউটেশন করতে চান এবং আবেদনও করেন। কিন্তু অভিযোগ, নানা অজুহাতে তাঁদের হয়রান করে অ্যাসেসমেন্ট বিভাগ।
মিউটেশনের নয়া নীতি
জমি ও বাড়ির মালিকদের হয়রানি এড়াতে বৃহস্পতিবার থেকে ‘ওয়ান ভিজিট মিউটেশন’ চালু করল কলকাতা পুরসভা। এ দিন মেয়র পারিষদ (কর মূল্যায়ন) দেবব্রত মজুমদার জানান, মিউটেশন করাতে অহেতুক দেরি নিয়ে নানা অভিযোগ আসত। দফতরের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন উঠত। তিনি বলেন, “এ বার মিউটেশনের জন্য পুরসভায় এক বার এলেই হবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক থাকলে প্রথম বারেই আবেদন অনুমোদন করে দেওয়া হবে। তার দু’চার দিনের মধ্যেই আবেদনকারী মিউটেশনের কাগজপত্র পেয়ে যাবেন।” আপাতত পুরসভার কেন্দ্রীয় অফিস ও গড়িয়াহাট অফিসে দৈনিক ৩০টি করে আবেদন জমা নেওয়া হবে বলে কর-মূল্যায়ন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
দেবব্রতবাবু জানিয়েছেন, এ দিন পুরসভার কেন্দ্রীয় অফিসে ২৭টি ও গড়িয়াহাট অফিসে ২৫টি আবেদন জমা পড়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় অফিসে ১৮টি ও গড়িয়াহাটে ২০টি আবেদনের ক্ষেত্রে কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকায় সেগুলি মিউটেশনের জন্য অনুমোদন করা হয়েছে। বাকিগুলির ক্ষেত্রে সঠিক কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে। |