রাজারহাটে তৃণমূল ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় অভিযুক্ত তাপস চট্টোপাধ্যায়ের আগাম জামিনের আবেদন বৃহস্পতিবার গ্রহণ করে শুনানি ১২ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত রাখল বারাসত আদালত। এ দিন পর্যন্ত তাপসবাবু নিজে প্রকাশ্যে আসেননি। তাঁর পক্ষ থেকে আইনজীবীরা আদালতে আগাম জামিনের আবেদন করেন। ১২ মার্চ ওই মামলার মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে বারাসত আদালত। এ দিকে পুলিশের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে উত্তর ২৪ পরগনার বাম নেতৃত্ব এ দিন অভিযোগ করেছেন, ওই ঘটনায় রাজারহাট-নিউ টাউনের তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধেও অভিযোগ জানানো হলেও পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেনি।
এই অভিযোগের জবাবে বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ কমিশনার রাজীবকুমার বলেন, “সব্যসাচীবাবুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এফআইআর হলেই যে কাউকে গ্রেফতার করতে হবে তার কোনও মানে নেই। কিছু নির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতেই তদন্ত চলছে। সেই ভিত্তিতেই আমরা কয়েক জনকে গ্রেফতার করেছি এবং তাপসবাবুকে খোঁজা হচ্ছে।”
এ দিন বারাসত আদালতে রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায়ের আগাম জামিনের আবেদন জানান পশ্চিমবঙ্গ গণতান্ত্রিক আইনজীবী সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনার আইনজীবীরা। মঙ্গলবার ধর্মঘটের দিন রাজারহাটে সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের ঘটনায় তাপসবাবুর নামে এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ হয়। এ দিন জামিনের সেই আবেদন গ্রাহ্য করে ১২ মার্চ মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন জেলা ও দায়রা বিচারক অসীম মণ্ডল। আইনজীবীদের ওই সংগঠনের পক্ষে মিহির দাস ও প্রীতীশ দাশগুপ্ত জানান, যেহেতু আদালতের কাছে তাপসবাবু আগাম জামিনের আবেদন করেছেন এবং তিনি এক জন চেয়ারম্যান সেহেতু এই সময়ের মধ্যে তাঁকে গ্রেফতার না করাটাই যুক্তিসঙ্গত।
ঘটনার দিন রাজারহাটের নারায়ণপুরের পশ্চিম বেড়াবেড়ির বাসিন্দা শাহনওয়াজ আলি মণ্ডল তাপসবাবুর বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট থানায় অভিযোগ জানান। তাপসবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ খুনের ষড়যন্ত্র, লোক জমায়েত করে ইট, বোতল পাথর ছোড়া, বিপজ্জনক অস্ত্র দিয়ে আঘাত-সহ মোট সাতটি ধারায় মামলা করেছে। তাপসবাবু-সহ মোট ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তবে তাপসবাবু বা বাম নেতৃত্বকে এ দিন আদালত চত্বরে দেখা যায়নি।
এ দিকে ওই ঘটনার তদন্তে পুলিশ পক্ষপাতিত্ব করছে বলে অভিযোগ জানাল সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব। এ দিন তেঘরিয়ায় রাজারহাট জোনাল কমিটির অফিসে সাংবাদিক সম্মেলনে দমদমের প্রাক্তন সাংসদ অমিতাভ নন্দী বলেন, “ওই দিনের ঘটনায় আমরাও এলাকার তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের বিরুদ্ধে মারামারি ও প্রত্যক্ষ মদতের অভিযোগ করেছি। এয়ারপোর্ট থানায় এফআইআর হয়। অথচ পুলিশ তাঁর বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করছে না। শুধু তাপসবাবুকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে।” ব্যাপাকপুরের প্রাক্তন সাংসদ তড়িৎবরণ তোপদারের অভিযোগ, “যে রক্ষীর রিভলভার ছিনতাই হয়েছে তার থেকে তাপস অনেক দূরে ছিল। ওই রক্ষীও এই ঘটনায় তাপসের নাম বলেনি। তা হলে তাপসকে কেন মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে?” রাজারহাটের প্রাক্তন বিধায়ক রবীন মণ্ডল বলেন, “তাপসবাবু পালিয়ে নয়, আইনের আশ্রয়েই রয়েছেন।”
এ ব্যাপারে সব্যসাচীবাবুর বক্তব্য, “তাপসবাবুকে বাঁচাতে গৌতমবাবু অমিতাভবাবুরা যা ইচ্ছে তাই বলছেন। ঘটনার যারা আহত হয়েছেন তাঁরা আমাদেরই লোক। আমাদের লোককেই আমি মারব কেন?” সব্যসাচীবাবুর পাল্টা প্রশ্ন, “পুলিশের সামনে না নিয়ে গিয়ে তাপসবাবু তা হলে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন?”
তৃণমূলের সন্ত্রাস ও মহিলাদের উপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ বাগুইআটি থেকে রাজারহাটের বাবলাতলা পর্যন্ত মিছিলের ডাক দিয়েছে বামফ্রন্ট। রাজ্য নেতৃত্বের উপস্থিতিতে সেখানে রেকর্ড সংখ্যক মানুষ জড়ো হবেন বলে দাবি জানিয়েছেন বাম নেতৃত্ব। অন্য দিকে, তাপসবাবুকে গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার পাল্টা মিছিলের ডাক দিয়েছে তৃণমূল। |