মহাকরণের কৃষি দফতর থেকে হাজিরা খাতার একটি পাতা উধাও হয়ে গেল। ওই পাতায় কর্মীদের ফেব্রুয়ারি মাসের হাজিরার হিসাব ছিল। যার মধ্যে রয়েছে ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের দিনটিও। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরেই চাঞ্চল্য ছড়ায় ওই দফতরে। এই ঘটনার কথা জানিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হলেও কে বা কারা, কী উদ্দেশ্যে এই কাজ করেছে, দিনের শেষেও তা স্পষ্ট নয়।
তবে এর জন্য কোনও অসুবিধা হবে না বলে জানিয়েছেন কৃষি দফতরের অফিসারেরা। দফতরের সচিব হৃদেশ মোহন বলেন, “২৮ তারিখের হাজিরার গুরুত্ব উপলব্ধি করে আগে থেকেই প্রতিলিপি তৈরি করে রাখা হয়েছিল। তাই আসল পাতা চুরি গেলেও অসুবিধে নেই।” তিনি জানান, পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি বিভাগীয় তদন্তও শুরু হয়েছে।
রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য এই ঘটনার মধ্যে ‘ষড়যন্ত্র’ রয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, “আমরা পুলিশে খবর দিয়েছি। তদন্ত শুরু হয়েছে। এর মধ্যে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে হচ্ছে।” কারা এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত, তা নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করেননি তিনি। কৃষি দফতর সূত্রের খবর, এ দিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ জানা যায় মহাকরণের কৃষি অধিকর্তার অফিসে রাখা ৫ নম্বর হাজিরা খাতার একটি পাতা কেউ ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে। হাজিরা খাতাটিতে সই করতেন ওই বিভাগের গ্রুপ-ডি কর্মচারীরা। দফতরের এক কর্মীর কথায়, “কাল রাতেও হাজিরার খাতাটি ঠিকঠাক ছিল। মনে হচ্ছে, এ দিন সকালে অফিস খোলার পরেই কেউ এসে পাতাটি ছিঁড়ে নিয়ে গিয়েছে।”
বিভাগের এক কর্তা জানান, ওই হাজিরা খাতায় যাঁদের নাম ছিল, তাঁদের মধ্যে ২৮ তারিখ এক জনই অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁর নাম দেবজ্যোতি দে। তিনি মাস খানেক ধরে অফিসে আসছেন না। বাকি সকলেই সে দিন হাজির ছিলেন। ফলে পাতা ছেঁড়ার রহস্য থেকেই গিয়েছে।
এ দিকে, ধর্মঘটের দিন ‘অনুপস্থিত’ কর্মীদের তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ এ দিনও শেষ করা যায়নি। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, বুধবারের মধ্যে অনুপস্থিত কর্মীদের নামের তালিকা দিতে বলা হয়েছিল প্রতিটি দফতর ও জেলাকে। কিন্তু এ দিনও সব জায়গা থেকে রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। দফতরের এক কর্তা জানান, আজ, শুক্রবার অনুপস্থিতদের তালিকা চূড়ান্ত করার চেষ্টা হবে। রাজ্য সরকার অনুপস্থিত কর্মীদের নামের তালিকা তৈরি করলেও কলকাতা হাইকোর্ট
ধর্মঘটের দিন গরহাজির কর্মীদের ছুটির দরখাস্ত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেল সমস্ত অফিসার ও কর্মীদের
ওই নির্দেশ দিয়েছেন।
এ দিন সকালে হাইকোর্টের বিভিন্ন দফতরের প্রধানদের নির্দেশ দিয়ে প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘটের দিন যাঁরা গরহাজির ছিলেন তাঁদের ছুটির দরখাস্ত দুপুর ৩টের মধ্যে জমা দিতে হবে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অফিসার-কর্মীদের মধ্যে দরখাস্ত জমা দেওয়ার জন্য হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কারণ ধর্মঘটের দিন হাইকোর্টের বহু কর্মচারীই অনুপস্থিত ছিলেন। তবে ওই দরখাস্ত জমা নেওয়ার পর আদালত কী করবে, তার অবশ্য ইঙ্গিত মেলেনি। |