মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, সাজানো ঘটনা!
কিন্তু সেই ‘সাজানো ঘটনা’র অন্যতম অভিযুক্ত পুলিশকর্মী তারক দাসকে বৃহস্পতিবার সাসপেন্ড করা হল। এবং পার্ক স্ট্রিটের মতো গাঙ্গুলিবাগানের ঘটনাতেও ফের মুখ্যমন্ত্রী এবং পুলিশের বক্তব্যের ফারাকটা প্রকট হয়ে উঠল।
ধর্মঘটের দিন গাঙ্গুলিবাগানে সাংবাদিক নিগ্রহ এবং সিপিএম কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় তারকবাবু জড়িত বলে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল। পুলিশি তদন্তে প্রাথমিকভাবে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই কনস্টেবলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হল বলে পুলিশকর্তারা জানিয়েছেন। তবে, ওই ঘটনায় বাকি অভিযুক্ত মানিক বণিক, মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল, পুলক চৌধুরী, মনু সাহা, দাশু সাহা, জয়দেব দাস, বাবু সাহা, রাজু সাহাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ বিষয়ে ডিসি (এসএসডি) বিশ্বরূপ ঘোষ বলেন, “ওই অভিযুক্তদের বিষয়েও খোঁজখবর শুরু করা হয়েছে।”
কলকাতা পুলিশের ডিসি (বন্দর) মেহবুব রহমান এ দিন বলেন, “ওই ঘটনায় তারক দাসের জড়িত থাকার ব্যাপারে ডিসি (এসএসডি) বিশ্বরূপ ঘোষ একটা রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। ওই রিপোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতেই অভিযুক্তকে আজ সাসপেন্ড করা হয়েছে।” ডিসি (বন্দর) জানিয়েছেন, এর পর সাউথ-সুবার্বন ডিভিশন থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাঠানো হবে। সেই রিপোর্ট পাওয়ার পর কোনও পদস্থ কর্তাকে দিয়ে তারকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে।
প্রশ্ন উঠছে, মহাকরণে দাঁড়িয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রী ‘সাজানো ঘটনা’ বলার পরেও কেন সাসপেন্ড হতে হল ওই পুলিশকর্মীকে? পুলিশের একাংশের মতে, ওই ঘটনা যে সাজানো ছিল না, তারককে সাসপেন্ড করে তা প্রমাণ করে দিল পুলিশ। কারণ, অভিযোগ প্রাথমিকভাবে সত্য বলে প্রমাণিত না হলে কোনও অভিযুক্তকে সাসপেন্ড করা যায় না। তবে, ঘটনার দিনও লালবাজার থেকে যে প্রেস বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল, তাতে ওই ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল।
তা হলে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডের মতো গাঙ্গুলিবাগানের ঘটনাতেও কি মুখ্যমন্ত্রীর এবং পুলিশের বক্তব্যে ফারাকটাই ফের প্রকট হয়ে উঠল? এ দিন কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার শিবাজী ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনি বলেন, “এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”
পুলিশ সূত্রের খবর, তারকের বিরুদ্ধে এর আগেও বেশ কয়েকটি গোলমালে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে। পুলিশের একাংশের দাবি, এর আগে ‘তৃণমূলকর্মী’ তারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে কোনও নড়াচড়া করা হয়নি। কিন্তু গাঙ্গুলিবাগানের ঘটনার পর আর তা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি।
এ দিন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট বৈঠকের পর গাঙ্গুলিবাগানের ঘটনা নিয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “শুধু বন্ধ কেন? কোনও দিন, কোনও অবস্থাতেই কাউকে আক্রমণ করা ঠিক নয়। এটা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শুধু সাংবাদিকদের জন্য নয়।” |