সচ্ছল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে সরকারি শেয়ার কেনার অনুমতি
শেষ মুহূর্তে ওএনজিসি-র ৫% শেয়ারই নিলাম করল কেন্দ্র
নিলামে ওএনজিসি-র ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা শেষ মুহূর্তে পূরণ করল কেন্দ্র। বৃহস্পতিবার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও নিলাম চালিয়ে গিয়ে অবস্থা সামাল দেওয়া হয় বলে শেয়ার বাজার সূত্রের ইঙ্গিত। ফলে এই খাতে হিসাব মতো ১২,০০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করাও সম্ভব হবে বলে সরকারি সূত্রের দাবি। পাশাপাশি, বেহাল কোষাগারের অবস্থা সামাল দিতে এ দিনই একটু ভিন্ন পথে হেঁটে প্রায় ২৪টি সচ্ছল রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সরকারি শেয়ারের একাংশ ওই সব সংস্থাকেই কিনে নেওয়ার অনুমতি দিল কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। চলতি অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণ খাতে ৪০ হাজার কোটি টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রার দিকে এগোতেই এই সিদ্ধান্ত।
এ দিন প্রথম থেকেই ওই একদিনের নিলামে ওএনজিসি শেয়ার কেনায় আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি সাধারণ লগ্নিকারীদের কাছ থেকে। অথচ রাজকোষ ঘাটতি পূরণে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রি করাকেই অন্যতম অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই কারণে দুপুর সাড়ে তিনটেয় আনুষ্ঠানিক ভাবে নিলাম বন্ধ হওয়ার পর আরও চার ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় বৈঠক চলে শীর্ষস্থানীয় সরকারি অফিসার, স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তা এবং শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি-র প্রতিনিধিদের সঙ্গে। সেই সময় পর্যন্ত তাই নিলামে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি বলেই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্রের খবরে ইঙ্গিত মেলে। কিন্তু বেশি রাতে বিএসই এবং এনএসই এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, ওএনজিসি-র শেয়ার নিলাম প্রায় সফল। ৪২.৭৭ কোটি টাকার শেয়ার কেনার প্রস্তাবে সাড়া মিলেছে ৪২.০৪ কোটি শেয়ারের জন্য। কেন্দ্রীয় বিলগ্নিকরণ দফতরের অতিরিক্ত সচিব সিদ্ধার্থ প্রধানও একই কথা জানান।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রের ইঙ্গিত, এলআইসি এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে দিয়ে শেয়ার কিনিয়েই কেন্দ্রীয় সরকারের এই নিলাম শেষ পর্যন্ত উতরে যায়। কারণ নিলাম সফল করতে সরকার ছিল মরিয়া। যেহেতু এর সাফল্যের উপরই নির্ভর করছে, ভবিষ্যতে এই পথে টাকা তুলে তারা বিলগ্নিকরণ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারবে কি না। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে আর্থিক ত্রাণের জন্য ওই শেয়ার কেনার অনুরোধ কেন্দ্র জানিয়েছিল কি না, সে প্রশ্নের উত্তরে অবশ্য প্রধান জানান, “আমরা কারও কাছে ত্রাণ চাইনি।”
অন্য দিকে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকে শেয়ার পুনঃক্রয়ের অনুমতির ফলে বাজারে শেয়ার বিক্রি না-করেই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলির কাছে শেয়ার বেচে সেই টাকা কোষাগারে তুলতে পারবে কেন্দ্র। তালিকায় থাকা সংস্থাগুলির মধ্যে রয়েছে: সেল, এনএমডিসি, এনটিপিসি, কোল ইন্ডিয়া, অয়েল ইন্ডিয়া, এমএমটিসি, নেভেলি লিগনাইট, এনএইচপিসি, গেইল। নগদের অভাব নেই, এমন সচ্ছল সংস্থাই এ পথে শেয়ার কেনার অনুমতি পাবে। শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাকেই এই অধিকার দেওয়া হয়নি, পাশাপাশি এলআইসি-সহ বিভিন্ন আর্থিক সংস্থাকেও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সরকারি শেয়ার কেনার অনুমতি দিয়েছে সংসদের অর্থনীতি বিষয়ক কমিটি।
প্রসঙ্গত, চলতি ২০১১-’১২ অর্থবর্ষের এপ্রিল থেকে জানুয়ারি, অর্থাৎ প্রথম দশ মাসেই রাজকোষ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪.৩৪ লক্ষ কোটি টাকা। যা গোটা অর্থবর্ষের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১০৫%। ঘাটতি জাতীয় আয়ের ৫.৬ শতাংশে বেঁধে রাখা যাবে বলে গত বাজেটে কেন্দ্র হিসাব করলেও, সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, তা ৬% ছাড়াবে। এই পরিস্থিতিতেই শেয়ার নিলাম করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র।
শেয়ার বাজার সূত্রের ইঙ্গিত, ওএনজিসি-র ৫ শতাংশ শেয়ার নিলাম করে ভাল রকম রাজস্ব ঘরে আনার ব্যাপারে কেন্দ্র যখন এক রকম নিশ্চিত ছিল, তখন, তাদের সেই বাড়া ভাতে ছাই দেয় নিলামে বেঁধে দেওয়া চড়া ন্যূনতম দাম। প্রতিটি শেয়ারের দাম ন্যূনতম ২৯০ টাকায় নির্ধারণ করা হয়। নিলামে সর্বোচ্চ দাম যারা দেবে, তাদেরই শেয়ার বিক্রি করার কথা। কিন্তু বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট ৪২.৭৭ কোটি শেয়ারের মধ্যে মাত্র ২৯.২২ কোটির জন্য প্রথমে আবেদনপত্র জমা পড়ে। বিনিয়োগকারীরা ২৯০ থেকে ২৯৩ টাকার মধ্যে দাম দিয়েছিলেন। এতে মোট ৮৫০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব হত। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার মাত্র দুই তৃতীয়াংশ পূরণ হয় আনুষ্ঠানিক নিলামে। এই পরিপ্রেক্ষিতে শেয়ার বাজার মহলে প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থা কেন বাড়তি দামে নিলামে শেয়ার কিনতে রাজি হল। সরকারের রাজকোষ ঘাটতি কমানোই এখানে প্রাধান্য পেয়েছে বলে বাজার সূত্রের ইঙ্গিত।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.