|
|
|
|
|
নয়া কর-বিধির মূল সূত্র
চালু করতে পারেন প্রণব
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
|
করের ক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে, বাজেট প্রস্তুতির শুরুতে অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষকর্তাদের কাছে প্রশ্ন রেখেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। চটজলদি উত্তর মিলেছিল, নতুন কর ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব না হলে বাজেটেই তার মূল দাওয়াইগুলি ঘোষণা করে দিন। তাতে সংস্কারের পথেও এক ধাপ কাজ এগিয়ে থাকবে।
শেষ পর্যন্ত প্রণববাবু সেই পথে হাঁটলে বাজেটে আমআদমির জন্য ভাল খবর যেমন থাকবে, তেমনই চিন্তার কারণও থাকবে বলে অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর। কারণ, তাতে এক দিকে করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ার ফলে সাশ্রয় বাড়বে ঠিকই, কিন্তু একই সঙ্গে বাড়তে পারে উৎপাদন শুল্ক। পাশাপাশি আরও বেশি পণ্য ও পরিষেবাকে করের আওতায় নিয়ে আসা হলে আয়করে সাশ্রয় হওয়া অর্থ ঘুরপথে খরচ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকছে। ‘প্রত্যক্ষ কর বিধি’ (ডিটিসি) এবং ‘পণ্য ও পরিষেবা কর’ (জিএসটি) চালু করে দেশের কর ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চাইছে মনমোহন সিংহের সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর আশা ছিল, আগামী অর্থবর্ষের প্রথম দিন, অর্থাৎ ১ এপ্রিল থেকেই নতুন দু’টি কর ব্যবস্থা চালু হয়ে যাবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমনটা ঘটার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। ডিটিসি বিলটি এখন অর্থ মন্ত্রকের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির হেফাজতে। আগামিকাল কমিটির চূড়ান্ত বৈঠক। আর জিএসটি নিয়ে এখনও রাজ্যগুলির সঙ্গে পুরোপুরি ঐকমত্য গড়ে ওঠেনি। রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের এমপাওয়ার্ড কমিটি পরশু ফের এ নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা খুব ভাল করেই জানেন, সংসদীয় রীতি না-মেনে বা রাজ্যগুলির সঙ্গে ঐকমত্য তৈরি না করে কোনও বিষয়েই এগোনোর পক্ষপাতী নন প্রণববাবু। তাই তাঁদের মত, ডিটিসি ও জিএসটি-র যে সব বিষয়গুলি নিয়ে কোনও পক্ষেরই আপত্তি নেই বা ঐকমত্য তৈরি হয়েছে, সেগুলি ১৬ মার্চের বাজেটে ঘোষণা করে দেওয়া হোক।
সেই অনুযায়ী কী কী ঘোষণা হতে পারে বাজেটে?
মন্ত্রক সূত্রের খবর, উৎপাদন শুল্কের হার বাড়িয়ে ১২%, এমনকী ১৪%-এও নিয়ে যাওয়া হতে পারে। ২০০৮ সালে আর্থিক মন্দার সময় বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সুরাহা দিতে উৎপাদন শুল্কের হার ১৪% থেকে কমিয়ে ৮%এ নিয়ে আসা হয়েছিল। এখন তা বাড়িয়ে ১০% করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আর্থিক উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান সি রঙ্গরাজনের যুক্তি, “রাজকোষ ঘাটতিতে রাশ টানতে কর বাবদ আয় বাড়াতে হবে। তাই উৎপাদন শুল্কের হার ফের আগের স্তরে নিয়ে যাওয়া হোক।” এতে আবার আপত্তি তুলেছে বণিকসভা সিআইআই। তাদের যুক্তি, এই মুহূর্তে উৎপাদন শুল্ক বাড়ালে আর্থিক বৃদ্ধি ফের হোঁচট খাবে। জিনিসের দাম বাড়ায় আমআদমির মাথায় বোঝা চাপবে। রঙ্গরাজনের পাল্টা যুক্তি, মূল্যবৃদ্ধির হার এখন নিম্নমুখী। এটাই শুল্ক বাড়ানোর আদর্শ সময়।
আগে যে ৩৭০টি পণ্যকে উৎপাদন শুল্কে ছাড় দেওয়া হত, তার মধ্যে ১৩০টিকে ইতিমধ্যেই করের আওতায় নিয়ে এসেছেন প্রণববাবু। এ বারের বাজেটে আরও ১০০টি পণ্যের উপর উৎপাদন শুল্ক বসানো হতে পারে। ২২টি বাদে বাকি সমস্ত পরিষেবার উপরে ১০ শতাংশ কর বসতে পারে। এখন মাত্র ১১৯টি পরিষেবার উপরে কর বসানো হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি এ বিষয়ে একমত যে, জিএসটি-র ক্ষেত্রে কোন কোন ক্ষেত্রে কর বসবে, তা ঠিক না করে কোন ক্ষেত্রে কর বসবে না, সেই তালিকা তৈরি করে এগোনো উচিত।
প্রত্যক্ষ কর বিধিতে আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা ২ লক্ষ টাকা করার প্রস্তাব রয়েছে। সংসদীয় স্থায়ী কমিটি ওই ঊর্ধ্বসীমা ৩ লক্ষ টাকা করার সুপারিশ করতে চলেছে। গত বছর ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বার্ষিক আয় করমুক্ত করে দিয়েছিলেন প্রণববাবু। এ বার বাজেটে তিনি ডিটিসি-র দিকে এগিয়ে এই ঊর্ধ্বসীমা যত বাড়াবেন, ততই মধ্যবিত্তের কর সাশ্রয় হবে। উচ্চবিত্তদেরও সুরাহা হতে পারে। এখন ৮ লক্ষ টাকার বেশি বার্ষিক আয়ে ৩০% কর দিতে হয়ে। যা করের সর্বোচ্চ হার। ডিটিসি-র সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ওই ঊর্ধ্বসীমা ১০ লক্ষ টাকা করা হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা আয়করের থেকেও ডিটিসি-র অন্য কিছু বিধানের দিকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। যেমন, ভারতে ব্যবসারত দু’টি বিদেশি সংস্থার মধ্যে চুক্তি হলে তার উপর কর বসানোর ধারা রয়েছে নতুন বিধিতে। বর্তমান ব্যবস্থায় সেই সুবিধা নেই। তাই হাচিসন ও ভোডাফোনের মধ্যে চুক্তির উপরে কর আরোপ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে হারতে হয়েছে কেন্দ্রকে। ১২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। তাই প্রত্যক্ষ কর বিধি চালু না হলেও এই ধরনের চুক্তির উপর কর বসানোর দাওয়াই থাকতে পারে বাজেটে। |
|
|
|
|
|