চাই ২০০ একর জমি রাজ্যে কারখানা গড়তে
চায় ফোকসভাগেন
রাজ্যে কার্যত থমকে যাওয়া শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার মাঝে হঠাৎ একটা শুভ সংবাদ!
পশ্চিমবঙ্গে মোটরগাড়ির কারখানা তৈরির ইচ্ছাপ্রকাশ করে চিঠি পাঠিয়েছে জার্মানির স্বনামধন্য সংস্থা ফোক্সভাগেন। গাড়ি এবং ট্রাক তৈরির জন্য কলকাতার কাছেপিঠে ২০০ একর জমি চেয়েছে তারা। টাটা মোটরস সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা গুটিয়ে বিদায় নেওয়ার পরে এই প্রথম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কোনও গাড়ি সংস্থা এ রাজ্যে লগ্নিতে আগ্রহ দেখাল।
কলকাতার কাছে কারখানা গড়তে চেয়ে ফোক্সভাগেনের তরফে প্রথম চিঠি এসেছিল গত ডিসেম্বরে। চিঠি পাঠিয়েছিলেন সংস্থার আন্তর্জাতিক শাখার প্রধান অধিকর্তা আন্দ্রেস বিয়েনরমাক্ল। তার পরে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর মাধ্যমে আরও বেশ কয়েকটি চিঠি রাজ্যকে পাঠিয়েছে তারা। ঠিক হয়েছে, খুব শীঘ্রই সংস্থার একটি প্রতিনিধি দল কলকাতায় এসে কারখানা তৈরির সম্ভাবনা সরেজমিন খতিয়ে দেখবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও কথা বলবে তারা।
ফোক্সভাগেনের যাত্রা শুরু ১৯৩৭ সালে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংস্থাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। যুদ্ধ থামার পরে সংস্থার কর্তৃত্ব চলে যায় ব্রিটিশ সামরিক সরকারের হাতে। কিন্তু ষাটের দশকে গোটা পৃথিবীতে গাড়ি উৎপাদনের রেকর্ড ভেঙে দিয়ে এগোতে শুরু করে ফোক্সভাগেন। নিরন্তর নানা পরীক্ষানিরীক্ষার মধ্যে দিয়ে আজও তারা পৃথিবীর অন্যতম প্রধান গাড়ি উৎপাদক সংস্থা।
ফোক্সভাগেনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই কথাবার্তা চলছে। রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে দিল্লিতে ওঁরা যোগাযোগ করেছিলেন। এখন কলকাতায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।” ফোক্সভাগেনের সদর দফতর জার্মানিতে। কিন্তু ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে তাদের ব্যবসা পরিচালিত হয় দুবাই থেকে। কলকাতায় প্রতিনিধি দল পাঠানোর জন্য জার্মানির সদর দফতর থেকে নির্দেশ এসেছে দুবাইয়ের আঞ্চলিক সদর দফতরে।
এর আগে পুণের চাকানে ৫৭৫ একর জমি নিয়ে একটি বড় কারখানা তৈরি করেছে ফোক্সভাগেন। লগ্নির পরিমাণ ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। ভারতীয় বাজারে কোনও জার্মান সংস্থার এটাই সব থেকে বড় বিনিয়োগ। চাকানের কারখানায় বছরে ১ লক্ষ ১০ হাজার গাড়ি তৈরি হয়। কারখানা তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল ২০০৭ সালে। ১৭ মাস পরে ২০০৯ সালের ৩১ মার্চ কারখানার উদ্বোধন করেন মহারাষ্ট্রের তৎকালীন রাজ্যপাল এস সি জামির। কারখানা তৈরির সময় কাজ পেয়েছিলেন প্রায় সাড়ে তিন হাজার মানুষ। আর এখন সেখানে কাজ করেন আড়াই হাজার প্রশিক্ষিত কর্মী।
ফোক্সভাগেন কর্তারা যখন ভারতে আরও কারখানা খোলার কথা ভাবছেন, তখন তাঁদের সঙ্গে রেলমন্ত্রীর যোগাযোগ হয়। দীনেশবাবু তাঁদের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সেই অনুরোধ মেনে রেলমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে বিয়েনরমাক্ল জানিয়েছেন, কলকাতা এবং চেন্নাই, এই দু’টি জায়গাকে নতুন কারখানার জন্য বেছে নিয়েছেন তাঁরা। ফোক্সভাগেনের প্রস্তাবগুলি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন দীনেশবাবু।
সংস্থা সূত্রে খবর, কলকাতা ও চেন্নাইকে বেছে নেওয়ার মূল কারণ হল, বন্দরের নৈকট্য। ভারতের বাজার ধরার পাশাপাশি মালয়েশিয়া, তাইল্যান্ড এবং ইন্দোনেশিয়াতেও গাড়ি রফতানি করা ফোক্সভাগেনের লক্ষ্য। বন্দর কাছে হলে রফতানি করা সুবিধাজনক। সেই সঙ্গে এই দুই জায়গাতেই সস্তায় শ্রমিক পাওয়ার সুবিধা রয়েছে।
সংস্থার তরফে জানানো হচ্ছে, গাড়ি উৎপাদনের পাশাপাশি একটি ‘ভেন্ডর পার্ক’ বা গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির সংশ্লিষ্ট কারখানাও তারা তৈরি করবে। রাজ্য সরকারের একটি প্রতিনিধি দলকে জার্মানি নিয়ে গিয়ে মূল কারখানা ঘুরিয়ে দেখাতেও আগ্রহী তারা।
কিন্তু এ রাজ্যে কারখানা গড়ার সমস্যা একটাই। জমি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম কাণ্ডের পরে একলপ্তে ২০০ একর জমির সংস্থান করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। বিশেষ করে মমতার সরকার যখন বেসরকারি সংস্থার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার সিদ্ধান্তে অনড়।
মমতা নিজে অবশ্য মনে করেন, জমি দেওয়া সম্ভব। আর শিল্প দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, ফোক্সভাগেন আগে সুনির্দিষ্ট প্রকল্প পাঠাক। তার পর জমি অধিগ্রহণে সরাসরি ভূমিকা না নিলেও তারা যাতে জমি কিনে নিতে পারে সে জন্য প্রশাসনিক সাহায্য নিশ্চয়ই দেওয়া হবে।
শিল্প দফতরের কর্তাদের একটা বড় অংশের মতে, এই মুহূর্তে ভারী শিল্প ছাড়া রাজ্যের আর্থিক উন্নতি অসম্ভব। কিন্তু টাটা-বিদায়ের পর থেকে বলতে গেলে আর এক চুলও এগোয়নি শিল্পায়ন প্রক্রিয়া। এই ‘বন্ধ্যা’ আবহে ফোক্সভাগেনের প্রস্তাব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তুরুপের তাস হয়ে ওঠে কিনা, সেটাই এখন দেখার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.