তৃণমূল কর্মী খুনে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ
তৃণমূল কর্মী খুনের ঘটনায় গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের অভিযোগ উঠল মঙ্গলকোটে। বুধবার রাত ৮টা নাগাদ মঙ্গলকোট গ্রামে ঔরঙ্গজেব শেখ (৪৫) নামে তৃণমূলের স্থানীয় এক কর্মীকে মারধর করে কিছু দুষ্কৃতী। বৃহস্পতিবার সকালে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এলাকায় দলের এক গোষ্ঠীর তোলাবাজির বিরুদ্ধে সরব হওয়াতেই এমন ঘটেছে বলে অভিযোগ নিহতের পরিবারের।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৮টা নাগাদ মঙ্গলকোট গ্রামে হাই মাদ্রাসার কাছে তৃণমূল অফিসের কাছে একটি চায়ের দোকানে বসেছিলেন ঔরঙ্গজেব। অভিযোগ, সেই সময়ে প্রায় ১৪-১৫ জন দুষ্কৃতী গিয়ে তাঁকে বের করে পাকা রাস্তার উপরে ফেলে বেধড়ক মারধর করে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে তাঁকে মঙ্গলকোট ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠায়। পরে সেখান থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
মঙ্গলকোট গ্রামে নিহতের শোকার্ত পরিবার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৮ ডিসেম্বর মঙ্গলকোটে তৃণমূলের স্থানীয় নেতা আন্নু কাজির বাড়িতে বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। তাতে তাঁর মাটির বাড়ি পুড়ে যায়। সেই ঘটনায় অভিযোগ উঠেছিল তৃণমূলের আজাদ মুন্সীর দিকে। মঙ্গলবার আজাদের অনুগামী নিরু শেখকে আন্নু কাজির লোকজন মঙ্গলকোটে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ। তার পরে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশের অনুমান, ওই মারধরের ঘটনায় জড়িত ছিল ঔরঙ্গজেব। সম্ভবত সে জন্যই আজাদ মুন্সীর অনুগামীরা তাঁকে মারধর করে।
নিহতের স্ত্রী মারিয়া বিবির অভিযোগ, “আজাদ মুন্সীর নেতৃত্বে এলাকার ইটভাটাগুলিতে তোলাবাজি করে তৃণমূলের কিছু লোক। আমার স্বামী তার প্রতিবাদ করেন। দলের নেতাদের সে কথা জানিয়েও দেন। সে কারণেই তাঁকে খুন করল ওই সব দুষ্কৃতীরা।” বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিক্যালে দাঁড়িয়ে নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানান, বছর চারেক আগেও সিপিএমের সমর্থক ছিলেন ঔরঙ্গজেব। তার পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দেন। আন্নু কাজির দাবি, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় আগেও তাঁর উপরে সিপিএমের লোকজন অত্যাচার করেছে। তৃণমূলে যোগ দিয়েও তা থেকে রেহাই পেলেন না ঔরঙ্গজেব।” বস্তুত, কয়েক মাস আগেই জেলার ইটভাটা মালিকেরা তৎকালীন পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ করেছিলেন, আজাদ ও তার দলবলের তোলাবাজির দৌরাত্মে মঙ্গলকোটে কাজ চালানো দায় হয়ে উঠেছে। তার জেরে ভিন্ রাজ্য থেকে আসা শ্রমিকেরাও কাজ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন।
বর্ধমান মেডিক্যালে নিহতের স্ত্রী।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আওগ্রাম, দেউলিয়া, আড়াল গ্রামের দিক থেকে ১০-১২ জন দুষ্কৃতী এসেছিল। চায়ের দোকান থেকে বের করে তারা জাহাঙ্গিরকে মারধর করে। তার পরে তারা নতুনহাট-গুসকরা রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। পুলিশ জানায়, ওরঙ্গজেবকে মারধরের ঘটনার সময়ে কচি মোল্লা ও আবদুল্লা মোল্লা নামে দু’জন গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করায় পুলিশ তাঁদের আটক করে। কচি মোল্লার কাছ থেকে একটি নাইন এমএম পিস্তল ও কয়েক রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। তাদের গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার কাটোয়া আদালতে তোলা হলে তাদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আন্নু কাজির অভিযোগ, “সিপিএমের ডাবলু আনসারির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আজাদ। এলাকায় তোলাবাজিও করছে। আমরা তার প্রতিবাদ করায় বারবার হামলা হচ্ছে।” আজাদ মুন্সী অবশ্য এ সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেন, “আমরাই প্রকৃত তৃণমূল কর্মী। ওরা নয়। কচি মোল্লা আমাদের লোকজনকে মারবে বলে অস্ত্র নিয়ে গ্রামে ঢুকছিল। পুলিশ তাকে ধরেছে।” ডাবলু আনসারির বক্তব্য, “আজাদের অত্যাচারে আমার মতো অনেক সিপিএম কর্মী গ্রামছাড়া। ওদের সঙ্গে আমার যোগাযোগের কোনও প্রশ্নই নেই।”
তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি স্বপন দেবনাথের দাবি, “সিপিএমের আশ্রয়ে থাকা দুষ্কৃতীরাই আমাদের ওই কর্মীকে খুন করেছে।” যদিও দলের মঙ্গলকোট ব্লক কোর কমিটির অন্যতম নেতা লিয়াকত আলি বলেন, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন হয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিক।” সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সম্পাদক দুর্যোধন সরের পাল্টা দাবি, “মঙ্গলকোটে আমাদের কর্মীরা ঘরছাড়া। তাই এমন অভিযোগ হাস্যকর। তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন হয়েছে।” জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। খুনের মামলা দায়ের হয়েছে। তদন্ত চলছে।”

নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.