তদন্তে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, আদৌ কিছু হয়েছে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। কিন্তু কেতুগ্রামে ট্রেন থেকে নামিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ঘিরে রাজনীতির চাপানউতোর আরও এক ধাপ চড়ল।
বুধবারই মহিলার সঙ্গে কথা বলে ‘অভয়’ দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য এবং কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রদেশ কংগ্রেসের প্রতিনিধিরা মহিলার বাড়িতে যান। তবে ওই পরিবারের লোক কংগ্রেস এবং তৃণমূলের সমর্থক বলে জানার পরেও প্রধান শাসকদলের তরফে কেউ তাঁদের বাড়ি যাননি। রাতে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায় বলেন, “মামলা হয়েছে। পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এর পরে আমরা গিয়ে বাড়তি কী করব?” |
এ দিন দুপুর ১টা নাগাদ প্রদেশ কংগ্রেসের যে প্রতিনিধি দল মহিলার বাড়িতে যায়, শ্রম প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ছাড়াও প্রদেশ কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণা দেবনাথ ও রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, নেত্রী মালা রায় প্রমুখ সেই দলে ছিলেন। মহিলার শাশুড়ি এবং ঘটনার দিন ট্রেনে মায়ের সঙ্গে থাকা এগারো বছরের মেয়ের সঙ্গেও তাঁরা কথা বলেন। গ্রামের মহিলাদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বলা হয়। পরে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী একে ‘সাজানো ঘটনা’ বলে মিথ্যাচার করছেন। আইন যেন দলতন্ত্রের কাছে মাথা নত না করে। আমরা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির কাছে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দেব।” মালা রায় বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করায় মহিলা হিসেবে আমরা অপমানিত বোধ করছি। গ্রামের মহিলারাও একই কথা জানিয়েছেন।”
পরে বর্ধমানে গিয়ে তাঁরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি জানান। তাঁদের দাবি, মহিলার সঙ্গে কথা বলে দুষ্কৃতীদের ‘স্কেচ’ আঁকানো হবে বলে পুলিশ সুপার তাঁদের আশ্বাস দিয়েছেন। পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। কংগ্রেসের আগেই, সকালে মহিলার বাড়িতে গিয়েছিলেন সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য অঞ্জু কর, মঙ্গলকোটের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সাধনা মল্লিক প্রমুখ। দোষীদের ধরার দাবিতে তাঁরাও এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাসের কাছে তাঁরা স্মারকলিপি দিয়েছেন।
কাটোয়া-আমোদপুর লাইনে ট্রেন থেকে নামিয়ে মহিলাকে ধর্ষণের এই অভিযোগ দায়ের হয়েছিল শনিবার রাতে। কিন্তু তার পরে তদন্ত কতটা এগোল তা নিয়ে পুলিশ মুখ খুলতে নারাজ। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ধর্ষণের অভিযোগে কেউ গ্রেফতার হয়নি। ফরেন্সিক পরীক্ষার ফলও জানা যায়নি। তবে গোড়া থেকে মহিলার পাশে থাকা বিকাশ মজুমদারের বদলে কেতুগ্রাম ২ ব্লক সভাপতি হিসেবে যাঁর নাম জানিয়েছে তৃণমূল, সেই দেবাশিস মণ্ডলের বিরুদ্ধে বন্ধে গণ্ডগোলের অভিযোগ রয়েছে। সে দিন কেতুগ্রামের চড়খি গ্রামে সিপিএম অফিস ভাঙচুরে তিনি জড়িত ছিলেন বলে বুধবার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তৃণমূলের বর্ধমান জেলা সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথ অবশ্য দাবি করেন, “কেতুগ্রামের ঘটনা নিয়ে অযথা রাজনীতি হচ্ছে। আজকের পরে বোঝাই যাচ্ছে সিপিএম এবং তাদের দোসরেরা সরকারের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার পাল্টা বলেন, “মানবিকতা দেখাতে গিয়ে এক তৃণমূল নেতা বলি হয়েছেন। গোটা ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাতেই ওঁরা এখন চক্রান্তের গল্প ফাঁদছেন।” |