ধর্ষণের পরে কিশোরীকে শ্বাসরোধ করে মেরে টুকরো টুকরো করে কেটে বস্তায় পুরে ফেলে গিয়েছিল সে। তদন্তে দোষ প্রমাণ হওয়ায় আউশগ্রামের সেই যুবককে ফাঁসির আদেশ দিল বর্ধমান আদালত।
একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা ও তার তদন্ত নিয়ে যখন রাজ্য সরগরম, বৃহস্পতিবার এই রায় দিয়ে বর্ধমান আদালতের চতুর্থ দায়রা ও অতিরিক্ত জেলা জজ সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ঘটনার ‘নৃশংসতা’র কথা মাথায় রেখেই ‘কঠোরতম’ সাজা দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের গুরুতর অপরাধ করলে আইন যে রেহাই দেবে না, এই সাজার মাধ্যমে কার্যত সেই ‘বার্তা’ই দেওয়া হল।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আউশগ্রামের দায়রাপুর গ্রামের শিবতলার বাসিন্দা মধ্য তিরিশের ওই যুবকের নাম বুধন বাগদি ওরফে বুলু। বাড়িতে স্ত্রী ও দুই নাবালক ছেলে-মেয়ে আছে। কিন্তু তার বাড়ি বা গ্রামের কেউ আদালতে আসেননি। মৃত্যুদণ্ড শুনেই ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করে ওঠে বুধন। হাউমাউ করে কাঁদতেও থাকে। পুলিশের সঙ্গে কাঁদতে কাঁদতেই সে হাজতে ফিরে যায়। |
মামলার তদন্তকারী অফিসার নির্মল সরকার জানান, চোদ্দো বছরের যে কিশোরীকে খুনের দায়ে বুধনের সাজা হয়েছে, তার নাম সীমা সেন। গত বছর ২৮ এপ্রিল তাকে শেষ বার বুধনের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এক মাত্র মেয়ের খোঁজ না পেয়ে আউশগ্রাম থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন তার বাবা বিমল সেন। তার পরেও কয়েক দিন তার খোঁজ মেলেনি। ইতিমধ্যে স্থানীয় মোষদিঘির পূর্ব পাড়ে সেচখাল লাগোয়া এলাকা থেকে পচা গন্ধ বেরোতে শুরু করেছিল। কয়েকটি কুকুরকে কব্জি থেকে কাটা হাত নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায়।
খবর পেয়ে পুলিশ যায় ৩ মে। পচা গন্ধের সূত্র ধরে দিঘির কাছেই একটি বস্তায় খণ্ড-খণ্ড করে কাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। দেহটি সীমার বলে শনাক্ত করেন বিমলবাবু। ইতিমধ্যেই বুধন গা ঢাকা দিয়েছিল। তাতেই পুলিশের সন্দেহ গিয়ে পড়ে তার উপরে। খানাতল্লাশিতে ৫ মে সে ধরা পড়ে যায়। পুলিশের জেরার মুখে কিশোরীকে ধর্ষণ করে খুনের কথা স্বীকারও করে সে।
পুলিশের কাছে বুধন জানায়, ২৮ এপ্রিল দুপুরেই গ্রামের একটি পরিত্যক্ত গোয়ালঘরে সীমাকে ধর্ষণ করে সে। তার পরে সীমারই ওড়না গলায় পেঁচিয়ে তাকে খুন করে। যাতে কেউ দেহের হদিস না পায়, তার জন্য কুড়ুল দিয়ে মৃতদেহ খণ্ড খণ্ড করে কেটেছিল বুধন। রাতের অন্ধকারে টুকরোগুলো বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। সে কারণে বস্তায় টুকরোগুলো পুরে রাতে সে খালের দিকে রওনাও দিয়েছিল।
কিন্তু রাতের রাস্তায় কুকুরের উপদ্রবের কথা সম্ভবত বুধনের মাথায় ছিল না। পুলিশকে সে জানিয়েছে, প্রথমে একটি কাটা হাত সেচখালে ফেলতে যেতেই একপাল কুকুর তাকে তাড়া করে। ভয় পেয়ে বস্তাবন্দি দেহ সেখানেই ফেলে রেখে সে পালিয়ে আসে। জেরায় সব কবুল করার পরে পুলিশ বুধনকে সেই গোয়ালঘরে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সীমার রক্তমাখা জামাকাপড় উদ্ধার হয়।
এর পরেই বুধনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৬ (ধর্ষণ), ৩০২ (খুন), ২০১ (দেহ লোপাট) ও ১৪২ (ষড়যন্ত্র) ধারায় মামলা দায়ের করেছিল পুলিশ। বুধবার আদালতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সরকার পক্ষের আইনজীবী মলয়কুমার ধর বলেন, “দু’পক্ষের সওয়াল শুনে, সাক্ষ্যপ্রমাণ বিচার করে আদালত যা ভাল বুঝেছে, সেই সাজাই দিয়েছে।” বুধনের আইনজীবী কৃত্তিকা প্রসাদ বলেন, “আমরা চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এটি যে একটি নৃশংস ঘটনা, তাতে সন্দেহ নেই।” |