ইস্কো সম্প্রসারণ প্রকল্প নিয়ে সংস্থার সঙ্গে গ্রামবাসীর বিরোধ মেটাতে দু’পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বুধবার মহাকরণে এই বৈঠকে দু’পক্ষের প্রতিনিধিরা ছাড়াও ছিলেন আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক। দু’পক্ষেরই দাবি, বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে।
ইস্কোর সম্প্রসারণ এলাকার মধ্যে পড়ে যাওয়া একটি ধর্মস্থানে পাঁচিল তোলায় আপত্তি ও আধুনিকীকরণ প্রকল্পে পুরুষোত্তমপুর গ্রামের জমিদাতাদের চাকরি দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা প্রায় সাত মিটার জমিতে নির্মাণে বাধা দিচ্ছিলেন। প্রায় চার বছর ধরে এ নিয়ে গ্রামবাসীদের সঙ্গে ইস্কোর বিরোধ চলছিল। ইস্কোর দাবি, গ্রামে পৃথক একটি ধমর্স্থান গড়ে দেওয়া হয়েছে। একটি পুকুরও খনন করে দেওয়া হয়েছে। তবু বাসিন্দারা বাধা দিচ্ছিলেন। পাঁচিল তুলতে না পারায় ইস্কো সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। গত রবিবার ইস্কো কর্তৃপক্ষ খানিকটা জোর করেই পাঁচিল তুলতে যান। গ্রামবাসীদের বিরোধে আবার সেই কাজ থমকে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ গেলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বাধে। ইট-পাটকেলে জখম হন কয়েক জন পুলিশকর্মী। পাল্টা লাঠি চালায় ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায় পুলিশ। প্রায় ১৫ জন গ্রামবাসী জখম হন। |
কয়েক জনকে আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পরে ইস্কো বিতর্কিত অংশে পাঁচিল তুলে দিলেও গ্রামবাসীরা পুলিশি ‘অত্যাচারের’ প্রতিবাদে রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের বাড়ির সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। সে দিনই মলয়বাবু গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করেন, বুধবার ইস্কো কর্তৃপক্ষকে নিয়ে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় সমস্যা মেটাতে বৈঠক করবেন।
বুধবার দুপুরে প্রায় ঘণ্টা দুই বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “ইস্কো একটি আধুনিক কারখানা গড়ছে। প্রশিক্ষিত কর্মীরাই সেখানে কাজ পাবেন। তাই গ্রামের বাসিন্দাদের প্রথমে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন ইস্কো কর্তৃপক্ষ। এর পরে প্রয়োজনমাফিক শূন্যপদগুলিতে নিয়োগ করবেন কর্তৃপক্ষ।” মলয়বাবু জানান, গ্রামবাসীদের উপরে দমন-পীড়নের জন্য রাজ্য সরকার ইস্কো কর্তৃপক্ষের সমালোচনা করেছে। ভবিষ্যতে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না হয়, সে দিকে নজর রাখার নির্দেশও দিয়েছেন শিল্পমন্ত্রী। মলয়বাবু বলেন, “পুরুষোত্তমপুরের বাসিন্দাদের সব রকম সহযোগিতা করবে রাজ্য সরকার।” ইস্কোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার বলেন, “বৈঠকে সংস্থার মুখ্য অধিকারিক নওয়ালকিশোর ঝা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে। রাজ্য সরকারের পরামর্শ মেনে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করব।” |
বৈঠকে গ্রামবাসীদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন ‘পুরুষোত্তমপুর গ্রামরক্ষা কমিটি’র সম্পাদক চন্দ্রশেখর রায়। তিনি বলেন, “আমরা বুঝেছি, রাজ্য সরকার আমাদের পাশে আছে। তবে আমাদের মূল দাবি, চাকরি দিতে হবে। ইস্কো প্রশিক্ষণ দিক বা না দিক, চাকরি না পেলে আমরা আবার আন্দোলনে নামব।” তিনি জানান, তাঁরা দু’এক দিনের মধ্যেই বাসিন্দাদের নিয়ে সভা ডাকবেন। সেই সভায় পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে।
|