মা হওয়ার ২৪ ঘন্টার মাথায় পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেন দিনহাটার এক বধূ মুর্শেদা খাতুন। বুধবার মাধ্যমিকের ইতিহাস পরীক্ষা হয়। মহকুমা হাসপাতাল থেকে সটান চৌধুরীহাট হাইস্কুলে হাজির হন মুর্শেদা। অন্য পরীক্ষার্থীরা তো বটেই চমকে যান পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা শিক্ষকেরাও। কোচবিহারের ডিআই (সেকেন্ডারি) মহাদেব শৈব্য বলেন, “মুর্শেদা চাইলে হাসপাতালে ওঁর পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেত। পর্ষদে বিষয়টি জানিয়েও রেখেছিলাম। কিন্তু মুর্শেদা স্বেচ্ছায় হাসপাতাল থেকে ছুটি নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে পরীক্ষায় বসেন। এটা নজিরবিহীন।” শুকারুরকুঠী হাইস্কুলের ছাত্রী মুর্শেদা গত মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ দিনহাটা মহকুমা হাসপাতালে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। কিছু পরেই মুর্শেদা পরিজনদের পরীক্ষা দেওয়ার ইচ্ছে জানান। প্রথমে তাঁকে হাসপাতালে পরীক্ষা দেওয়ার বন্দোবস্ত করার জন্য বাড়ির লোকেরা মনস্থির করেন। কিন্তু সদ্য মা হওয়া মুর্শেদা বেঁকে বসেন। সুস্থ আছেন জানিয়ে অন্যদের সঙ্গেই পরীক্ষা কেন্দ্রে থেকে পরীক্ষা দেওয়ার জেদ ধরেন। শেষে রাজি হন তাঁর বাড়ির লোকজন। এ দিন সকালে পরিবারের লোকেরা দিনহাটা হাসপাতাল থেকে তাঁর ছুটি করিয়ে মুর্শেদাকে নিয়ে সরাসরি পৌঁছে যান চৌধুরীহাট হাইস্কুলের পরীক্ষাকেন্দ্রে। মুর্শেদার স্বামী পেশায় ব্যবসায়ী মুকুল আলি বলেন, “ওঁর ইচ্ছার মত হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাই। পড়াশুনো নিয়ে বরাবরই ওঁর জেদ প্রবল। আমরা তাই আর বাধা দিইনি।” মুর্শেদার স্কুল, শুকারুরকুঠী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসন্ন কুমার বর্মন বলেন, “অসম্ভব মনের জোর না থাকলে এমনটা করা যায় না। ফল যাই হোক মুর্শেদার এই কাজ প্রশংসনীয়। মুর্শেদা এ দিন পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বার হয়েই ছেলের খোঁজ নেন প্রথমে। তার পরে বলেন, “আমি কী আর করেছি। পরীক্ষাকেন্দ্রে যেতে পারব বলেই হাসপাতালে যেতে চাইনি। পাশ করলে কেউ তো বলতে পারবে না যে হাসপাতালে বসে বাড়তি সুবিধা নিয়েছিলাম।” |