নমিতেশ ঘোষ • দার্জিলিং
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) গঠনের জন্য কেন্দ্রের ছাড়পত্র এখনও না-মেলায় হতাশ ও ক্ষুব্ধ গোর্খা জনমুক্তি মোর্চাকে ‘আর একটু ধৈর্য’ ধরার পরামর্শ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার দার্জিলিঙে পৌঁছে জিমখানা ক্লাবের হলঘরে এক সভায় তিনি এ কথা বলেন। ঘটনাচক্রে এ দিনই দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম জানিয়েছেন, সরকারি প্রক্রিয়া শেষ করে আগামী দু’চার দিনের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির কাছে জিটিএ বিলটি পাঠানো যাবে বলে আশা করা যায়।
মুখ্যমন্ত্রী এ দিন জিমখানা ক্লাবের হলঘরের সভায় বলেন, “গত ১০ ফেব্রুয়ারি আমি শিলিগুড়ি এসেছিলাম। তখন রোশন গিরিরা আমাকে সব বলেছেন। আমি সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ফোন করেছি। ক’দিন আগে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছেন, তাড়াতাড়ি রাষ্ট্রপতির সই হয়ে যাবে।” |
দার্জিলিঙের জিমখানা ক্লাবে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আছেন
বিমল গুরুঙ্গ ও রোশন গিরি। বুধবার ছবিটি তুলেছেন বিশ্বরূপ বসাক। |
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী বারেবারে পাহাড়ের নানাবিধ সমস্যা সমাধানে টালবাহানার যে অভিযোগ তুলেছেন, তা নিয়েও পাহাড়বাসীকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কালিম্পং ও দার্জিলিঙে পানীয় জল প্রকল্প বাবদ প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ও একাধিক আইটিআই স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
প্রথমে পশ্চিমবঙ্গে, তার পরে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে জিটিএ বিল নিয়ে কেন্দ্রের ঢিলেমির অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। রাজ্য সরকারকে এ বিষয়ে সহযোগিতার বার্তা দিলেও এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সেই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন চিদম্বরম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এ বিষয়ে কতখানি তৎপর, তা বোঝাতে চিদম্বরম বলেন, “আজ সকালেই স্বরাষ্ট্রসচিব আমাকে জানিয়েছেন যে, জিটিএ বিল নিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রকের মতামত একটি ফাইলে একত্রিত করা হচ্ছে। আমার সম্মতির জন্য তিনি আমাকে ফাইলটি পাঠাবেন। তার পরে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে।” তাঁর যুক্তি, “কোথাও কোনও দেরি হয়নি। এটা একটা সরকারি প্রক্রিয়া। সকলেই চূড়ান্ত ফলটা দেখতে ইচ্ছুক। কিন্তু তার জন্য আমাকে নিয়মমাফিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতেই হবে।” সোমবার মোর্চা-নেতৃত্বের কাছেও এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। |
দার্জিলিঙের পথে মিরিকে এক শিশুকে খাদা পরাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি। |
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিধানসভায় জিটিএ বিলটি পাশ হওয়ার পরে তা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে আসে। বিলে জিটিএ-কে যে সব ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে পরে কোনও সমস্যা দেখা দিতে পারে কি না, তা খতিয়ে দেখে মতামত জানানোর জন্য বিভিন্ন মন্ত্রকের কাছে বিলটি পাঠানো হয়। জিটিএ বিলের বিষয়গুলির সঙ্গে যে ছ’টি মন্ত্রক সরাসরি জড়িত, তাদের মতামত হাতে চলে এসেছে। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের কাছে যে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল, তা-ও এসে গিয়েছে। কাজেই এর পরে আর দেরি হওয়ার খুব একটা কারণ নেই বলেই
মনে করছেন মন্ত্রকের আমলারা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সুবাস ঘিসিংয়ের পার্বত্য পরিষদের আওতায় যে এলাকা ছিল, জিটিএ বিলে নতুন আঞ্চলিক প্রশাসনের জন্য সেই একই এলাকা নির্দিষ্ট করা হয়েছে। এর পরে অতিরিক্ত এলাকা যোগ হবে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য রাজ্য সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে।
দার্জিলিং পাহাড় যে এখন জিটিএ গঠনের দিকে তাকিয়ে, তা এ দিন সেখানে পৌঁছনোর পর থেকে বারেবারেই টের পেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্ল্যাকার্ড-ফেস্টুনে সে কথা লিখে মুখ্যমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন পাহাড়বাসী। মোর্চার প্রচার সচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রীর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতিতে পাহাড় অনেক স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজও প্রতিশ্রুতি মতো পাহাড়ে নতুন কলেজ তৈরির কাজ এক পা এগোয়নি। জাতীয় সড়কের কাজ কবে শেষ হবে, কেউ জানে না। এমন অনেক কাজই হচ্ছে না। সে জন্য জিটিএ গঠন জরুরি। মুখ্যমন্ত্রী এ বার স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন। আশা করি, আর বেশি দেরি হবে না।” |