খাগড়া সোনাপট্টি এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী জয়দেব সিংহের কাছ থেকে গত সোমবার সন্ধ্যায় ছিনতাইয়ের তিন দিন পরও ঘটনার কিনারা হয়নি। তবে ওই ঘটনায় জড়িত রয়েছে সন্দেহে ৬ জনকে পুলিশ আটক করেছে।
সোমবারের ঘটনার কিনারা না হলেও গত ১৩ ফেব্রয়ারি বহরমপুর শহরের সেন্ট্রাল কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক লাগোয়া এলাকা থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীর ছিনতাই এর ঘটনার কিনারা করেছে পুলিশ। সোদপুরের ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে রুপোর আংটি ও নগদে মিলিয়ে লক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করেছিল দু,্কৃতীরা। ওই ঘটনায় যুক্ত থাকার সন্দেহে পুলিশ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের বুধবার আদালতে হাজির করানো হলে আদালত তাদের ৩ দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে রুপোর ২০০টি আংটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ১৯৯৬ সালের ১০ নভেম্বর কালীপুজোর রাত ৮টা নাগাদ খাগড়া সোনাপট্টি এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ী কিঙ্কর দাস, তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে-সহ ৫ জন খুন হয়। তার দু’ দিন পর পুলিশের তৎকালীন আই জি (দক্ষিণবঙ্গ) বর্তমানে সমবায় মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি বহরমপুর থানায় বসে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “সোনাপট্টি এলাকায় দৈনিক কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়। কাছেই বাংলাদেশ। ফলে ওই লেনদেনের বেশির ভাগটাই সীমান্তের চোরা কারবারের সঙ্গে যুক্ত। ওই খুনের ঘটনার পিছনে সেই সব কারণ রয়েছে। কয়েক দিনে মধ্যে ওই ৫ খুনের কিনারা হয়ে যাবে।” ওই এলাকার স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের দাবি, কয়েক দিন কেন, ১৬ বছর পরও ৫ খুনের কিনারা করতে পারেনি পুলিশ।
মুর্শিদাবাদ চেম্বার অব কমার্স-এর যুগ্ম সম্পাদক প্রদ্যোত দে বলেন, “গত দেড় বছরে বহরমপুর শহরে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ছিনতাই ও ডাকাতি মিলিয়ে নথিবদ্ধ ঘটনার সংখ্যা ১২টি। অথচ একটি বাদ দিয়ে বাকি ১১টি ঘটনার আজও কোনও কিনারা হয়নি। ফলে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা সেদিন পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করেছে।”
স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন মুর্শিদাবাদ জেলা বুলিয়ান মার্চেন্ট অ্যাসেসিয়েশান-এর সম্পাদক অচিন্ত্য বসাক বলেন, “অধিকাংশ ঘটনা থানায় নথিবদ্ধ না করানো হয়নি। ওই সব ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ সোমবার রাতের ভাঙচুরের ঘটনা।” তার পরও কেন প্রদ্যুত বলছেন, “বর্তমান পুলিশি ভূমিকায় আমরা আশাবাদী।”
সোমবার সন্ধ্যার ছিনতাই-এর ঘটনার পর মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়া ফাঁড়িতে ‘মুর্শিদাবাদ জেলা চেম্বার অব কমাসর্’, ‘জেলা বুলিয়ান মার্চেন্ট অ্যাসেসিয়েশান’ এবং স্বর্ণ শিল্পীদের সংগঠনের কর্তাদের নিয়ে পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর জরুরি বৈঠক করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনাপ্পা ই এবং আইসি মেহাই মেহনুল হক।
বৈঠকে ব্যবসায়ীদের তরফে পুলিশ সুপারের উদ্দেশ্যে বলা হয়, “প্রায় সোয়া লক্ষ মানুষের জন্য পুলিশ ফাঁড়িতে রয়েছে মাত্র ১৬ জন কনস্টেবল, এক জন এস আই এবং ২টি মোটরবাইক। তার উপরে গত ৬ মাসের মধ্যে ওই ফাঁড়ির মোট ৬ জন অফিসার ইনচার্জ বদলি হয়েছেন। ফলে তাঁরা অপরাধ দমন করবেন কখন?” সব শুনে পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “খাগড়া ফাঁড়িতে আপাতত আরও ৪ জন কনস্টেবল দেওয়া হয়েছে। আরও ২টি মোটরবাইকও দেওয়া হয়েছে। কোটি কোটি টাকা লেনদেন হয় যে সোনাপট্টি এলাকায় সেখানে ব্যবসায়ীদের নিজেদের উদ্যোগে বড় দোকানে সিসি টিভি লাগাতে হবে।” |