মঙ্গলবার রাতে তাঁর বয়ান ছিল, “কে বলেছে যাইনি! ভিড়ের মধ্যে আমাকে কেউ দেখতে পাননি হয়তো।” রাতে অবশ্য তিনি কবুল করে নিয়েছেন, “কী করে যাব বলুন! খোঁজ পেয়েছিলাম, সিপিএম স্কুল গেটে পিকেটিং করছে। ও’টা সিপিএমের এলাকা। স্কুলে জোর করে ঢুকতে গেলে মারধর করত। তাই আর যেচে হেনস্থা হতে চাইনি।”
তিনি তৃণমূলের নদিয়ার জেলা শিক্ষা সেলের সভাপতি, প্রশান্ত দে। পেশায় ধুবুলিয়ার সোনডাঙা হাইস্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক। তিনি না গেলেও স্কুলে গিয়েছিলেন প্রধান শিক্ষক সুজিত নন্দী। যিনি নিজেই বলছেন, “সাত সকালেই স্কুলে পৌঁছে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি, আমি আর আমাদের চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মী ছাড়া কেউ-ই আসেননি। প্রাশান্তবাবুও আসেননি। সিপিএমের পিকেটিং-এর জন্য স্কুল অবশ্য ঢুকতে পারিনি। কী করব, বেলা বারোটা অবধি ঠায় দাঁড়িয়ে ফিরে এসেছিলাম।”
দলের শিক্ষা সেলের সভাপতিই, সিটুর বনধ্ কর্মস্থলে হাজিরা দেওয়ার সরকার ও দলীয় নির্দেশ এড়িয়ে যাওয়ায় জেলা তৃণমূল যে স্পষ্টই অস্বস্তিতে নেতাদের কথাতেই তা স্পষ্ট। দলের শিক্ষা সেলের জেলার সাধারণ সম্পাদক বিমলেন্দু সিংহ রায় বলেন, “শুনেছি প্রশান্তবাবু মঙ্গলবার স্কুলে যাননি। দলের নির্দেশ মেনে গেলে অবশ্য ভাল করতেন।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা নবদ্বীপের বিধায়ক পুণ্ডরীকাক্ষ সাহা মনে করেন নেত্রীর নির্দেশ সকলের কাছেই সমান হওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, “না গিয়ে থাকলে অন্যায় করেছেন। দলীয় বাবে তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হবে কেন তিনি স্কুলে গরহাজির ছিলেন।’’
সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন এবিটিএর রাজ্য কমিটির সদস্য বীরেন মণ্ডল অবশ্য প্রশান্তবাবুর এই ‘দল বিরোধী’ কাজে ‘খুশি’। তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী নানাকরম হুমকি দিয়েছিলেন। আর সেই হুমকি অগ্রাহ্য করে বহু তৃণমূলের নেতা ও কর্মী আমাদের বন্ধকে সমর্থন করেছেন। তৃণমূলের শিক্ষা সেলের সভাপতিও স্কুলে না গিয়ে সেটাই প্রমাণ করলেন।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য এবং পলাশিপাড়ার বিধায়ক এসএম সাদি বলেন, “সর্বভারতীয় বনধ্। দেশের বহু মানুষ যে ওই বনধ্রে সমর্থক তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। হয়তো সেই কারনেই প্রশান্তবাবুও যাননি।’’
দলের নিচুতলার কর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। তাঁদের অনেকেরই প্রশ্ন, তিনি নিজেই এ ব্যাপারে তিন দিন ধরে প্রচার চালিয়েও গরহাজির থাকলেন। দলের নেতারা যদি এই মনোভাব দেখান তাহলে কর্মীরা কাকে দেখে প্রশান্তবাবুর বাড়ি কৃষ্ণনগরে। স্কুল থেকে যার দূরত্ব প্রায় ১৬ কিমি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই দিন রাস্তায় বাস চলেনি ঠিকই। তবে বহু মানুষই কর্মস্থলে গিয়েছেন বাইক বা গাড়িতে। তৃণমূলের জেলা নেতাদের দাবি প্রশান্তবাবুরও সে ভাবেই ওই দিন অন্তত স্কুলে যাওয়া উচিত ছিল। |