সব ভাল যার শেষ ভাল। বিজয় হাজারে ট্রফি অভিযানের প্রাথমিক পর্বে বাংলার শুরু ও শেষের মধ্যে কোনও তফাত নেই। জয় দিয়ে শুরু, জয় দিয়ে শেষ। পূর্বাঞ্চলের দরবারে প্রতিদ্বন্দ্বীদের উড়িয়ে চারে চার করে ফেলা। শুরু ওড়িশা-কে সাত উইকেটে হারিয়ে। আর বুধবার বিকেলে মধুরেণ সমাপয়েৎ অসমের বিরুদ্ধে ৬৯ রানে জিতে। গ্রুপ শীর্ষে থেকে। বাকি নকআউটের তিন ম্যাচ। সামনে এখন নকআউটের তিনটে বাধা, যেগুলো টপকাতে পারলেই এত দিনের অধরা ট্রফি তুলে নেওয়ার হাতছানি। লক্ষ্মী-ঋদ্ধি-সামিরা যে ফর্মে আছেন, প্রথম বার বিজয় হাজারে ট্রফি ঘরে আনার স্বপ্নটা ধরাছোঁয়ার মধ্যে।
কোনও দিন ঝাড়খণ্ড, তো কোনও দিন অসম। প্রতিপক্ষ যতই হেভিওয়েট হোক, ফলাফল কিন্তু ঘুরেফিরে এক। রান কম উঠলে বল হাতে ঝলসাচ্ছেন লক্ষ্মী-সঞ্জীব, নইলে দিন্দা-সামি। বিশাল রানের বোঝা ঘাড়ে ব্যাট করতে নেমেও লক্ষ্মী-ঋদ্ধি-অনুষ্টুপদের বাংলা এখন ‘বিন্দাস’। ঋদ্ধির ব্যাট থেকে আসছে একের পর এক দুর্দান্ত ইনিংস। বুধবার ঋদ্ধির অবদান? ৬০ বলে ঝরঝরে ৭২।
তবু বুধবারের ইডেনে বাংলা আগে ব্যাট করে মেরেকেটে ২৩৬। উইকেট স্লো থাকায় বল থমকে থমকে ব্যাটে আসছিল। স্ট্রোক খেলতে অসুবিধে হচ্ছিল ব্যাটসম্যানদের। তার উপর অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় আগেভাগেই ম্যানেজমেন্টকে জানিয়ে দেন, তাঁর শরীর খারাপ। এই ম্যাচ খেলা সম্ভব হবে না। অতএব বাংলার নেতৃত্ব সামলালেন ঋদ্ধি এবং গোড়াতেই গণ্ডগোল। তিনে নেমে লক্ষ্মীর ব্যাট চলল না। ফর্মে থাকা অনুষ্টুপও সাত-তাড়াতাড়ি আউট। টিমকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পড়ল সেই ঋদ্ধির উপর। তাঁর সঙ্গে উপযুক্ত সহায়তা শ্রীবৎস গোস্বামীর (৬৯)। বহু দিন পর টিমের কাজে লাগা ইনিংস এল তাঁর ব্যাট থেকে। কিন্তু তাতেও আড়াইশো টপকানো গেল না। ম্যাচ শেষে ডব্লিউ ভি রামনেরও আক্ষেপ, “আমরা অন্তত ৩০-৪০ রান কম তুলেছি।” বাংলার কোচের ইডেনে এটাই শেষ ম্যাচ হয়ে গেল বলে মনে করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, মরসুম শেষে বাংলার দায়িত্ব ছেড়ে রামন যেতে পারেন বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে।
৬৯ রানের বড়সড় ব্যবধানে জয়। দিনের শেষে যেটা অন্ধকারে, পরপর দুটো ম্যাচে পঞ্চাশ ওভার শেষ হওয়ার আগেই বাংলার ইনিংসে দাঁড়ি। সপ্তাহখানেকের মধ্যে কোয়ার্টার ফাইনালে নামার আগে যা সৌরভের কপালে ভাঁজ ফেলতেই পারে। তবে ব্যাটসম্যানরা টেনেটুনে পাশ মার্ক তুলতে পারলে বুধবারের ইডেনে একশোয় নব্বই হেসেখেলে পাবেন বোলাররা। ‘উইকেট টু উইকেট’ বল করে দু’দিক থেকে রানের গতি আটকানোর কাজটা করলেন সামি-দিন্দা। বাঁ-হাতি স্পিনার ইরেশ সাক্সেনাও উইকেট তুললেন নিয়ম করে।
পরের বছর সৌরভ আর বিজয় হাজারে ট্রফি খেলবেন কি না সময় বলবে। ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক হিসেবে বহু মুকুট মাথায়, কিন্তু বাংলার অধিনায়ক হিসেবে সর্বভারতীয় কোনও ট্রফি নেই তাঁর। দিল্লির মসনদে কি নতুন পালক যোগ হবে সৌরভের মুকুটে? অপেক্ষা তিন ম্যাচের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলা ২৩৬ (ঋদ্ধিমান ৭২, শ্রীবৎস ৬৯, দীপক গোহেন ৩-৬২), অসম ১৬৭ (পল্লবকুমার দাস ৩৮, ইরেশ ২-২৪, সঞ্জীব ২-২৬, সামি ২-৩৪)। |