বুধবার ভোরের আলো তখনও ভাল করে ফোটেনি। বাগানে কাজে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন চা বাগানের শ্রমিকেরা। মেটেলি ব্লকের ইনডং চা বাগানে ওই শ্রমিকরা দেখলেন মূর্তি নদী পার হয়ে বাগানের দিকে এগিয়ে আসছে একটি বুনো হাতির দল। শ্রমিক বাবলু সোরেন, প্রকাশ লামারা দেখেন নদী পার হয়ে ধীরে ধীরে দলটি বাগানের দিকে এগিয়ে আসছে। কিন্তু দলটিতে শাবক থাকায় দলটির গতি ছিল খুবই মন্থর। আলো ফোটার ঠিক আগেই দলটি বাগানের ভিতরে হনহনিয়ে ঢুকে পড়ে। বাগানের সি-৩ সেকশনে দাঁড়িয়ে পড়ে গোটা দলটি। এর পরে বেলা যত বেড়েছে হাতি দেখতে উপচে পড়ে শ্রমিক এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের ভিড়। হাতিদের লক্ষ্য করে ঢিল ছোঁড়াও হয়। চারদিকে মানুষ, ঘনঘন ঢিল সব মিলিয়ে বাগানের মধ্যে দিশেহারা হয়ে পড়ে ১০টি হাতির ওই দলটি। |
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে হাতিদের জঙ্গলে ফেরাতে রীতিমত হিমশিম খেতে হয় বন দফতরের খুনিয়া রেঞ্জের বন কর্মীদের। সন্ধ্যা অবধি হাতিরা অবশ্য জঙ্গলে ফেরৎ পাঠানো যায়নি। কখনও শুঁড় উঁচিয়ে, কখনও কিছুটা তেড়ে এসে স্থানীয় বাসিন্দাদের পাল্টা ভয় দেখিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে দলের বয়স্ক সদস্যরা। সারাক্ষণ ভয়ে কার্যত গুটিয়ে থাকে দলের একমাত্র শাবকটি। জীবনে প্রথমবার মানুষ দেখার এই অভিজ্ঞতা যে সে কোনও দিন ভুলবে তা সেটির হাবেভাবে পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছিল। দলটি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল তার খুব কাছেই ইনডং চা বাগানের ম্যানেজার রজত দেবের বাংলো। তিনিও সকাল থেকেই এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। রজতবাবুর কথায়, “হাতির সমস্যা বাগানের নিত্যদিনের। এদিন ১০ টি হাতি দিনভর যে ভাবে বাগানে দাঁড়িয়ে থাকল তা ভাবা যায় না। বাগানের ওই এলাকার কাজও বন্ধ করে দিতে হয়। হাতির পালটি চা গাছেরও ক্ষতি করেছে।” কিন্তু দিনের শেষে স্থানীয় বাসিন্দাদের ঢিল ছুঁড়ে দলটিকে উত্যক্ত করার ঘটনায় হতাশ জলপাইগুড়ি বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও কল্যাণ দাস। তিনি বলেন, “বাগানে সচেতনতা শিবির করার পরেও ঢিল ছোঁড়ার ঘটনা বন্ধ করা যাচ্ছে না। হাতির দলটি সন্ধ্যা না নামলে বাগান থেকে সরবে না বলেই মনে হয়েছে। দলে শাবক থাকায় সমস্যা আরও বাড়ে।” |