অসমের দুই প্রান্তে দুটি চিতাবাঘকে হত্যা করে মাংস কেটে নিলেন গ্রামবাসীরা। অন্য দিকে, রয়্যাল বেঙ্গলের আক্রমণে কাজিরাঙায় এক গ্রামবাসী জখম হওয়ার প্রতিবাদে রেঞ্জার ও বনরক্ষীদের উপরে চড়াও হল উত্তেজিত জনতা। দায়ের কোপে এক বনরক্ষীর দু’টি আঙুল কাটা গেল।
আজ সকালে কামরূপ জেলার রঙিয়ায় জোড়া চিতাবাঘ গ্রামবাসীদের আক্রমণ করে। প্রথমে মধুকুচি গ্রামে ভগবান ডেকা নামে এক ব্যক্তির বাড়ির লাগোয়া জমিতে চিতাবাঘ দু’টিকে দেখা যায়। ভগবানবাবু তাদের তাড়াতে গিয়ে গুরুতর ভাবে জখম হন। ততক্ষণে, আশপাশের বাড়ি থেকে গ্রামবাসীরা যে যা হাতের কাছে পেয়েছেন, নিয়ে বাঘ তাড়াতে চলে আসেন। তাঁদের তাড়ায় একটি চিতাবাঘ জঙ্গলের দিকে পালালেও অন্য চিতাবাঘটি ভয় পেয়ে গ্রামের দিকে চলে আসে। তার পাল্টা আক্রমণে জখম হন গ্রামবাসী প্রশান্ত ও পরমা রাজবংশী, মহিধর ডেকা, ধর্মেশ্বর বড়ো, মুকুল ডেকা, নিরঞ্জন ডেকা ও মোহিরাম ডেকা। জখমদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একজনের আঘাত গুরুতর। |
পাল্টা হিংসা। উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
এরপর চিতাবাঘের উপরে ইট ও পাথর বৃষ্টি শুরু হয়। আঘাতে জর্জরিত প্রাণীটির পালানোর পথ রাখা হয়নি। গ্রামবাসীদের একাংশের অভিযোগ, উত্তেজিত জনতা চিতাবাঘকে ঘিরে ফেলেছে জানিয়ে বন দফতরকে খবর দেওয়া হলেও অন্তত দুই ঘণ্টা পরে, মাত্র দুইজন বন রক্ষী ঘটনাস্থলে আসেন। ততক্ষণে, চিতাবাঘটি মারা গিয়েছে। দুইজন বনকর্মীর পক্ষে এতজন গ্রামবাসীকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। তাঁদের সামনেই, চিতাবাঘটির চোখ উপড়ে নেওয়া হয়। কেটে ফেলা হয় পা, গলা, অন্যান্য অংশ। পরে, পুলিশ ও বনবিভাগ, মৃত পুরুষ চিতাবাঘের দেহটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তে পাঠায়। ঘটনাটি নিয়ে, গ্রামবাসীদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছে বন বিভাগ।
অন্য ঘটনাটি ঘটে ডিব্রুগড়ে। আজ ভোরে ঘাগ্রাজান চা বাগানে ঢুকে পড়ে একটি চিতাবাঘ। চা মজুরদের তাড়ায় সে একটি গাছের উপরে আশ্রয় নেয়। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাটি জানতে পেরে বনবিভাগ ও পুলিশকর্মীরা বাগানে এসেছিলেন। কিন্তু, বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পরেও চিতাবাঘ গাছ থেকে না নামায়, তাঁরা ফিরে যান। শ্রমিকরাও আশ্বাস দেন, চিতাবাঘ প্রায়ই বাগানে আসে। নিজেই চলেও যায়। তবে, আজ জঙ্গলে ফিরে যাওয়ার সুযোগ পায়নি সে। বাগানের কিছু সাঁওতাল শ্রমিক তির মেরে চিতাবাঘটিকে হত্যা করেন। এরপর, দ্রুত তার মাংস কেটে মজুরদের মধ্যে বিলি করে দেওয়া হয়। বনবিভাগ খবর পেয়ে আসার পরে, চিতাবাঘের হাড়গোড় ও দেহাংশের কিছুটা উদ্ধার করে। এ ক্ষেত্রেও বাগান কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া, ডিব্রুগড়েরই ডিকম চা বাগানে বেশ কিছুদিন ত্রাস সৃষ্টি করা একটি স্ত্রী চিতাবাঘকে কাল রাতে বনকর্মীরা খাঁচাবন্দি করেন।
পৃথক ঘটনায় রয়্যাল বেঙ্গলের হানায় কাল বিকেলে গোলাঘাটে এক কিশোর জখম হয় বাঘের হানা থেকে বনকর্মীরা গ্রামবাসীদের সুরক্ষা দিতে না পারায়, কাজিরাঙায়, বন আধিকারিক ও কর্মীদের উপরে চড়াও হন গ্রামবাসীরা। কাজিরাঙার লাগোয়া দেরগোয়া পাম গ্রামে গরু চরানোর সময়, শাবক-সহ বাঘিনির কাছাকাছি চলে আসায়, অর্জুন তাঁতি নামে এক কিশোরকে বাঘিনি আক্রমণ করে। গোরুর পালে থাকা একটি মোষের পাল্টা আক্রমণে বাঘটি পিছু হঠতে বাধ্য হয়। মোষের সাহসেই অর্জুন প্রাণে বাঁচে। সে এখন যোরহাট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি।
ঘটনার পরে, কোহরার রেঞ্জার আতিকুর রহমান অন্য বনকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলে উত্তেজিত গ্রামবাসীরা তাঁদের আক্রমণ করেন। আতিকুর জানান, এক গ্রামবাসী ছুরি নিয়ে তাঁকে মারতে গেলে, ভাগীরথী মহন্ত নামে এক বনকর্মী হাত দিয়ে তা ঠেকাতে যান। ছুরির ঘায়ে তাঁর দুটি আঙুল কাটা পড়ে। গ্রামবাসীদের আক্রমণে তিন বনরক্ষী জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি। ঘটনাটি নিয়ে বোকাখাট পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। অন্যদিকে, আজ সকালে, কার্বি আংলং-এর দলমারা রেঞ্জে, বন্য হাতির আক্রমণে বুধিন ভূমিজ নামে পূর্তদফতরের এক ঠিকা শ্রমিক নিহত হন। জখম হয়েছেন আরও একজন।
পুলিশকর্তার গাড়িতে গুলি। ফের চোরাগোপ্তা হামলা চালাল গারো জঙ্গিরা। এ বার এসডিপিওর গাড়িতে। কাল বিকালে পশ্চিম গারো পাহাড়ের রামদাপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ জানায়, সাচেং আর মারাক নামে ওই এসডিপিও তুরা থেকে বারেংগাপাড়া যাচ্ছিলেন। বারেংগাপাড়া থেকে ১০ কিলোমিটার আগে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা জনা দশেক জঙ্গি মারাকের গাড়ি তাগ করে ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি চালাতে থাকে। পুলিশও পাল্টা জবাব দেয়। মারাকের গাড়িতে বেশ কিছু গুলি লাগলেও তিনি বা অন্য পুলিশকর্মীরা জখম হননি। পুলিশের ধারণা, বাইচুং মোমিনের নেতৃত্বে জিএনএলএ জঙ্গিরাই এই আক্রমণ চালিয়েছে।
পৃথক ঘটনায়, অসমের চিরাংয়ে বনরক্ষী ও কাঠের চোরা কারবারিদের মধ্যে কাল সন্ধ্যায় আবার গুলির লড়াই বাধে। তবে কেউ জখম হয়নি। |