সম্পাদকীয় ২...
অ-জ্ঞান
কেন্দ্রীয় সরকারের কৌঁসুলি পি পি মলহোত্র মহাশয় একটি তথ্য দিয়াছেন। শারীরবৃত্তীয় তথ্য। তিনি জানাইয়াছেন, এইচ আই ভি ভাইরাস হইতেই সমকামিতার উৎপত্তি। তথ্যটি নূতন। অভিনবও বটে। মানুষের যৌন আচরণ কী রূপে একটি বিশেষ ভাইরাসের প্রকোপে রাতারাতি বদলাইয়া যায়, তাহা জানিবার জন্য অতঃপর দুনিয়ার চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ কৌঁসুলিপ্রবরের দ্বারস্থ হইতেই পারেন। তিনি আইনজীবী, সুতরাং প্রমাণ বিনা কিছুই বলা তাঁহার সাজে না। তদুপরি, তিনি শীর্ষ আদালতে একটি মামলায় সওয়াল করিতেছিলেন। ২০০৯-এ দিল্লি হাইকোর্ট প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীর ভিতর পারস্পরিক সম্মতি-সহ যৌন সম্পর্ক ‘অপরাধ’ নহে বলিয়া ঘোষণা করিয়াছিল। সেই রায়ের বিরুদ্ধেই তাঁহার সওয়াল, এবং সেই সময়েই এই বাক্য-বিস্ফোরণ। অন্তত, কৌঁসুলি মহাশয়ের দাবি, এই বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণও নাকি তাঁহার নিকট মজুত। প্রমাণ দাবি করিয়া বিশেষ লাভ নাই। মলহোত্র মহাশয়ের এমন জ্ঞানদৃপ্ত আস্ফালন প্রকৃত পক্ষে একটি গূঢ়তর ব্যাধির প্রকাশ। সেই ব্যাধিটি সামাজিক।
ব্যাধিটি এক দিক হইতে অজ্ঞানতা, অন্য দিক হইতে জানিতে না-চাহিবার প্রাণপণ প্রয়াস। আন্তর্জাতিক দুনিয়া যখন ক্রমেই সমকামী সম্পর্ককে আইনসিদ্ধ করিবার পথে, তখন ভারত সরকারের কৌঁসুলি মহাশয় সমকাম লইয়া বিচিত্র সব তত্ত্বের অবতারণা করিতেছেন। ইহাকে আর নিছকই ‘বালভাষিতম্’ বলিয়া উড়াইয়া দেওয়া চলে না। শীর্ষ আদালত তাঁহার এই বাহ্বাস্ফোটে আদপেই প্রভাবিত হয় নাই। বিব্রত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অবশ্য তড়িঘড়ি জানাইয়াছে, সমকামিতা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও অবস্থান গ্রহণ করে নাই। অস্যার্থ, ইহা কেন্দ্রীয় সরকারের বক্তব্য নয়। সমস্যা হইল, মলহোত্র মহাশয় আর কিছুই করেন নাই, সমাজের একটি বৃহৎ অংশের সমকামিতা সম্পর্কে ধারণাকে ভাষা দিয়াছেন। সুতরাং, সেই অর্থে তিনি সমাজের মুখ-পাত্রও বটে। সমাজের সেই মুখ সমকামিতাকে ‘বিকৃতি’ বলিয়া ভাবে।
সুতরাং, তথাকথিত ‘মহান ভারতীয়’ ঐতিহ্যেরও বিকৃতি বলিয়া তাঁহাদের ধারণা! একবিংশ শতকে সমকামিতা লইয়া যে এমন হাস্যকর ধারণা থাকিতে পারে এবং একটি ভারতীয় ঐতিহ্যের দোহাই দিয়া তাহা বাজারে চলিতেও পারে, এই যুগল সংঘটনা যথেষ্ট লজ্জাকর।
এড্স বিষয়ে সচেতনতা প্রসারে নানাবিধ কাজকর্ম করা হইয়া থাকে। এখনও যে অনেক কাজ বাকি, এই ঘটনাই তাহার প্রমাণ। সমকাম বিষয়েও নানাবিধ বিভ্রান্তি সঞ্চরমান। এই যুগল অ-চৈতন্য প্রায়শই একে অন্যের হাত ধরে। পরিণামে, কৌঁসুলিপ্রবরের মন্তব্যের ন্যায় আজব সব বোধ জন্ম লয়। ‘সনাতন’ ভারতীয়ত্ব বলিয়া একটি বস্তু গণমনে বিদ্যমান। যতই বায়বীয় হউক, তাহার অস্তিত্বটি অনস্বীকার্য। সেই ভারতীয়ত্ব যে সমকামকে খারিজ করে না, বরং সেই ঐতিহ্যেই এমন সম্পর্কের বহুতর স্বীকৃতি আছে, ইহা বলা উচিত। কিন্তু, কোনও রাজনৈতিক দলই সাহস করিয়া তাহা বলে না। তাহাতে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের কুপিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। সেই কোপ যদি কোনও ভাবে ভোটবাক্সে প্রভাব ফেলে! এই তীব্র শঙ্কার সম্মুখে দাঁড়াইয়া বিভিন্ন দলের জাগ্রত চেতনা মুহূর্তে ঘুমাইয়া পড়ে। নৈঃশব্দ্য বাড়িতে থাকে। একটি ছদ্ম ‘সনাতন’ আসিয়া জ্বলন্ত ‘বাস্তব’-কে লইয়া যায়।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.