পূর্ববর্তী সরকারের আমলে একটি সমবায় আবাসনের নামে জমি বরাদ্দ করেছিল হিডকো। সেই জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়েছে নতুন সরকারের আমলে। এই অবস্থায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ, অবসর হাউসিং কো-অপারেটিভ নামে ওই সমবায় আবাসনের নামে বরাদ্দ ছ’কাঠা জমি আপাতত অন্য কোনও ব্যক্তি বা সংস্থাকে দেওয়া যাবে না। ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত জমিটি অন্য কাউকে হস্তান্তরের উপরে বুধবার স্থগিতাদেশ দিয়েছে বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৃৃণালকান্তি সিংহের ডিভিশন বেঞ্চ।
জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত বাতিল হওয়ায় স্বাধীনকুমার সাধু নামে অবসর হাউসিং কো-অপারেটিভের এক সদস্য হাইকোর্টে মামলা করেছেন। স্বাধীনবাবু আবেদনে জানান, ২০০৬ সালে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দেখে তিনি সমবায় আবাসনের জন্য জমি চেয়ে দরখাস্ত করেন। হিডকো তখন তাঁকে জমি দেয়নি। ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হিডকো ওই আবাসনের নামে ছ’কাঠা জমি বরাদ্দ করে। কাঠা-পিছু দাম চাওয়া হয় তিন লক্ষ টাকা। সমবায়ের তরফে প্রথম দফায় প্রায় দু’লক্ষ টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তী দফার টাকা জমা দিতে গিয়ে স্বাধীনবাবুরা জানতে পারেন, তাঁদের আবাসনের নামে জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত বাতিল করে দিয়েছে হিডকো।
সিদ্ধান্ত বাতিল করা হল কেন?
হিডকোর বর্তমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, তৎকালীন মন্ত্রী ওই সমবায় আবাসনকে যে-ভাবে জমি দিয়েছেন, তাতে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। হিডকো ২০১১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই আবাসনের নামে জমি বরাদ্দ করে। রাজ্যে নির্বাচন ঘোষিত হয় ২০১১ সালের ১ মার্চ। রাজ্যের নতুন সরকার ও হিডকো বর্তমান কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ওই জমি অনুমোদন বিষয়ক কাগজপত্রে সইসাবুদ হয়েছে নির্বাচন ঘোষণার পরে। সরকার ও হিডকোর পক্ষে সওয়াল করেন রাজ্যের নতুন অ্যাডভোকেট জেনরেল অনিন্দ্য মিত্র এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধাায়।
আবেদনকারীর পক্ষে আইনজীবী অরুণাভ ঘোষের বক্তব্য, প্রাক্তন মন্ত্রীর জমি বরাদ্দের সিদ্ধান্ত এ ভাবে বাতিল করা যায় না। মন্ত্রী যদি নির্বাচনী আচরণ বিধি ভেঙে থাকেন, তা হলে নির্বাচন কমিশন সেটা দেখবে। কোনও ব্যবস্থা নিতে হলে ওই কমিশনই নেবে। এটা রাজনৈতিক দল, প্রার্থী ও নির্বাচন কমিশনের বিষয়। যে-ব্যক্তি বা সংস্থা জমি পেয়েছেন, তিনি বা তাঁরা তো আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেননি। তা হলে তাঁর বা তাঁদের জমি নিয়ে টানাটানি করা হবে কেন? তিনি বা তাঁরা কেন অসুবিধায় পড়বেন। অরুণাভবাবু বলেন, মে মাসের মাঝামাঝি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। আর বরাদ্দ জমির জন্য হিডকোর তরফে ওই সমবায় আবাসনের কাছ থেকে প্রথম দফার টাকা নেওয়া হয়েছে জুনে।
ওই জমি যাতে অন্য কোনও সংস্থা বা ব্যক্তিকে দেওয়া না-হয়, সেই আর্জি জানান আবেদনকারী। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, রায় প্রকাশের আগেই যদি ওই জমি অন্য কারও নামে বরাদ্দ করা হয়, তা হলে এই মামলার আর কোনও মূল্য থাকে না। তাই এ ব্যাপারে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দেওয়া হচ্ছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে এই মামলার রায় দেওয়া যাবে বলে মনে করছে ডিভিশন বেঞ্চ। |