কোথায় আছেন তাপস চট্টোপাধ্যায়? বুধবার সকাল থেকে এলাকার মানুষের এটাই ছিল প্রশ্ন। মঙ্গলবার ধর্মঘটের সময়ে রাজারহাটের গণ্ডগোলে অন্যতম অভিযুক্ত রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায়ের এ দিন ব্যারাকপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করার কথা ছিল। মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের সে কথাই জানিয়েছিলেন সিপিএমের উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক গৌতম দেব। বুধবার তিনিই আবার জানালেন, ওই আদালতের এক আইনজীবী মারা যাওয়ায় অন্য আইনজীবীরা এ দিন কাজ না-করার সিদ্ধান্ত নেন। তাই তাপসবাবু এ দিন আত্মসমর্পণ করতে যাবেন না। এর পরে তাপসবাবু কী করবেন, তা আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে ঠিক করা হবে। তাপসবাবু কোথায়, এর উত্তরে গৌতমবাবু স্পষ্ট বলেন, “তাপস কোথায় আমি জানি না। আর যদি জানতাম, তা হলেও বলতাম না।”
‘জানেন না’ তাপসবাবুর স্ত্রী গোপাদেবীও। তিনি বলেন, “ঘটনার পরে উনি সেই যে বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন, আর ফেরেননি। কোথায় আছেন, জানি না। দু’টো মোবাইল ফোনই বন্ধ।” তাপসবাবু কোথায় আছেন, তা বলেননি বা বলতে চাননি জেলার সিপিএম নেতারাও। রাজারহাটের প্রাক্তন বিধায়ক রবীন মণ্ডল বলেন, “তাপস কোথায়, আমার জানা নেই।” |
রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার চেয়ারম্যান ও সিপিএম নেতা তাপস চট্টোপাধ্যায়কে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এ দিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও তৃণমূল নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “মঙ্গলবার রাজারহাটে তাপসবাবুর নেতৃত্বে যে সন্ত্রাসের ঘটনা ঘটেছে, সিপিএম নেতা গৌতম দেব তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছিলেন, তাপসবাবু বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন। কিন্তু এত বড় করে ঘোষণার পরেও তাপসবাবু ফেরার হয়ে গেলেন। আমরা দাবি করছি, অবিলম্বে তাঁকে গ্রেফতার করতে হবে।”
অন্য দিকে, ধর্মঘটের দিন মারামারির ঘটনায় উপস্থিত থাকা অন্য বিধায়ক, তৃণমূলের সব্যসাচী দত্ত বলেন, “এটা খুব দুর্ভাগ্য যে, এলাকার পুরপ্রধান পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাপসবাবুর যদি সত্যিই আত্মসমর্পণের ইচ্ছা থাকত, তা হলে গৌতমবাবুরা নিজেরাই আদালতে আইনজীবী নিয়ে যেতে পারতেন। গৌতমবাবু যা বলেন, তা করেন না। যা করেন, তা বলেন না।”
বুধবারেও বাবলাতলা এলাকায় পরিবেশ ছিল থমথমে। পাড়ার মোড়ে অলিতে-গলিতে চলেছে পুলিশের টহলদারি। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে পুলিশ বাড়িতে ঢুকে থানায় নিয়ে গিয়েছে বেশ কয়েক জনকে। এলাকার এক বাসিন্দা মুনমুন চন্দের অভিযোগ, “রাত সাড়ে বারোটা নাগাদ পুলিশ আমার স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়।” ওই এলাকার মহিলারা জানালেন, কয়েকটা বাড়িতে পুলিশের হানার পরে থেমে থাকেননি পাড়ার মহিলারাও। রীনা রাহা নামে কালীপার্কের এক বাসিন্দা বলেন, “কেন রাতে নির্দোষ মানুষগুলোকে পুলিশ তুলে নিয়ে যাবে? আমরা পাড়ার মহিলারা সমবেত ভাবে এর প্রতিবাদে নামি।” এলাকার মহিলারা জানালেন তারা হাতের সামনে যা পেয়েছেন, যেমন হাতা-খুন্তি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছিলেন। তাঁরা রাতে রাজারহাটের নারায়ণপুর ফাঁড়িতে ডেপুটেশনও দেন।এ দিন মঙ্গলবারের মারামারি ও গুলি চালানোর ঘটনায় বিমানবন্দর থানার পুলিশ মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের এ দিন ব্যারাকপুর আদালতে তোলা হলে ৬ জনকে পুলিশি হেফাজত ও বাকি ১২ জনকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার এ দিন দুপুরে রাজারহাটের বাবলাতলায় যান। যে স্কুল খোলাকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল হয়, সেই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। রাজীববাবু বলেন, “তদন্ত চলছে। তাপসবাবুকে পেলেই গ্রেফতার করা হবে। বিধায়ক সব্যসাচী দত্তের দেহরক্ষী স্বপন মৃধার খোয়া যাওয়া সার্ভিস রিভলভারটি অবশ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ শঙ্করের দেহের গুলি দু’টো টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ওই গুলি পরীক্ষা করে দেখা হবে কী ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থেকে তা চালানো হয়েছে।” |