আগেও অভিযোগ বিস্তর, তবু শাস্তি হয়নি তারকের
কই অপরাধের অভিযোগ। কিন্তু ব্যবস্থা দু’রকম।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি অগ্নিদগ্ধ একটি শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর পরে ই এম বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক সার্জেন্ট কমল দাস। ছ’বছরের ওই শিশুটি ছিল তাঁর মেয়ের স্কুলের বন্ধু। শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে সাসপেন্ড করে লালবাজার।
মঙ্গলবার ছুটি নিয়ে তৃণমূলের হয়ে ধর্মঘটের বিরোধিতায় পথে নেমেছিলেন মেটিয়াবুরুজ থানার কনস্টেবল তারক দাস। গাঙ্গুলিবাগানে সিপিএমের জোনাল অফিস ভাঙচুর এবং সাংবাদিক নিগ্রহের সঙ্গে তিনি সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন বলে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে পাটুলি থানায়। একাধিক ক্যামেরায় তাঁর ছবিও উঠেছে। কিন্তু ঘটনার এক দিন পরেও তারক দাসের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নিতে পারলেন না লালবাজারের কর্তারা।
তারকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও একাধিক বার ছুটিতে থাকার সময়ে তিনি রাজনৈতিক গোলমালে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। অন্তত তিনটি মামলায় আদালত থেকে তাঁকে জামিন নিতে হয়েছে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে ‘শৃঙ্খলাভঙ্গের’ অভিযোগ তোলেননি কোনও পুলিশকর্তাই।
মঙ্গলবারের ঘটনার পর ডিসি (সাউথ-সাবার্বান) বিশ্বরূপ ঘোষ বলেন, “তারকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” তবে পুলিশের একাংশই জানাচ্ছে, গত এক বছর ধরে রাজনৈতিক নানা গোলমালে জড়িয়েও কোনও শাস্তি হয়নি তারকবাবুর। তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী বলে পরিচিত হওয়ায় কেউই তাঁকে ঘাঁটাতে চাননি। এ বারেও অন্য রকম কিছু হবে বলে তাঁরা আসা করছেন না। কারণ, খোদ মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছেন, ঘটনাটি সাজানো।
কাঠগড়ায় তারক দাস
২১ জুলাই ’১১ দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত কর্মীকে মারধর।
১২ ডিসেম্বর ’১১ বাঘাযতীনে একটি স্কুল কমিটির ভোটে বাধা, প্রধান শিক্ষিকাকে আটকে রাখা।
১৩ ডিসেম্বর ’১১ দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজের ছাত্র সংসদের মহিলা সাধারণ সম্পাদকের তলপেটে লাথি।
(প্রতিটি ক্ষেত্রেই জামিনে মুক্তি)
মঙ্গলবার সকালে গাঙ্গুলিবাগানের অশোক রোডে সিপিএম অফিসের বাইরে ধর্মঘটের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের পাশাপাশি অভিযুক্তদের তালিকায় উঠে আসে তারকবাবুর নাম। স্থানীয় সিপিএম নেতারা তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, সাংবাদিক নিগ্রহের অভিযোগও উঠেছে তারকবাবুর নামে। এ ব্যাপারে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন আনন্দবাজার পত্রিকার আলোকচিত্রী পিণ্টু মণ্ডল। তারকবাবু যে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন, সেটা দেখা গিয়েছে একাধিক ক্যামেরায় তোলা ছবিতে।
পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১ সেপ্টেম্বর দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ এলাকা কলকাতা পুলিশের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার দিনই মেটিয়াবুরুজ থানায় কনস্টেবল পদে যোগ দেন তারকবাবু। তার আগে তিনি পঞ্চম ব্যাটালিয়নে ছিলেন। গত ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে তারকবাবু ‘ব্যক্তিগত’ কারণে ছুটিতে যান। মঙ্গলবার পর্যন্ত ছুটিতে ছিলেন তিনি। অভিযোগ, ওই দিন সকালে গাঙ্গুলিবাগানে বিস্কুট-রঙা টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা তারকবাবু আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক শুভাশিস ঘটকের দিকে আঙুল উঁচিয়ে বলেন, “তোমাদের লোক ছবি তুলছে কেন? এক্ষুনি কেটে পড়ো। এখানে কী দেখতে এসেছ?” ইতিমধ্যে তাঁর সঙ্গীরা অকথ্য গালিগালাজ দিতে দিতে পিণ্টু মণ্ডলের মুখে ঘুষি মারতে শুরু করে। ওই দুষ্কৃতীরা তাঁর ক্যামেরা কেড়ে সেটি ভেঙে ফেলারও চেষ্টা করে। দুষ্কৃতীদের অনেকের মুখ থেকেই ওই সময় ‘মদের গন্ধ’ বেরোচ্ছিল বলে অভিযোগ।
লালবাজারের এক কর্তা এ দিন জানান, ছুটিতে থাকাকালীনও কোনও পুলিশকর্মী রাজনৈতিক দলের কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন না। তারকবাবু যদি তা করে থাকেন, তবে তা শৃঙ্খলাভঙ্গ হিসেবেই বিবেচিত হবে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাঙচুর ও সাংবাদিক নিগ্রহের মতো অপরাধমূলক কাজের অভিযোগ।
এর পরেও তারকবাবুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এত গড়িমসি কেন? এ ব্যাপারে পুলিশকর্তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তারকবাবুর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর মোবাইল সারা দিনই বন্ধ ছিল।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.