ট্র্যাফিক বিধি ভেঙে পুলিশের গায়ে হাত তোলাকে প্রাথমিক ভাবে ‘ছোট্ট ঘটনা’ বলে বর্ণনা করলেন রাজ্যের নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। বললেন, “এ রকম তো কতই হয়!” পরে অবশ্য তিনি স্বীকার করেন, ঘটনাটা ছোট নয় বলেই জামিনঅযোগ্য ধারায় মামলা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গ্রেফতার প্রসঙ্গে বুধবার মহাকরণে ফিরহাদ বলেন, “একটা ছোট্ট ঘটনা। এমন ঘটনা কলকাতা ও সারা দেশে হামেশাই ঘটে, যেখানে ট্র্যাফিক পুলিশের সঙ্গে বচসা, ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়েন চালক। এটাও সে রকম একটি ঘটনা।” তিনি আরও দাবি করেন, “অন্য ক্ষেত্রে এমন ঘটনায় কেউ গ্রেফতার হয় না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই ছোট ঘটনা হওয়া সত্ত্বেও আকাশকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর আগে তো এক মুখ্যমন্ত্রীর মেয়েকে স্যালুট দেয়নি বলে পুলিশকে বদলি করা হয়েছিল। আর এক মুখ্যমন্ত্রীর ছেলের স্যুটকেস হারানো নিয়ে কলকাতা তোলপাড় হয়েছিল!”
আকাশকে প্রথমে ছেড়ে দিয়েও পরে গ্রেফতার করা নিয়ে এ দিনও অবশ্য দিনভর তোলপাড় হয় সংবাদমাধ্যমে। সে প্রসঙ্গে ফিরহাদের অভিযোগ, “রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ যাতে লোকে দেখতে না পান, তাই নেতিবাচক খবর বড় করে দেখানো হচ্ছে।” বরং তাঁর কথায়, “নিজের ভাইপো হওয়া সত্ত্বেও আকাশকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়ে রাজধর্ম পালন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।” প্রসঙ্গত রায়গঞ্জ কলেজে অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনায় একই রকম ভাবে ‘ছোট ছেলে’দের ‘ছোট্ট ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রীই।
ফিরহাদ জানান, বেলা ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে। তিনি তখন মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতেই ছিলেন। কিন্তু কিছুই জানতে পারেননি। পথচলতি কেউ এক জন মুখ্যমন্ত্রীকে ঘটনার কথা জানান বলে দাবি করেছেন ফিরহাদ। তখনই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে অভিযুক্তদের গ্রেফতার করার নির্দেশ দেন।
মন্ত্রীর মন্তব্য: “সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে জানতে পেরে আকাশকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে যা প্রচার করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়।” তিনি আরও বলেন, শহরের কোন কোণায় কী হচ্ছে, তা এক জন মুখ্যমন্ত্রী বা পুলিশ কমিশনারের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। স্থানীয় বিধায়ক হলেও আমিও এই ঘটনার কথা প্রথমে জানতে পারিনি। আমাকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।” এর পরেই এ দিন দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের বিমানে মুখ্যমন্ত্রী বাগডোগরা চলে যান।
কিন্তু কর্তব্যরত পুলিশের গায়ে হাত তোলা কি ‘ছোট ঘটনা’? মন্ত্রীর জবাব: “ছোট ঘটনা নয় বলেই তো সেই মতো ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। না হলে তো তাঁর জামিন হত।” তা হলে প্রথমে কেন আকাশকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল? মন্ত্রীর জবাব: “এটা আমার জানা নেই। তবে ঘটনার সময় সেখানে অনেক পরীক্ষার্থী ছিল। তাই পুলিশ গাড়ির নম্বর নিয়ে তাঁকে প্রথমে ছেড়ে দিয়েছে। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সাড়ে ১২টা নাগাদ তাঁকে গ্রেফতার করা হয়।”
ফিরহাদের কথায়: “আকাশ তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত নন। বাচ্চা ছেলে। তবু মুখ্যমন্ত্রী দেখিয়ে দিলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।” কিন্তু প্রায় একই অভিযোগ ওঠা সত্ত্বেও কেন তৃণমূল নেত্রী দোলা সেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেননি মুখ্যমন্ত্রী? নগরোন্নয়নমন্ত্রীর জবাব: “মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে সঙ্গে সেটা জানতেন না।” কিন্তু পরে তো জেনেছেন? এই প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যান মন্ত্রী।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি নিবেদিতা সেতুতে একটি বেসরকারি এজেন্সির কর্মীকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে দোলা সেনের বিরুদ্ধে। যদিও দোলাদেবী সেই অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, সেই সময় ঘটনাস্থলে তিনি ছিলেন না। ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ।এ দিন আকাশের সঙ্গেই গ্রেফতার হওয়া আরও তিন জনের মধ্যে রয়েছেন অমিত মিশ্র। তিনি তৃণমূল ‘যুবা’র নেতা বলে পরিচিত। অমিতের বিরুদ্ধে দল কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না জানতে চাইলে তৃণমূলের মহাসচিব তথা রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই প্রশ্নের জবাব দেব না। এই ব্যাপারে প্রশাসনের যা কাজ, তা-ই করছে প্রশাসন।” তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “অমিতদের বিরুদ্ধে অভিযোগটা আগে প্রমাণিত হোক। তার পরে কী করা উচিত, দলীয় নেতৃত্ব তা ভাববেন।” |