কলকাতা থেকে ধরা পড়ল চার মাওবাদী। বুধবারই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ওই চার জনকে ধরা হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের একটি দল কলকাতায় এসে এদের গ্রেফতার করেছে। অন্ধ্রের পুলিশ দলটিকে সাহায্য করেছে কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স বা এসটিএফ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, ধৃতদের জেরার ভিত্তিতে এই দিনই মুম্বই থেকে মাওবাদী সন্দেহে আরও চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কলকাতা থেকে যে চার জনকে ধরা হয়েছে তাদের নাম সন্তোষ, রামকৃষ্ণ সাউ, সোম রাই এবং মদন। কলকাতায় ধৃতদের কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা ও বেশ কিছু পেনড্রাইভ পাওয়া গিয়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। মুম্বইয়ে ধৃতদের কাছ থেকেও ২৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে। কলকাতায় প্রথমে কলেজ স্ট্রিট থেকে এক জনকে ধরা হয়। তার পর দক্ষিণ কলকাতা থেকে ধরা পড়ে বাকি তিন জন। ধৃতদের মধ্যে রামকৃষ্ণ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর।
ধৃতদের প্রথমে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হলেও রাতে তাদের সেখান থেকে দক্ষিণ কলকাতার কোনও গোপন জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় বলে পুলিশ সূত্রের খবর। ধৃতরা অন্ধ্রে গুরুত্বপূর্ণ মাওবাদী নেতা বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা। অনেক দিন ধরেই অন্ধ্র পুলিশ তাদের খুঁজছিল। তারা কলকাতায় লুকিয়ে রয়েছে, এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েই অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ এসটিএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ করে।
বুধবার বেলা এগারোটা নাগাদ প্রায় নাটকীয় ভাবে কলেজ স্ট্রিট থেকে এক যুবককে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে দেখেন পথচলতি মানুষ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, হেয়ার স্কুলের সামনে থেকে বছর সাতাশের এক যুবককে টেনে হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নেয় কয়েক জন। তার পরই জোরে গাড়ি চালিয়ে তারা এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে যায়। এই ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কলেজ পাড়ায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বছর সাতাশের ওই যুবক হিন্দু স্কুল লাগোয়া কলেজ স্কোয়ারের গেট থেকে বেরোচ্ছিলেন। সেই সময় একটি সাদা রঙের বোলেরো গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে তিন জন লোক নেমে এসে ওই যুবকের মুখ চেপে ধরেন। তার পরই টেনে-হিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নেন। ওই ঘটনার সময় রাস্তার ধারে নিজের দোকানের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন এক বই বিক্রেতা। তিনি বলেন, “গাড়িতে তোলার সময় ওই যুবকের মুখে ঢাকা দেওয়া কাপড়টি সরে যায়। সেই ফাঁকেই চিৎকার জুড়ে দেন তিনি।” ওই বই বিক্রেতা জানান, যুবকের পরনে ছিল কালো রঙের প্যান্ট। পিঠে ছিল কালো ব্যাগ। ঘটনাটি দেখেন হিন্দু স্কুলের এক পড়ুয়ার অভিভাবক, রীতা দাসও।
ওই যুবককে দ্রুত তুলে নিয়েই গাড়িটি ছেড়ে দেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। যাঁরা তুলছিলেন, তাঁদের এক জন কিন্ত তখন গাড়িতে উঠতে পারেননি। বেশ কিছুটা গাড়ির পিছনে দৌড়নোর পর চলন্ত গাড়ির দরজা খুলে উঠে পড়েন তিনি। এর পরেই কলেজ স্ট্রিট এবং মহাত্মা গাঁধী রোডের মোড় থেকে সেটি শিয়ালদহের দিকে চলে যায়। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই বই বিক্রেতা বলেন, “আমি গাড়ির পিছনে দৌড়েছিলাম। কিন্তু ধরতে পারিনি।” কলেজ পাড়ার বই বিক্রেতারা জানিয়েছেন, যুবকটি চলন্ত গাড়ি থেকে নিজের মোবাইলটি ফেলে দিয়ে গিয়েছিলেন। সেটি পুলিশকে দেওয়া হয়েছে। তবে কোনও মোবাইল জমা পড়ার কথা পুলিশ স্বীকার করেনি।গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কলেজ স্ট্রিট থেকে প্রথমে যাকে ধরা হয়, তার সঙ্গেই শহরের দক্ষিণ প্রান্তে হানা দেয় অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের দলটি। সঙ্গে ছিল এসটিএফ-ও। দক্ষিণ কলকাতার কোন এলাকা থেকে বাকিদের ধরা হয়েছে, সে বিষয়ে মুখ খুলতে চাননি গোয়েন্দারা। তবে আগামী দু-এক দিন শহর জুড়ে এই রকম অভিযান যে চলবে, তার ইঙ্গিত মিলেছে। বুধবার মধ্যরাতেও জোড়াবাগান, জোড়াসাঁকো এলাকায় জোরদার অভিযান চলছে বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর।
|
(তথ্য সহায়তা: কুন্তক চট্টোপাধ্যায়) |