বিধানসভা ভোটের আগে এক রবিবার যাদবপুরের রাস্তায় জনতার ঢল দেখেছিল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের প্রচার-মিছিল। ভোটে হারার ন’মাস পরে বুধবার এই প্রথম তাঁর পুরনো কেন্দ্র যাদবপুরের পথে আবার মিছিলে বুদ্ধবাবু।
সে বারের জনজোয়ার বামফ্রন্ট তো বটেই, খোদ বুদ্ধবাবুকেও যাদবপুরে জেতাতে পারেনি। তবে ভোটের ন’মাস পরে ‘পরাজিত’ সিপিএমের মিছিলে এই জনজোয়ার অন্য ইঙ্গিত বহন করছে বলেই মনে করছেন দলীয় নেতারা। সিপিএম নেতারা নিজেরাই বলছেন, যত ‘সংগঠিত’ই হোক না কেন, এই ভিড় তাঁরা আশা করেননি। যাদবপুরের প্রাক্তন সাংসদ সুজন চক্রবর্তী খোলাখুলি বললেন, “কত ভিড় হয়েছিল? ৬০ হাজার? ৭০? জানি না! সত্যিই জানি না!” দৃশ্যতই এ দিনের ‘অপ্রত্যাশিত’ ভিড় দেখে ‘তৃপ্ত’ আলিমুদ্দিন।
তবে আলিমুদ্দিনের ‘তৃপ্তি’কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে আজ, বৃহস্পতিবারই ‘জবাবি মিছিল’ নিয়ে একই পথে নামছে শাসক তৃণমূল। দার্জিলিং সফরে থাকায় এ মিছিলে অংশ নিতে পারছেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে শনিবার ওই একই জায়গায় দ্বিতীয় একটি মিছিলের পুরোভাগে থাকবেন তিনিই। তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার কথায়, “আমরা এমন মিছিল করব যে সিপিএম আর মিছিল করার সাহস পাবে না!” |
তৃণমূল যা-ই বলুক, এ দিনের মিছিল ঘিরে জনতার ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ সাড়াকে কিন্তু যথেষ্ট ‘ইতিবাচক’ বলে মনে করছেন বাম নেতৃত্ব। ‘সংগঠিত’ মিছিলে কসবা, সোনারপুর, ঢাকুরিয়া, ঠাকুরপুকুর থেকেও লোক এসেছিলেন। তার পাশাপাশি যাদবপুরের সুবোধ মল্লিক রোড ধরে কাতারে কাতারে যুব-ছাত্রর পাশাপাশি মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিলে কচিকাঁচারাও সরকার-বিরোধী স্লোগানে গলা মিলিয়েছে। রাস্তার দু’ধারেও জমায়েত ছিল ভালই। সন্ধ্যা ছ’টা থেকে শুরু হওয়া ওই মিছিলের জেরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা ওই রাস্তায় যানচলাচল স্তব্ধ হয়ে যায়। কর্মব্যস্ত সন্ধেয় পথের ধারে দাঁড়িয়ে সোৎসাহে ‘মিছিল’ দেখেছেন মানুষ। মিছিলে আটকে বিরক্তিসূচক মন্তব্যের পরিবর্তে ‘ওই যে রেজ্জাকদা’, ‘ওই তো বুদ্ধবাবু’, ‘সিপিএম মোটেই ঘুমিয়ে পড়েনি’ এমন নানা কথা ছুড়ে দিয়েছেন তাঁরা। গাঙ্গুলিবাগানে সিপিএমের কার্যালয়ে ভাঙচুর আর সাংবাদিক-নিগ্রহে অভিযুক্তদের কড়া শাস্তির দাবি উঠেছে মিছিল থেকে।
ভোটের আগেও পথে ‘নামেননি’। এ দিনও ৮বি থেকে গড়িয়া মোড় পর্যন্ত চার কিলোমিটার জুড়ে মিছিলে বুদ্ধবাবু আগাগোড়াই ছিলেন হুডখোলা জিপে। কিন্তু রাস্তার দু’পাশে দাঁড়ানোর জনতার দৃষ্টি ছিল তাঁর দিকেই। এ দিন মিছিলে বুদ্ধবাবুর জিপে ছিলেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার ও স্থানীয় নেত্রী দীপা রায়। হাঁটতে দেখা গেল কান্তি গঙ্গোপাধ্যায় থেকে রেজ্জাক মোল্লা, রবীন দেব থেকে মহম্মদ সেলিমদের। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সিপিএমের সম্পাদক সুজন চক্রবর্তীর পাশাপাশি পা মেলান কলকাতা জেলার অনাদি সাহুরাও। মিছিলে থাকলেও জিপের আশেপাশে বুদ্ধবাবুর পুরনো নির্বাচনী কেন্দ্রের প্রাক্তন ‘ভোট-ম্যানেজার’ খোকন ঘোষদস্তিদারকে চোখে পড়েনি।
বুদ্ধবাবুদের এই ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ মিছিলের ‘উপযুক্ত জবাব’ দিতে এ দিন দার্জিলিং থেকে মমতা ফোনে তৃণমূল নেতৃত্বকে পাল্টা মিছিল করার নির্দেশ দেন বলেই দলীয় সূত্রের খবর। মমতার সঙ্গে ফোনে আলোচনার সময়ে শিল্পমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং দলের রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ সুব্রত বক্সী। এর পরেই মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে পার্থবাবু জানান, আজ, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে মিছিল শুরু হবে। বুদ্ধবাবু এ দিন শুরু করেছিলেন যে ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে, সেখান থেকেই আজ শুরু হবে তৃণমূলের মিছিল। সেই মিছিল যেখানে শেষ হবে, সেই গাঙ্গুলিবাগান থেকে ৮বি পর্যন্ত ফিরতি পথে শনিবার মিছিল করার কথা মমতার। কেন এই মিছিল, তা জানাতে গিয়ে পার্থবাবু বলেন, “সিপিএমের সন্ত্রাস, কুৎসা ও চক্রান্তের বিরুদ্ধে এবং রাজ্যে উন্নয়নের পক্ষে আমরা শান্তিমিছিল করব।” তবে অনেকের মতে, সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশ এবং এ দিনের মিছিলের উপযুক্ত ‘জবাব’ দিতেই যাদবপুরে পাল্টা মিছিলের সিদ্ধান্ত তৃণমূলের। |