হতাশাজনক, কিন্তু অপ্রত্যাশিত নয়। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের ত্রৈমাসিকে ৬.১ শতাংশে নেমে আসার খবরে বুধবার এই মন্তব্যই করলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
অর্থমন্ত্রীর মতে, চলতি ২০১১-’১২ অর্থবর্ষের তিনটি ত্রৈমাসিককে হিসাবের মধ্যে ধরলে বৃদ্ধি কমার প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু ভারতের এবং বিশ্ব অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতির বিচারে তা প্রত্যাশিতই ছিল। গোটা অর্থবর্ষে তা ৬.৯ থেকে ৭% ছোঁবে বলেই প্রত্যয়ী প্রণববাবু। প্রসঙ্গত, সরকারি পূর্বাভাসেও একই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। গত অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ছিল ৮.৪%।
সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অর্গানাইজেশন -এর পরিসংখ্যানে বৃদ্ধির হার আগের ত্রৈমাসিকের ৬.৯% থেকে কমে যাওয়ায় হতাশ শিল্পমহলও। গত প্রায় তিন বছরে এই হার সবচেয়ে কম। শেয়ার বাজারেও এ দিন দুশ্চিন্তার আঁচ লাগে। ফলে সকালের দিকে প্রায় ২৭০ পয়েন্ট বেড়ে সেনসেক্স ১৮ হাজার পেরিয়ে গেলেও আর্থিক বৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রির চাপ বাড়তে থাকে। তবে শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্তে দিনের শেষে ওএনজিসি শেয়ারের দাম ৩% বাড়ার ফলে একেবারে তলানিতে নেমে যায়নি সেনসেক্স। অবশ্য, দিনের শেষে তা বেড়েছে মাত্র ২২ পয়েন্ট। |
পরিকাঠামো শিল্প এবং কারখানার উৎপাদনে ঢিমেতালে বৃদ্ধিই অর্থবর্ষের এই তৃতীয় ত্রৈমাসিকে প্রভাব ফেলেছে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) বা এককথায় আর্থিক বৃদ্ধির হারের উপর। অন্য যে সমস্ত কারণ আর্থিক বৃদ্ধির হারের এই পতনে বাড়তি ইন্ধন জুগিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে:
• বিশ্ব অর্থনীতির উপর মন্দার ছায়ার জেরে চাহিদা কমা
• ভারতে চড়া সুদের হার, যা বাড়িয়েছে শিল্প-ঋণের খরচ
• কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি আশানুরূপ না-হওয়া
পরিসংখ্যান অনুযায়ী আলোচ্য ত্রৈমাসিকে কারখানা ক্ষেত্রে উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ০.৪% (গত বছরের হার ৭.৮%), কৃষি ২.৭% (গত বছর ১১%), খনন ক্ষেত্রে উৎপাদন কমেছে ৩.১% (গত বারের বৃদ্ধি ৬.১%)।
তৃতীয় ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির এই হার রয়টার্সের আগাম সমীক্ষার থেকেও কম। ওই সমীক্ষায় ৬.৪% বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। এই অবস্থায় অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ ফেরাতে আর্থিক সংস্কার আরও জোরকদমে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উপরেই গুরুত্ব দিয়েছে শিল্পমহল। সিআইআইয়ের ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, সমস্ত আর্থিক নীতির এখন একটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে তোলা। আর, সেই চালিকাশক্তি আসা চাই লগ্নির হাত ধরেই। এর জন্যই লগ্নি সহায়ক সরকারি নীতি প্রণয়নে জোর দিয়েছে ফিকি-ও। অ্যাসোচ্যামের সেক্রেটারি জেনারেল ডিএস রাওয়াত এই একই কারণে সুদ কমানোর দাবি জানান। এখন ১৫ মার্চের ঋণনীতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সেই পথে হাঁটে কি না, সে দিকেই তাকিয়ে শিল্পমহল। |