জমি বিতর্কে মহদিপুর সীমান্তে স্থলবন্দরের কাজ শুরু না হওয়ায় দিনের পর দিন বাংলাদেশে রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য কমতে শুরু করেছে। মহদিপুরে রফতানি ও আমদানি বাণিজ্যে কমতে থাকায় মালদহে রফতানিকারক ও আমদানিকারকদের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত মালদহের মহদিপুরে প্রায় ৭ একর জমির উপর আন্তর্জাতিক স্থলবন্দর গড়ে তোলার জন্য ১৫ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে। ১৫ বছর আগে জমি মেলার পরেও স্থলবন্দরের কাজ এখনও শুরু হয়নি। জেলাশাসক শ্রীমতি অর্চনা জানান, মহদিপুর সীমান্তে স্থলবন্দর গড়ে তোলার জন্য ওই এলাকার ৪৬ জনের কাছে থেকে ৬ একর ৬৬ শতক জমি কিনে ১৯৯৭ সালে ২০ মে শুল্ক দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। ৪৫ জনকে জমির দাম দিয়ে দেওয়া হয়েছে। পরে জমির একজন মালিক জমি দিতে আপত্তি জানিয়ে আদালতে মামলা করায় শুল্ক দফতর ওইখানে স্থলবন্দরের কাজ শুরু করছে না। জেলাশাসক বলেন, “বেশির ভাগ জমি পাওয়ার পর কেন শুল্ক দফতর কাজ শুরু করেনি তা তারাই বলতে পারবে। তবে স্থলবন্দরের কাজ শুরু করার জন্য শুল্ক দফতরে বলা হবে।” এ ব্যাপার শুল্ক দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার উমেশ যাদবের দাবি, জেলা প্রশাসন স্থলবন্দরের জন্য বেশির ভাগ জমি তাঁদের হাতে তুলে দিলেও এখন পর্যন্ত সেই শুল্ক দফতরের নামে নামজারি হয়নি। তিনি বলেন, “শুল্ক দফতরের নামে নামজারি না হওয়া পর্যন্ত ওই জমিতে স্থল বন্দরের কাজ শুরু করতে পারছি না।” তিনি জানান, স্থলবন্দরের জমি শুল্ক দফতরের নামে নথিভুক্ত করার জন্য মালদহ জেলা প্রশাসনের এলআর বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনও ওই জমিতে তাঁদের দফতরের নাম নথিভুক্ত হয়নি। এদিকে সরকারি স্থলবন্দর না গড়ে ওঠায় সীমান্তে প্রাইভোট ট্রাক টার্মিনাসের মালিকদের পোয়াবারো। মহদিপুর সীমান্তে প্রাইভেট ট্রাক টার্মিনাসের মালিকরা ইচ্ছামতো বাংলাদেশে রফতানি পণ্য নিয়ে আসা ট্রাকের কাছ থেকে মোটা টাকা আদায় করছে। প্রতিদিন মহদিপুরে ৩০০-৩৫০ ট্রাক পণ্য নিয়ে বাংলাদেশ রফতানি করছে। ট্রাক পিছু প্রাইভেট ট্রাক টার্মিনাসের মালিকরা ১০০ টাকা, কেউ বা সুযোগ বুঝে বেশি টাকা আদায় করছে। পেট্রাপোল স্থলবন্দরের উপর চাপ কমাতে, পেট্রাপোলের মতো মালদহের মহদিপুর সীমান্ত স্থলবন্দর তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্রীয় বাণিজ্যে মন্ত্রক। আর সেই লক্ষ্যে মহদিপুরে স্থলবন্দর তৈরির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক। ফেডারেশন অফ বেঙ্গল এক্সপোর্টার অ্যসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক সমীর ঘোষ বলেন, “মহদিপুর সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা সড়ক পথে যেতে সময় লাগে সাড়ে ৪-৫ ঘন্টা। অথচ পেট্রাপোল থেকে ঢাকা যেতে একদিন সময় লাগে। মহদিপুরে স্থলবন্দর গড়ে উঠলে রফতানি বাণিজ্যের পাশাপাশি আমদানি বাণিজ্যে অনেকগুণ বেড়ে যাবে। মহদিপুরে স্থলবন্দর তৈরির টালবাহানায় রফতানি ও আমদানি বাণিজ্য দারুণ ভাবে মার খাচ্ছে।” তাঁর দাবি, এখানে স্থলবন্দর গড়ে উঠলে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ মাছ পেট্রাপোল হয়ে ঘুরপথে আনার প্রয়োজন হবে না। সরাসরি মহদিপুর সীমান্ত দিয়েই ইলিশ মাছ মালদহে চলে আসবে। ওয়েস্ট বেঙ্গল এক্সপোর্টার কোঅডির্নেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক উজ্জল সাহা বলেন, “এক ছাতার নিচে সমস্ত সূযোগ সুবিধার জন্য ‘ইন্টিগ্রেটেড ক্লিয়ারিং সিস্টেম’ চালু হলে রফতানিকারকদের হয়রানি কমবে। এক জায়গায় ওজন করার মেশিন, রফতানি ও আমদানি পণ্যের পরীক্ষা-সহ সমস্ত সুযোগ সুবিধা থাকলে বাংলাদেশে রফতানি বাণিজ্যে বাড়বে।” |