রাজ্য সরকারের অনুরোধ রেখে প্রকল্প নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি আপাতত এক মাসের জন্য পিছিয়ে দিল ইনফোসিস। বুধবার শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাটির দাবি, পশ্চিমবঙ্গে লগ্নির বিষয়ে ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণার আগে আগামী কেন্দ্রীয় বাজেটে বিশেষ আর্থিক অঞ্চল (সেজ) নিয়ে মনমোহন-সরকারের অবস্থান দেখে নিতে চায় তারা। সংস্থার শীর্ষ কর্তারা কথা বলতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও। ফলে অনেকেই মনে করছেন, এ দিনের বৈঠকের পর সমস্যা সমাধানে অন্তত কিছুটা সময় হাতে পেল রাজ্য। তবে সেজের তকমার জন্য ইনফোসিস অনড় থাকায়, এই বৈঠক থেকে পাকাপাকি ভাবে কোনও সমাধানসূত্র যে বার হয়নি, তা মেনে নিচ্ছে দু’পক্ষই। বুধবারের বৈঠকের পরও ইনফোসিস নিয়ে যেমন সমাধানসূত্র বেরিয়ে এল না, সেজ নিয়ে রাজ্য সরকারের একই অবস্থানের কারণে তেমনই অধরা থেকে গেল উইপ্রোর প্রকল্প সম্প্রসারণের রফাসূত্র।
রাজ্যে নিজেদের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের জন্য সেজের তকমা চায় আজিম প্রেমজির সংস্থাও। এবং তা পেতে অসুবিধা হলে, আগে থেকেই সেজের তকমা থাকা কোনও শিল্পাঞ্চলে বিকল্প জায়গা চায় তারা। সুতরাং, দুই সংস্থার প্রকল্পই সেজ-জটে আটকে থাকায়, আপাতত ঝুলে রইল সম্মিলিত ভাবে তাদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার লগ্নি এবং ৩০ হাজার কর্মসংস্থানের সম্ভাবনা। |
মহাকরণে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে ইনফোসিস কর্তা হামপাপুর। নিজস্ব চিত্র |
এ দিন মহাকরণে শিল্প ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন ইনফোসিস ও উইপ্রো-র প্রতিনিধিরা। ইনফোসিসের তরফ থেকে পার্থবাবুর সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গ্লোবাল হেড (কমার্শিয়াল অ্যান্ড কর্পোরেট রিলেশন্স) বিনোদ হামপাপুর। প্রায় দেড় ঘণ্টা আলোচনার শেষে যৌথ সাংবাদিক বৈঠকে দু’জনেই জানান, সমাধানসূত্র খুঁজতে আলোচনার পথে হাঁটছেন তাঁরা।
হামপাপুর বলেন, “সেজ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ওই তকমা ছাড়া প্রকল্প গড়া সম্ভব নয়। কারণ, প্রকল্পকে লাভজনক হতে হবে। তবে আমরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক না করে কোনও সিদ্ধান্ত নিচ্ছি না। তা ছাড়া, আমরা অপেক্ষা করছি আগামী কেন্দ্রীয় বাজেটের জন্যও।”
আর পার্থবাবু জানান, “ওঁদের বক্তব্য শুনেছি। আমাদের বক্তব্যও জানিয়েছি। একটা সমাধানসূত্রের দিকে এগোতে চাইছে দু’পক্ষই।” অবশ্য সেজের সুযোগ-সুবিধার বদলে কী ধরনের আর্থিক সুবিধা রাজ্য দিতে পারে, তা জানাননি তিনি। মুখ খোলেননি ইনফোসিসের জন্য বিশেষ ‘প্যাকেজ’ তৈরির সম্ভাবনা প্রসঙ্গেও।
একই দিনে উইপ্রোর প্রতিনিধি হিসেবে শিল্পমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন দুই কর্তা পার্থসারথি গুহ পাত্র এবং বিজয় অগ্রবাল। সংক্ষিপ্ত বৈঠকের পর পার্থবাবু জানান, সেজের সুবিধা পেতে প্রয়োজনে নির্ধারিত জমির বদলে আগে থেকেই ঘোষিত সেজ-এ বিকল্প জমি চায় সংস্থা। কিন্তু উইপ্রোর এই চাহিদা মেটানো সহজ নয়। আর ইনফোসিসের ক্ষেত্রে এ ধরনের বিকল্প জমি দেওয়া সম্ভবই নয় বলে স্পষ্ট জানান তিনি।
শিল্পমহলের মতে, সেজ নিয়ে নতুন করে ভাবনা-চিন্তা করছে কেন্দ্র। ভবিষ্যতে হয়তো সেজের সঙ্গে তুলনীয় নয়া প্রকল্প চালু করতে পারে তারা। সম্ভবত সেই কারণেই এখন কেন্দ্রীয় বাজেটের দিকে তাকিয়ে ইনফোসিস। হামপাপুর জানান, সেজের সুবিধা পেতে যে-সময়ের মধ্যে ওই ছাড়পত্র প্রয়োজন, পশ্চিমবঙ্গের প্রকল্পের ক্ষেত্রে এখন এমনিতেই তা পাওয়া অসম্ভব। তাই বাজেটে নতুন কিছু ঘোষণা হয় কিনা, সে দিকেই চোখ রাখছে সংস্থা।
উল্লেখ্য, সারা দেশে ১১টি কেন্দ্র রয়েছে ইনফোসিসের। যার সব ক’টিই বিশেষ আর্থিক অঞ্চল। ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আর্থিক ফলাফল অনুযায়ী সংস্থার মোট ব্যবসার অঙ্ক ১৬২ কোটি ৪০ লক্ষ ডলার। কিন্তু এই ব্যবসার মাত্র ২ শতাংশ হয় ভারতে। বাকি ৯৮ শতাংশ বরাতই আসে বিদেশ (মূলত আমেরিকা) থেকে। শিল্পমহল মনে করছে, এই কারণেই কম দামে পরিষেবা দেওয়ার এই প্রতিযোগিতায় রফতানির উপর কর ছাড়-সহ সেজের বিভিন্ন সুবিধা ছাড়লে লভ্যাংশ বাড়ানো কঠিন হবে ইনফোসিসের পক্ষে। তাই স্বাভাবিক ভাবেই তা ছাড়তে চাইবে না তারা। একই সমস্যা হবে উইপ্রো-রও। তবে তাদের সুবিধা হল, রাজ্যে সল্টলেক সেক্টর ফাইভে তাদের ক্যাম্পাস রয়েছে। যা তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের জন্য রাজ্যের প্রথম বিশেষ আর্থিক অঞ্চল। ফলে ইনফোসিস যেখানে পশ্চিমবঙ্গে পা রাখতে চাইছে, সেখানে এটি উইপ্রোর প্রকল্প সম্প্রসারণ। তা ছাড়া সংস্থা সূত্রে খবর, প্রথম ক্যাম্পাসে এখনও জায়গা থাকায়, প্রয়োজনে ৫০ একরের কম জমিতেও কাজ চালিয়ে নিতে পারবে তারা। |