তিন জেলার ১৩ কলেজে ভোট
গ্যাস, শূন্যে গুলি বালুরঘাট কলেজে
ছাত্র সংসদের ভোট ঘিরে লাঠি, কাঁদানে গ্যাস, শূন্যে গুলিও চলল উত্তরবঙ্গের একাধিক কলেজে। বুধবার উত্তরবঙ্গের ৩টি জেলায় ১৩টি কলেজে ছাত্র সংসদের ভোট হয়। তার মধ্যে মালদহের সামসি কলেজে সিপি-টিএমসিপি জোটের মধ্যে এসএফআইয়ের সংঘর্ষ ঠেকাতে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুড়তে হয়। সেখানে ইঁট-ঢিল ছোড়াছুড়িতে অনেকে জখম হন। বালুরঘাট কলেজে টিএমসিপি অধ্যক্ষকে ঘেরাও করে রাখলে তা হটাতে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। ওই দুটি কলেজে সংঘর্ষের সময়ে অন্তত ২৫ জন কমবেশি জখম হয়েছেন বলে ছাত্রছাত্রীরা জানিয়েছেন। অন্য কলেজগুলিতে নির্বিঘ্নেই ভোট হয়েছে। এ দিন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও ভোট প্রক্রিয়ার মনোনয়ন পত্র পরীক্ষার কাজ নির্বিঘ্নে শেষ হয়। সেখানে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ৭৯টি আসন। ৬১ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দিতে ছাত্র সংসদ দখল করতে চলেছে ছাত্র পরিষদ। ১৬ আসনে ২৯ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন হবে। দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার যে এলাকার বিধায়ক সেই মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির মধ্যেই পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়। স্বভাবতই শঙ্করবাবুকে ঘিরে উচ্ছ্বসিত জেলা কংগ্রেস শিবির। চার দশক বাদে ছাত্র পরিষদ নিরঙ্কুশ ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ দখল করতে পারায় উচ্ছ্বাসে ভেসে যান শঙ্করবাবুও।
বালুরঘাটে আহত ছাত্র। ছবি: অমিত মোহান্ত।
রায়গঞ্জের কংগ্রেস সাংসদ দীপা দাশমুন্সির খাসতালুক কালিয়াগঞ্জ কলেজের ছাত্র সংসদ তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ছাত্র পরিষদ। এ দিন ভোট নিয়ে গোলমাল বাঁধে বালুরঘাট ও সামসিতে। ছাত্র সংসদের ভোট গণনা চলার সময় ওই কলেজে টিএমসিপি-সিপি জোট ও এসএফআইয়ের সংঘর্ষ বাঁধে। সংঘর্ষে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় কলেজ। রাতে ৪টি মোটরবাইক ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এসএফআই সমর্থকদের বিরুদ্ধে। জোটের বিরুদ্ধেও ৫টি বাইক ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সংঘর্ষ থামাতে প্রথমে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে। তাতেও পরিস্থিতি আয়ত্বে না আসায় পুলিশ শূন্যে গুলিও ছোড়ে বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে দুপক্ষের ৩২ জন ছাত্র জখম হয়েছেন। দু’পক্ষের ছোঁড়া ইট গিয়ে লাগে কয়েকজন পুলিশকর্মীকে। দু’তরফেই পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার প্রতিবাদ করায় এক তৃণমূল নেতাকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুর ও বুনিয়াদপুর কলেজে ছাত্র সংসদ দখল করল তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। বাকি তিনটি কলেজের ক্ষমতা ধরে রাখল এসএফআই-পিএসইউ বাম মোর্চা। এই কলেজ গুলি হল বালুরঘাট কলেজ, বালুরঘাট মহিলা কলেজ এবং হরিরামপুর কলেজ। বালুরঘাটে সন্ধ্যা অবধি টিএমসিপির বিক্ষোভের জেরে অধ্যক্ষ অসুস্থ হয়ে পড়েন। চিকিৎসক গিয়ে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বললেও টিএমসিপির তরফে বাধা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওঠে। সে সময় পুলিশ অধ্যক্ষকে ঘর থেকে বার করে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায়। ওই সময় এক অশিক্ষক কর্মীকে অধ্যক্ষের ঘর থেকে জোর করে বের করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে সংঘর্ষ হয়। সেই সময় পুলিশ লাঠি চালায়। পুলিশের লাঠির আঘাতে ১০ টিএমসিপি কর্মী সমর্থক জখম হন। ৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
সামসিতে গণ্ডগোল। ছবি: বাপি মজুমদার।
গঙ্গারামপুর কলেজ হাতছাড়া হওয়ার পরে প্রাক্তন সিপিএম মন্ত্রী নারায়ণ বিশ্বাস অভিযোগ করেন, “গণতান্ত্রিকভাবে ভোট হলে ওরা একটা আসনও পেত না। ছাত্রদের ভয় দেখিয়ে ওরা ভোট দিতে দেয়নি। পুলিশ ছিল নীরব দর্শক।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, “গণতান্ত্রিকভাবে কলেজ গুলিতে ভোট হয়েছে। জেলার পাঁচটি কলেজ নির্বাচনের ফলই তার প্রমাণ। তার অভিযোগ, হেরে গিয়ে এখন মিথ্যা ভয় দেখানোর অভিযোগ তোলা হচ্ছে।” বালুরঘাট কলেজে ৫১ টি আসনের মধ্যে ৩৩ টি আসনে জয়ী হয় পিএসইউ-এসএফআই বাম জোট। একটানা দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বালুরঘাট কলেজের ক্ষমতায় থাকা বাম ছাত্রজোট ফের সংসদ দখল করলেও একটি থেকে এ বারে ১৭টি আসন পেয়েছে টিএমসিপি-সিপি জোট। বালুরঘাট গার্লস কলেজ ও হরিরামপুর কলেজের সংসদ ফের দখল করে এসএফআই নেতৃত্বাধীন বাম ছাত্র জোট। হরিরামপুরে ১৮টি আসনেই জয়ী হয় এসএফআই। বালুরঘাট গার্লস কলেজে ১৮টি আসনের মধ্যে ১৭টি দখল করে পিএসইউ-এসএফআই জোট। ১টি পায় টিএমসিপি।, মালদহে ৭টি, দক্ষিণ দিনাজপুরে ৫টি ও উত্তর দিনাজপুরে ১টি কলেজে ভোট হয়েছে। সামসি কলেজে ১৯টি আসনের মধ্যে ১৮টিতে জিতে সংসদ দখলে রেখেছে এসএফআই-পিএসইউ। মালদহ পলিটেকনিক কলেজ এসএফআইয়ের থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে ছাত্র পরিষদ ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ জোট। এই কলেজে ৩৮টি আসনের ছাত্র পরিষদ পেয়েছে ১২টি আসন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদ পেয়েছে ২৪টি আসন। এসএফআই একটিও আসনও পায়নি। গৌড় কলেজ পুনরায় নিজেদের দখলে রেখেছে ছাত্র পরিষদ। সাউথ মালদহ কলেজে ও নিজেদের দখলে রাখল ছাত্র পরিষদ। এখানে ১৯টি আসনের মধ্যে ১৮টি ছাত্র পরিষদ ও একটি তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। এসএফআই একটি আসনও পায়নি। পাকুয়াহাট কলেজ , মালদহ মহিলা মহাবিদ্যালয় , কালিয়াচক কলেজ এসএফআই ফের দখল করেছে। কালিয়াচক কলেজে ২১ টির মধ্যে ২১টিই আসন পায় এসএফআই। মালদহ মহিলা কলেজের ১৮টি আসনই এসআফআই পেয়েছে। পাকুয়াহাট কলেজের ১৮ আসনই এসএফআই দখল করে। কালিয়াগঞ্জ কলেজে ২৯টি আসনের মধ্যে ২৬টি পেয়ে সংসদ দখল করেছে ছাত্র পরিষদ। টিএমসিপির দখলে গিয়েছে ৩টি আসন। এসএফআই কোনও আসন দখল করতে পারেনি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.