ইসলামপুর হাসপাতালে বেআইনি ভাবে গজিয়ে উঠা বস্তি যাতে আর গজিয়ে না উঠতে পারে, সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে চলেছে ইসলামপুর মহকুমা প্রশাসন। ইসলামপুর হাসপাতালেরই অন্য একটি সরকারি জমিতে তাদের পুর্নবাসন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। বুধবার এ কথা জানান ইসলামপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের জনশিক্ষা ও গ্রন্থাগার মন্ত্রী আবদুল করিম চৌধুরী। পাশাপাশি, ওই দিন অগ্নিকাণ্ডে বস্তির যে সব মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড পুড়ে গিয়েছে তাঁদের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরেই বিভাগীয় সচিবকে নির্দেশ দেন, উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলে যথাযথ ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরে পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে দেওয়া হয়, তাদের পরীক্ষায় বসা নিশ্চিত করা হয়েছে। |
উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “ইসলামপুরে অগ্নিকান্ডে যে সব মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড পুড়ে গিয়েছে তারা যাতে পরীক্ষায় বসতে পারে সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাজ্য শিক্ষা দফতরের সচিবকে আমি লিখিতভাবে ওইসব পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ড পুড়ে যাওয়ার ঘটনার কথা জানিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, ওইসব পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতে কোনও সমস্যা হবে না! পাশাপাশি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ কর্তৃপক্ষের কাছে জেলা প্রাশাসনের তরফে ওইসব পরীক্ষার্থীদের বিকল্প অ্যাডমিড কার্ড পাঠানোর আর্জি জানানো হয়েছে। এত কম সময়ে বিকল্প অ্যাডমিড কার্ড পরীক্ষার্থীদের হাতে না পৌঁছলেও তাদের পরীক্ষায় বসতে কোনও সমস্যা হবে না বলে শিক্ষা দফতরের তরফে জেলা প্রশাসনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।” এদিন দুপুরে ইসলামপুর হাসপাতালে প্রশাসনিক বৈঠক করেন ইসলামপুর বিধায়ক তথা মন্ত্রী। সেখানে ইসলামপুর হাসপাতালের সুপার জ্যোতি বিশ্বাস, মহকুমাশাসক সুমনজিত সেনগুপ্ত, মহকুমা পুলিশ আধিকারিক নীলকান্ত সুধীর কুমার। মঙ্গলবার ইসলামপুর হাসপাতালের সংলগ্ন বস্তিতে আগুন লাগে। ছাই হয়ে যায় ওই বস্তির ২৫টি বাড়িও। হাসপাতালের রোগীর আতঙ্কে বাইরে চলে যান। হাসপাতাল সূত্রে খবর, বুধবার বিকেল পর্যন্ত হাসপাতালে ৩১ জন রোগীর খোঁজ মেলেনি। তাঁরা বাড়ি চলে গিয়েছেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মনে করছেন। এদিনই হাসপাতালের বস্তির বাসিন্দারা বিক্ষোভ দেখান। পরে বস্তির সাফাই কর্মীরা পরে ইসলপুর থানা সংলগ্ন ৩১ নং জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁদের অভিযোগ, স্বাস্থ্য দফতর দুর্গতদের খোঁজ নেয়নি। পরে অবশ্য ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবালের হস্তক্ষেপে অবরোধ ওঠে। ইসলামপুর পুরসভার চেয়ারম্যান কানাইয়ালাল অগ্রবাল বলেন,.“মঙ্গলবার রাতে ওদের থাকার ও খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সাময়িক ভাবে নগদ ৫০০ টাকা করে ছাড়াও, জামা কাপড় দেওয়া হয়েছে।” তবে দমকল বাহিনির কাজে অখুশি পুর চেয়ারম্যান। দমকল বাহিনীর এক আধিকারিক মনোজ কুমার জানান, পর পর কিছু গ্যাসের সিলিন্ডার ফেটে যাওয়ায় আগুন বেশি ছড়িয়েছে। |
তবে ইসলামপুর হাসপাতালের সংলগ্ন ওই বস্তিতে ভয়ঙ্কর ওই আগুনে ইসলামপুর হাসপাতালে বড় ধরনের বিপত্তি ঘটে যেতে পারতো বলে মনে করছেন লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা। ইসলামপুর হাসপাতালের সুপার জ্যোতি বিশ্বাস বলেন, “হাসপাতালের ওই বস্তি বহু পুরোনো। হাসপাতালের ৯ জন সাফাই কর্মী ওই বস্তিতে থাকে। বাড়ি ভাড়া ভাতা পেলেও ওরা ওই বস্তিতে থাকে কেন বুঝতে পারছি না।” এদিকে, অগ্নিদগ্ধ বস্তির মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী অনু জমাদার, পপি জমাদার, বিশ্ব বাসকের মতো পরীক্ষার্থীদের বই পত্র। অনেকের অ্যাডমিট কার্ড পুড়ে গিয়েছে। অনু ও পপি বাংলা মাধ্যমের ছাত্রী হলেও বিশ্ব স্থানীয় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র বিশ্ব বাসকে বলে “পরীক্ষা শুরু হয়েছে দুদিন হয়েছে। আজকেও পরীক্ষা আছে। জামা কাপড় সব কিছু পুড়ে গিয়েছে। অ্যাডমিট কার্ডও পুড়ে গিয়েছে। স্কুলে যাচ্ছি যদি পরীক্ষা দিতে দেয় দেব।”
|
ছবি দু’টি তুলেছেন অভিজিৎ পাল। |