রেশন কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সব অধিকার কেড়ে নিল খাদ্য দফতর। খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বুধবার এ কথা জানান। তিনি বলেন, “রেশন কার্ড বিলিবণ্টনে পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের সব অধিকার খর্ব করা হয়েছে। এখন থেকে রেশন কার্ড মঞ্জুর করার অধিকার থাকবে শুধু বিডিও-র। তিনি খাদ্য দফতরের পর্যবেক্ষকের মাধ্যমেই যাবতীয় তথ্য যাচাই করে রেশন কার্ড মঞ্জুর করবেন।”
বিডিও-রাই যে পঞ্চায়েতের কাজের দেখভাল করবেন, আগেই সরকারি ভাবে তা ঘোষণা করা হয়েছিল। খাদ্য দফতরের এ দিনের ঘোষণায় সেই সিদ্ধান্তেরই প্রতিফলন ঘটল। সেই সঙ্গেই দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। খাদ্যমন্ত্রী জানান, সরেজমিনে খতিয়ে দেখে ওই কাজ করবেন পঞ্চায়েতের কর্মীরা।
পঞ্চায়েতের রেশন কার্ড দেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হল কেন?
খাদ্যমন্ত্রী জানান, আগে পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিদের দেওয়া বাসস্থান সংক্রান্ত শংসাপত্রের ভিত্তিতে রেশন কার্ড দেওয়া হত। শুধু তা-ই নয়, গোছা গোছা রেশন কার্ড জমা রাখা হত পঞ্চায়েতে। সেখান থেকেই কার্ড বিলি হত। যদিও রেশন কার্ডে সই করতে হত খাদ্য দফতরের পর্যবেক্ষককে। এখন থেকে প্রত্যেক আবেদনকারীকে মহকুমা রেশন আধিকারিকের কাছ থেকে রেশন কার্ড নিতে হবে।
রাজ্যের সীমান্ত জেলাগুলিতে বহু নার্সিংহোমই টাকা নিয়ে বিদেশিদের ভুয়ো ‘বার্থ সার্টিফিকেট’ তৈরি করে দিচ্ছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “ব্যাপক হারে এই ব্যবসা চালানো হচ্ছে। পাঁচ হাজার টাকা দিলেই জন্মের ভুয়ো শংসাপত্র পাওয়া যাচ্ছে। সেই সব ভুয়ো শংসাপত্র এবং পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের দেওয়া শংসাপত্রের ভিত্তিতে এত দিন রেশন কার্ড দেওয়া হত। ফলে সীমান্তবর্তী
এলাকায় বহু বাংলাদেশিই রেশন কার্ড ও জন্মের ভুয়ো শংসাপত্র নিয়ে ভারতের নাগরিক হয়ে যাচ্ছেন। এটা বন্ধ করতেই এ বার রেশন কার্ড দেওয়ার অধিকার দেওয়া হচ্ছে শুধু বিডিও-দের।”
মন্ত্রী জানান, নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কাউকে বসবাসকারী হিসেবে শংসাপত্র দিতেই পারেন। কিন্তু রেশন কার্ড দেওয়ার ক্ষেত্রে সেটাকেই প্রামাণ্য নথি হিসেবে ধরা হবে না।
এখন থেকে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করবেন বিডিও বা খাদ্য দফতরের পর্যবেক্ষক। নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দেওয়া বসবাস সংক্রান্ত শংসাপত্র পরীক্ষার সময় যদি দেখা যায় যে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উল্লিখিত ঠিকানায় থাকেন না, তা হলে যিনি শংসাপত্র দিয়েছেন, খাদ্য দফতর বা বিডিও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করবেন। সব ঠিক থাকলে তবেই আবেদনকারী নতুন রেশন কার্ড পাবেন।
এত দিন পঞ্চায়েতের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দারিদ্রসীমার নীচে থাকা মানুষদের চিহ্নিত করতেন। তাঁদের সেই অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানান খাদ্যমন্ত্রী। এখন থেকে শুধু পঞ্চায়েতের কর্মীরাই বাড়ি বাড়ি ঘুরে সমীক্ষার ভিত্তিতে দারিদ্রসীমার নীচের বাসিন্দাদের চিহ্নিত করবেন। তবে পঞ্চায়েত দফতরই বিপিএল তালিকা তৈরি করবে এবং খাদ্য দফতর বিপিএল কার্ড দেবে। |