পুণ্যস্থান নবদ্বীপে রোজ আসা যাওয়া করেন বহু লোক।এই শহরে বহিরাগতদের সেই নিরন্তর স্রোতের অভ্যাসই হয়ে গিয়েছে শহরের মানুষের। আর সেই সুযোগেই শহরে ঢুকে পড়তে পারে বিভোর পুণ্যার্থীর সঙ্গে সঙ্গে চতুর দুষ্কৃতীও। পর্যটক, পুণ্যার্থীদের ভিড়ের সুযোগটাই তারা নেয় বলে পুলিশের অনুমান। সেই কারণেই বাস ও ট্রেনে ভাল যোগাযোগ থাকা এই শহর কখনও কখনও অপরাধচক্রের পাণ্ডাদের দুষ্কর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিও হয়ে ওঠে। তাই এই শহরের হোটেলগুলিতে সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ হচ্ছে।
শীতের মরসুমে বেড়াতে এসেছিল কলকাতার গিরীশ পার্কের পাসোয়ান পরিবার। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবন্ধী কিশোরী পুষণা। ১৮ ডিসেম্বর মায়াপুর বেড়াতে গিয়ে কেনাকেটার সময় থেকে নিখোঁজ সে। সেই রাতেই পুষণার বাবা রাজকুমার পাসোয়ান নবদ্বীপ থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন। কিন্তু এখনও খোঁজ মেলেনি তার। ঠিক দু’মাস পরে ওই মায়াপুর হুলোর ঘাট থেকেই গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে এক মহিলা সহ তিন নারী পাচারকারীকে। এই তিন জনের মধ্যে বর্ধমানের মন্তেশ্বরের বাসিন্দা সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের তিন দিনের পুলিশি হেফাজত হয়েছে। নবদ্বীপের শ্যামল ঘোষ এবং অনুভা বিশ্বাসকে ১৪ দিনের জেল হেফাজত দিয়েছেন নবদ্বীপ আদালতের বিচারক। পুলিশের অনুমান সুশান্ত পাচারচক্রের বড় ধরনের পাণ্ডা। তাকে জেরা করে বহু তথ্য মিলবে।
পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, ২০১০ সালে নবদ্বীপ থানায় ১৩২টি, ২০১১ সালে ১৬৩টি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল। ২০১২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটি ২৯। যার সিংহভাগ মহিলা।
নবদ্বীপ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও আইনজীবী দিলীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “থানায় নথিভুক্ত নিখোঁজের সংখ্যার থেকে নবদ্বীপে বাস্তবে নিখোঁজের সংখ্যা অনেক বেশি। সাধারণ ভাবেই যত ডায়েরি হয়, তার অন্তত চার গুণ নিখোঁজ থাকে। অনেকে নিজেরা যান না ডায়েরি করতে। অনেক সময়ে পুলিশের তরফেও উদাসীনতা থাকে।”
পুলিশের একাংশেরই মত, এই শহরের বেশ কিছু হোটেলে দুষ্কৃতীদের অবাদ যাতায়াত রয়েছে। রোজ বহু লোকের ভিড়ে হোটেল মালিকেরাও অনেক সময়ে বুঝতে পারেন না, কে পুণ্যার্থী এবং কে দুষ্কৃতী। ফেডারেশন অফ বেঙ্গল হোটেলিয়ার্স-এর রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ সরকারের কথায়, “আমাদের সংস্থার অন্তর্ভুক্ত হোটেলগুলিতে আমরা সরকারি আইন মেনে কাজ করি। কিন্তু নবদ্বীপ মায়াপুরের বেশ কিছু হোটেল নিজেদের মতো করে ব্যবসা করে। তাদের দায় আমরা নেব না। প্রশাসনকে অনুরোধ করব, তাঁরা যেন এই সব হোটেলের দিকে নজর রাখে।” তিনি জানান, কিছু হোটেলে তাঁরা সিসিটিভি বসানোর চেষ্টা করছেন। তা ছাড়া, হোটেলে রাত্রিবাস করতে গেলে পরিচয়পত্র দেওয়া বাধ্যতামূলকও করা হচ্ছে। |