বেআইনি কাঠকল বন্ধ করতে এ বার একই দিনে বাঁকুড়া জেলাজুড়ে অভিযান চালাল বন দফতর। বুধবার দিনভর দুই ডিএফও-র নেতৃত্বে বন দফতরের কর্মীরা জেলার বেশ কয়েকটি কাঠকলে হানা দেন। বন্ধ করে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি ‘বেআইনি’ কাঠকলও। বাঁকুড়া (উত্তর)-এর ৩৪টি, বাঁকুড়া (দক্ষিণ)-এর ৩০টি ও বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বনবিভাগের চারটি কাঠকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে কাঠগুলিতে বেআইনি ভাবে মজুত করে রাখার অভিযোগে প্রচুর পরিমাণে কাঠও আটক করে বন দফতর।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল থেকে বাঁকুড়া (উত্তর)-এর ডিএফও এস কুলান ডেইভাল এবং ডিএফও (দক্ষিণ) সুধীরচন্দ্র দাসের নেতৃত্বে, রেঞ্জ আধিকারিকরা ও বনকর্মীরা কাঠকলগুলিতে হানা দেন। তাঁরা কাঠকলগুলির ‘লাইসেন্স’ রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখেন। যে সব কাঠকলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছিল না, তাদের কাঠ আটক করা হয়। বাঁকুড়ার (উত্তর)-এর ডিএফও বলেন, “আমার এলাকার কমবেশি ৮০-৯০টি কাঠকলের কোনও ‘লাইসেন্স’ নেই। তার মধ্যে এ দিন অভিযান চালিয়ে ‘লাইসেন্সবিহীন’ ৩৪টি কাঠকল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই কাঠকলগুলিতে মজুত করা ৬৯ ট্রাক্টর ‘বেআইনি’ কাঠ আটক করা হয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ লক্ষ টাকা।” বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বাঁকুড়া (উত্তর) বন বিভাগের পাত্রসায়র, ইন্দাস, বেলিয়াতোড়, গঙ্গাজলঘাটি, ছাতনা থানা এলাকায় এ দিন অভিযান চালানো হয়। তার মধ্যে ছাতনা ও ইন্দাস এলাকায় বেশি কাঠকল বন্ধ করা হয়েছে। ওই জুই এলাকায় ২২টি কাঠকল বন্ধ করা হয় এবং ৪০ ট্রাক্টর কাঠ আটক করা হয়েছে। এখনও যে সব ‘বেআইনি’ কাঠকল চলছে, সেখানেও শীঘ্রই বন দফতর অভিযান চালাবে বলে বন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে।
বাঁকুড়া (দক্ষিণ)-এর ডিএফও সুধীরচন্দ্র দাস বলেন, “খাতড়া মহকুমার ৮৮টি কাঠকলের ‘লাইসেন্স’ রয়েছে। কমবেশি ৫০টি কাঠকল লাইসেন্স না থাকা অবস্থায় চালানো হচ্ছে। এ রকম বেআইনি ভাবে চলা ৩০টি কাঠকল এ দিন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ১৭৫০ ঘন-ফুট কাঠ আটক করা হয়েছে।” ইঁদপুর, হিড়বাঁধ, খাতড়া, রানিবাঁধ, রাইপুর, বারিকুল, সারেঙ্গা, সিমলাপাল ও তালড্যাংরা ব্লকের বিভিন্ন কাঠকলে অভিযান চালানো হয়। ডিএফও জানান, চোরাই কাঠ কেনাবেচা চক্রের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষ্ণুপুর পাঞ্চেত বন বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই এলাকার ৩৫টি কাঠকলের ‘লাইসেন্স’ রয়েছে। আরও কিছু করাতকল চালু থাকলেও সেগুলির ‘লাইসেন্স’ নেই। এ দিন জয়পুর ব্লকের তেমন চারটি করাতকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যদিও কাঠকল মালিকরা বন্ধ করে দেওয়া ওই কাঠকলগুলি বেআইনি বলতে নারাজ। বাঁকুড়া জেলা কাষ্ঠ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক শিবদাস মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “কাঠকল মালিকেরা অনেক দিন আগেই লাইসেন্স পাওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। অনেকে লাইসেন্স প্রাপকদের ‘প্যানাল লিল্টে’ রয়েছেন। তারপরেও তাঁদের লাইসেন্স দেয়নি বন দফতর। এটা বন দফতরের গাফিলতি। তদন্ত করলেই এ সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।” খাতড়া মহকুমা করাতকল মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক জগবন্ধু মণ্ডলেরও দাবি, “সরকারি নিয়ম মেনে ‘লাইসেন্স’ পাওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছিল। বৈধ ‘পারমিট’ নিয়ে কাঠ মজুত করা হয়েছিল। কিন্তু লাইসেন্স না দিয়ে বন দফতর দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের হয়রান করছে। কাঠকল বন্ধ করে দেওয়ায় শুধু কাঠকল মালিকেরা নয়, কয়েকশো কাঠকল শ্রমিক বেকার হয়ে পড়লেন।” তবে, দীর্ঘ দিন আবেদন করা সত্বেও রাঠকল মালিকদের কেন লাইসেন্স দেওয়া হয়নি, তার সদুত্তর দিতে পারেননি ডিএফও (দক্ষিণ)। তিনি বলেন, “বিষয়টি রাজ্যস্তরের। আমরা বলতে পারব না।” |