রিপোর্ট তলব হাইকোর্টে
গঙ্গা শোধনে গড়িমসি,
ভর্ৎসনা কেন্দ্রীয় সংস্থাকে
খোদ প্রধানমন্ত্রীই ‘ন্যাশনাল গঙ্গা রিভার বেসিন অথরিটি’ বা জাতীয় গঙ্গা অববাহিকা কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান। গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করতে সেই সংস্থা কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। তাই বুধবার ওই সংস্থাকে তিরস্কার করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। গঙ্গার নাব্যতা বাড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওই সংস্থা কী করছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে হাইকোর্টকে তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ এবং বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ।
কেন্দ্রীয় সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় গঙ্গা অববাহিকা কর্তৃপক্ষ তৈরি করে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মুখ্যমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে এই ব্যাপারে একটি কমিটি গড়ে রাজ্যও। সংস্থার কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থও বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার কোনও কাজই করেনি ওই সংস্থা। গঙ্গার দূষণ নিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের দায়ের করা একটি জনস্বার্থের মামলার শুনানি ছিল এ দিন। সুভাষবাবু আদালতে জানান, গঙ্গাকে দূষণমুক্ত করার ব্যাপারে জাতীয় গঙ্গা অববাহিকা কর্তৃপক্ষের আদৌ নজর নেই। তাঁদের যত আগ্রহ গঙ্গার ঘাট এবং পাড় সাজানো নিয়েই। ওই সংস্থা এ রাজ্যে এখনও পর্যন্ত যত কাজ করার কথা ঘোষণা করেছে, গঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে তার কোনওটিরই কোনও সম্পর্ক নেই।
গঙ্গা নিয়ে রাজ্যের পূর্বতন মুখ্যমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। কিন্তু তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী সেই কমিটির একমাত্র বৈঠকে মাত্র আড়াই মিনিট সময় দিয়েছিলেন বলে আদালতে জানান সুভাষবাবু। আর নতুন মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত ওই কমিটির কোনও বৈঠকই করেননি। আসলে নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পরে ওই কমিটি নতুন করে তৈরিই হয়নি। সুভাষবাবুর বক্তব্য, এর থেকেই বোঝা যায়, গঙ্গার দূষণমুক্তি নিয়ে কেন্দ্র বা রাজ্য কোনও সরকারেরই কোনও আগ্রহ নেই।
কলকাতা হাইকোর্ট গত ১৫ বছরে গঙ্গা নিয়ে অন্তত ৫০টি নির্দেশ দিয়েছে। ২০০৬ সালে একটি কমিটিও তৈরি করে দিয়েছিল তারা। রাজ্যের তৎকালীন পরিবেশসচিব মদনলাল মীনা ছিলেন সেই কমিটির চেয়ারম্যান আর দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ছিলেন আহ্বায়ক। কিন্তু পরিবেশসচিব বদলি হয়ে যাওয়ায় এবং বিশ্বজিৎবাবু দীর্ঘ ছুটিতে যাওয়ার পর থেকে সেই কমিটি কার্যত অস্তিত্বহীন। অথচ ওই কমিটি গঙ্গার দূষণ নিয়ন্ত্রণে সক্রিয় ভূমিকা নেওয়ার জন্য ১৪টি পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছিল। কারণ কল্যাণী থেকে বজবজ পর্যন্ত বিভিন্ন পুরসভা এবং শিল্প-কারখানার অন্তত ৩০০ নিকাশি নর্দমা গঙ্গায় এসে পড়েছে। সেই অশোধিত নোংরা জল গঙ্গাকে প্রতিদিন দূষিত করছে। সব চেয়ে বেশি দূষণ ঘটছে কলকাতা ও হাওড়া থেকে আসা নোংরা জলের জন্য। সুভাষবাবু বক্তব্য শোনার পরে এ দিন নির্দেশ দেয় ডিভিশন বেঞ্চ।
সুভাষবাবু এ দিন ডায়মন্ড হারবারে গঙ্গার দূষণ এবং পাড় দখল করে হোটেল তৈরির বিষয়টিও তোলেন আদালতে। গঙ্গার পাড়ে প্লাস্টিক ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও ডায়মন্ড হারবারের নদীতীরে কী ভাবে বর্জ্য প্লাস্টিক জড়ো হয়েছে, ডিভিশন বেঞ্চকে তার ছবি দেখান সুভাষবাবু। গঙ্গার বাঁধ টপকে নদীর চর দখল করে হোটেল নির্মাণের ছবিও দেখান তিনি। আদালত ডায়মন্ড হারবার পুরসভাকে নির্দেশ দেয়, ওই সব হোটেলের নির্মাণ বৈধ কি না এবং পুরসভা হোটেলের নকশা অনুমোদন করেছে কি না, তা জানিয়ে পুর-কর্তৃপক্ষকে তিন সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট দিতে হবে আদালতে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.