দিগরুইঘাট-মুণ্ডেশ্বরী সেতু
সেতুর সংযোগকারী রাস্তার জমি অধিগ্রহণে টালবাহানা
দিগরুইঘাট-মুণ্ডেশ্বরী সেতু নির্মাণ শেষের পথে। কিন্তু দু’দিকে সংযোগকারী রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে প্রায় ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি আদৌ ব্যবহার করা যাবে কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ‘দিগরুইঘাট-মুণ্ডেশ্বরী সেতু নির্মাণ দাবি সমিতি’র পক্ষে এ নিয়ে আলোচনার জন্য রাজ্যের পূর্ত ও সড়ক মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে চলতি মাসের গোড়ার দিকে। ওই সমিতির সভাপতি রাধাকান্ত সামন্তের অভিযোগ, সংযোগকারী রাস্তার জন্য মানুষ জমি দিতে উৎসুক। কিন্তু সরকারের কোনও হেলদোল নেই।” ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু যে গতিতে কাজ এগোচ্ছে, তাতে ২০১২ সালের শেষ দিকেই সেতু হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। কিন্তু সংযোগকারী রাস্তা তৈরি না হলে সেতু কোনও কাজেই আসবে না বলে মনে করেন রাধাকান্তবাবু।
পুড়শুড়া ও খানাকুলের ২৪টি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি মতো অহল্যাবাঈ রোড থেকে সামন্ত রোড হয়ে ৮ কিলোমিটার দূরে দিগরুইঘাটের কাছে পুড়শুড়া-রাধানগর রোডকে মুণ্ডেশ্বরী যেখানে দু’ভাগ করেছে সেখানেই তৈরি হচ্ছে সেতুটি। ১৯৯৮ সালে সেতুর দাবিতে একটি কমিটি তৈরি হয়। পূর্ত দফতর সরেজমিনে দেখে ১৯৯৯ সালের মে মাসে। ২০০১ সালে জরিপ ও নকশার কাজ শেষ হয়। সে সময়ে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১ কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা। বেশ কিছু দিন কাজটি জেলা পরিষদে আটকে থেকেছে। পরে কমিটি তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দ্বারস্থ হয়। প্রকল্পের অনুমোদন মেলে ২০০৬ সালের ১৯ জানুয়ারি। কাজ শুরু হয় ওই বছরেরই ডিসেম্বর মাসে। কাজ শেষ করার নির্ধারিত সময় ছিল ২০০৯ সালের মে মাস। কিন্তু কাজ শুরুর বছর খানেক কাটতে না কাটতেই তৎকালীন সেতু নির্মাণকারী সংস্থা কাঁচা মালের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে, এই অভিযোগ তুলে কাজ বন্ধ করে দেয়। প্রশাসনের তরফে তাদের বরখাস্ত করা হয়। প্রকল্পের দ্বিতীয় দফায় বরাত পায় অন্য ঠিকাদার সংস্থা ‘ম্যাকিনটোশ বার্ন লিমিটেড’। সম্পূর্ণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২০ কোটি টাকা। ২০১০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিন বছরের মেয়াদে ওই বরাত পায় বর্তমান সংস্থাটি। সংস্থার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ার দেবপ্রিয় সিংহ বলেন, “সেতুর সংযোগকারী রাস্তার বরাত পাওয়া সত্ত্বেও চিহ্নিত জমিতে রাস্তা তৈরির নকশার সরকারি ছাড়পত্র মেলেনি। জমি অধিগ্রহণই হয়নি।” দেবপ্রিয়বাবু জানান, চলতি বছরের শেষের দিকেই কাজ হয়ে যাবে। সেতুর দুই প্রান্তের ‘বেস পিলার’গুলি জমি অধিগ্রহণ ছাড়াই স্থানীয় ‘উৎসুক জমিদাতাদের’ অনুমতি স্বাপেক্ষে করা হয়েছে।
নতুন সেতুটিকে কেন্দ্র করে পুড়শুড়া ও খানাকুলের প্রায় ৪ লক্ষ মানুষ অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন। কলকাতা, হাওড়া, তারকেশ্বর পৌঁছতে ১৮ কিলোমিটার রাস্তা কমে যাবে এই সেতু হলে। ফসল সহজেই পৌঁছে যাবে চাঁপাডাঙা, শ্যাওড়াফুলি, আরামবাগ প্রভৃতি এলাকার বাজারগুলিতে। এ ছাড়া, কোনও কারণে অহল্যাবাঈ রোডের উপরে রামমোহন সেতু বন্ধ থাকলে নতুন সেতুটি দক্ষিণবঙ্গের সঙ্গে যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা করে দেবে বলে সেতু নির্মাণ দাবি সমিতি এবং স্থানীয় মানুষের বক্তব্য।
কিন্তু জমি অধিগ্রহণ এখনও হল না কেন?
পুড়শুড়ার বিধায়ক (সেতুর দু’পাড়ের পঞ্চায়েত এলাকাগুলি পুড়শুড়া বিধানসভা কেন্দ্রের আওতায় পড়ে) তৃণমূলের পারভেজ রহমান বলেন, “সংযোগকারী রাস্তার জন্য জমি অধিগ্রহণ নিশ্চিত না করেই এই সেতুর অনুমোদন নিয়ে বর্তমান সরকার প্রশ্ন তুলেছে। আমি যথাযথ জায়গায় তদবির করেছি।” যদিও সরকারের এই দৃষ্টিকোণের সমালোচনা করে রাধাকান্তবাবু বলেন, “সেতু এবং সংযোগকারী রাস্তার জন্য একই সঙ্গে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। প্রায় দশ বছর আগে রাস্তার জন্য প্রয়োজনীয় ২৫ বিঘা জমির নকশা তৈরি হলেও সেই জমি অধিগ্রহণের আইনানুগ প্রক্রিয়া হয়নি।” এ ব্যাপারে হুগলি জেলা পূর্ত (সড়ক) দফতরের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার সমরেশ ভট্টাচার্য জানান, জমি অধিগ্রহণের ব্যাপারটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হয়েছে। চূড়ান্ত রিপোর্ট আসেনি।
দাবি সমিতির সার্ভে অনুযায়ী, ৫৩ জন ছোট-বড় চাষির জমি নিতে হবে ওই রাস্তা তৈরি করতে গেলে। কী বলছেন সেই সব চাষিরা?
প্রণব মাইতি নামে এক জন বলেন, “আমরা জমি দিতে আগ্রহী। কিন্তু সরকার অধিগ্রহণ করছে কই? জমির দাম-সংক্রান্ত কোনও আলোচনাই হচ্ছে না।” আর এক চাষি দিলীপ ভুক্ত বলেন, “পূর্ব পাড়ে আমার দু’বিঘা মতো জমি যাচ্ছে। ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে ফয়সালা পরের ব্যাপার, মাপজোকই হচ্ছে না।” উৎপল গুপ্ত নামে আর এক কৃষকের বক্তব্য, “আমার ৫ কাঠা জমি যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। জমি দিতে কোনও আপত্তি নেই। সেতুটি জরুরি।” নীরেন পাল নামে চণ্ডীতলার এক চিকিৎসকের বক্তব্য, “২০০৫ সালে নোটিস ছাড়াই কিছু জমি পিলারের জন্য ছেড়ে দিই জনস্বার্থের কথা ভেবে।” ক্ষতিপূরণ নিয়ে কথা বলতে গেলেই জেলা পূর্ত দফতর দুর্ব্যবহার করছে বলে তাঁর অভিযোগ। সে কথা অবশ্য মানতে চাননি সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.