প্রবন্ধ ৩...
যমুনাবতী সরস্বতী
একলা মেয়ে? ছি!
খাস কলকাতা শহরের বুকে কুড়িয়ে পেলাম নারীদের জন্য এক অনুশাসনমালা, সপ্তাহখানেকের মধ্যেই যা কিনা লেখা হয়ে গেছে! না কি, লেখা শুরু হয়েছিল, সভ্যতার সেই গোড়াতেই! চলুন, পাঠ করি:
পোশাক হবে এমন, শরীরের ভগ্নাংশও অনাবৃত বা স্পষ্ট না হয়।
সুরক্ষা দেবে পরিবার। বিবাহের আগে, বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষেরা। বিবাহের পর, অবশ্যই, স্বামী।
কষ্ট প্রাণান্তকর হলেও, বিবাহবিচ্ছিন্না হওয়ার প্রশ্নই যেন না ওঠে কখনও। ‘সিংগল’ মহিলা, ‘কালিমালিপ্ত চরিত্র’রই সমার্থক।
যদি মন খারাপ হয়, অথবা যদি আনন্দ জাগে, তবে খোলা আকাশের নীচে, বা অনেক মানুষের ভিড়ে নেচে, গেয়ে, পানীয়ের গেলাসে মুখচ্ছবি দেখে কাটানো? উঁহু, এ সব ভাবনাও বিষবৎ পরিত্যাজ্য। বিশেষত, যে নারী সন্তানের জননী, সমাজ তাকে দেবী-মহিমায় প্রোমোশন দিতে চায়, তার পক্ষে একা একা, ব্যক্তিগত উপভোগ মহাপাপ।
যদি পা ফস্কে যায়, শ্লীলতাহানি ঘটে, মনে রাখতে হবে, এর মূলে ছিল মেয়েটিরই রঙিন হাতছানি, যা কিনা বরাবর প্রলুব্ধ করে এসেছে নিরপরাধ, রিপু-বশ পুরুষদের।
ধর্ষণের ফাঁদ পাতা ভুবনে। বাড়ির মধ্যে সেটা ঘটলে তো বাড়িতেই তা ঢাকা-চাপা দিয়ে রাখা চলে। বাড়ির বাইরে ঘটলে, চুপচাপ অশ্রু ঝরানোই বুদ্ধিমতীর কাজ। কারণ, প্রতিকারের আশায় যেখানেই যাওয়া হবে, সেখানেই ধর্ষিতার পরিবারে যৌন ব্যবসায়ের ইতিহাস আছে কি নেই, ইত্যাকার জরুরি, রসাল তথ্যের খোঁজে, দোষীকে খোঁজার আগেই, ব্যস্ত হয়ে পড়বেন ভারপ্রাপ্ত মানুষজন। চাই কী, যাঁদের কাছে বিচারের আশায় যাওয়া হল, তাঁদের সঙ্গেও ঘটনাটির পুরো মহলা দিতে হতে পারে!
জীবনের অভিধান থেকে ‘মদ্যপান’, ‘লেটনাইট’, ‘ক্লাবহপিং’, ‘পুরুষসঙ্গী’, এমন কিছু কিছু শব্দ চিরতরে ছেঁটে ফেলতে হবে। এ সব শব্দের সঙ্গে জড়িত যে সব মহিলা, তাঁরা যৌনকর্মী বই আর কিছু নয়।
লেখাপড়া চলতে পারে, কিন্তু অতি উচ্চশিক্ষিত হলে এই বাজারে পাত্র জোটানো মুশকিল হয়ে পড়ে। উপার্জনক্ষম হলে আপত্তি নেই মোটে, কিন্তু বেশি যোগ্যতার জীবনসঙ্গিনী মেনে নেওয়া অনেক সময় পতিদের পক্ষে একটু ‘চাপ’ হয়ে যায়। বিয়ে না হলেই বা কী? সবর্নাশ! অভিভাবকহীন মহিলাকে ‘শেয়ালকুকুর’ ছিঁড়ে খাবে।
মেয়েদের যা শোভা পায়, সে রকম ভব্য-সভ্য কাজ, দশটা-পাঁচটার চাকরি নেওয়াটাই শুভ!
সবোর্পরি, একটি মেয়েকে ভয় পেতে শিখতে হবে, পদে পদে।
এই টেন কম্যান্ডমেন্টস-এর সঙ্গে কোনও উদাহরণমালা লিপিবদ্ধ করা হল না। দরকারও নেই। কারণ প্রভাতী সংবাদপত্রের পাতা ওল্টালেই চোখে পড়বে, একের পর এক রোমহর্ষক ঘটনা গাদাগাদি। পার্ক সার্কাস স্টেশনে বালিকার মৃতদেহ। ঢাকুরিয়া ব্রিজের নীচে বস্তাবন্দি স্কুলড্রেসপরা কিশোরী। মালদহে, ইভটিজিং-এর হাত থেকে মেয়েকে বাঁচাতে গিয়ে বাবার মৃত্যু ও সেই সঙ্গে ভিটে মাটি ছেড়ে মেয়েটির পালিয়ে যাওয়া। রাস্তায়, দিদির অপমানের প্রতিবাদ করার শাস্তিস্বরূপ ভাইয়ের প্রাণদান, ফলে, অসহায় যুবতীটির বাধ্য হয়ে কল সেন্টারের চাকরি ছেড়ে দেওয়া। পাঁচ বছরের মেয়ের ধর্ষণকারী, তার বাবা নিজেই। দুর্ঘটনার সুবিচার চেয়ে থানার দ্বারস্থ হওয়া তরুণীকে সেই থানাতেই ভারপ্রাপ্ত পুলিশের বারংবার ধর্ষণ। ক্লাব থেকে মাঝরাতে বেরিয়ে, ধর্ষণের শিকার হওয়া মহিলা।...
নারী দিবসের আর পক্ষকালও বিলম্ব নেই। প্লিজ! সংবেদনশীল মহিলাদের কাছে আমার একটিই অনুরোধ, যাবতীয় অনুষ্ঠান, বক্তৃতামালা, সেমিনার, আলোচনা, আমোদ-আহ্লাদ পাশে সরিয়ে রেখে, এ বারের নারী দিবস পালন করুন এক চরম শোকদিবস হিসাবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.