সম্পাদকীয় ২...
রক্ষক হউক রক্ষী
ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত-দৈর্ঘ্য ২৪২৯ মাইল। এই বিস্তৃত সীমান্তে কোনও প্রাকৃতিক বাধা নাই, এমনকী কোনও সুচিহ্নিত কাঁটাতারের বেড়াও নাই। স্বভাবতই সীমান্ত-চৌকি ও সেখানে প্রহরারত রক্ষীদের এড়াইয়া দুই দেশের মানুষই অবাধে যাতায়াত করিয়া থাকে। উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস দুইটি স্বতন্ত্র দেশের জন্ম দিলেও একই ভাষাভাষী হওয়ার কারণে দেশান্তরে এই যাতায়াত কদাচিৎ অনুপ্রবেশ বলিয়া গণ্য হয়। কিন্তু এক দেশের নাগরিক বৈধ পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া অন্য দেশে প্রবেশ করিলে তাহা বেআইনি অনুপ্রবেশ বলিয়াই মান্য। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে এই অনুপ্রবেশ প্রায়শ একমুখী, দরিদ্র ও অনগ্রসর বাংলাদেশ হইতে ভাগ্যান্বেষণে বহুসংখ্যক মানুষ ভারতে প্রবেশ করে। সীমান্ত জেলাগুলির রাজনীতিকরা ভোটের রাজনীতির স্বার্থে এই অনুপ্রবেশকারীদের রেশন কার্ড সহ সচিত্র ভোটার পরিচয়পত্র বানাইয়া তাহাদের ভারতীয় নাগরিকও করিয়া লন। পাশাপাশি এই ঢিলেঢালা সীমান্তের ফাঁকফোকর গলিয়াই নিত্য গরু-পাচার, বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান, এমনকী জঙ্গি অনুপ্রবেশও ঘটিয়া চলে। সীমান্তপ্রহরা নিশ্ছিদ্র করা তাই জরুরি।
মাঝেমধ্যেই অনুপ্রবেশকারী ও পাচারকারী সন্দেহে সীমান্তরক্ষীদের হাতে নিরীহ মানুষদের হয়রানি, নিগ্রহ, এমনকী নিধনের সংবাদও প্রকাশিত হয়। সম্প্রতি ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের এমনই এক নিগ্রহের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্কেও কালো ছায়া ফেলিয়াছে। ফলে বাংলাদেশ সরকার বিপাকে পড়িয়াছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের অবাঞ্ছিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াইতে কী করণীয়, তাহা আলোচনা করিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ভারত সফরেও আসিতেছেন। ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক গোটা ঘটনাটিকে ঢাকার সহিত নয়াদিল্লির সুসম্পর্ক বিষাইয়া তোলার জন্য পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর ষড়যন্ত্র আখ্যা দিয়াছে। কিন্তু তাহাতে কি বি এস এফের স্বেচ্ছাচার, দমন নীতি ও নিষ্ঠুরতার ইতিহাসকে আড়াল করা যায়? প্রশ্ন হইল, কেন এত কাল ধরিয়া সীমান্তে গরু ‘পাচার’ হইতে থাকিবে? অন্যান্য বাণিজ্যিক পণ্যের মতো গরুও যথাযথ বাণিজ্য-অলিন্দ দিয়া বাংলাদেশে যাইবে না কেন? এ জন্য আরও বেশি করিয়া সীমান্ত-হাট খুলিয়া দেওয়া হোক, পণ্য বিনিময়ের করিডর তৈয়ার করা হোক, যাহাতে রক্ষীদের স্বেচ্ছাচারের সুযোগ কমে।
সীমান্তরক্ষীদেরও নূতন করিয়া প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। তাঁহাদের কাজ যে মানুষকে রক্ষা করা, নিগ্রহ ও নিহত করা নয়, এই শিক্ষা কি তাঁহাদের যথেষ্ট পরিমাণে আছে? অনেক ক্ষেত্রেই তাঁহাদের আচরণ তেমন ভরসা দেয় না। বস্তুত, পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর বিভিন্ন স্থানীয় স্তরে যাঁহারা কাজ করেন, দৈনন্দিন কাজগুলি যাঁহাদের সাধন করিতে হয়, সাধারণ মানুষের সহিত যাঁহাদের নিত্য সংযোগ, অর্থাৎ, এক কথায়, যাঁহারা বাহিনীর ‘মুখ’, তাঁহাদের সংবেদনশীলতা বা মানবাধিকার সম্পর্কে তাঁহাদের সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি। অথচ, এই বিষয়ে প্রশাসনের উপরমহল সচরাচর উদাসীন। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ক্ষেত্রে ইহার সহিত হয়তো যুক্ত হয় অন্য এক সমস্যাও। দেশভাগের জেরে যে-অবিশ্বাস প্রতিবেশীর সহিষ্ণুতা ও উদারতাকে কলুষিত করিয়াছে, তাহার ক্রিয়াও এ ক্ষেত্রে থাকা সম্ভব। কিন্তু সেই কারণেই রাষ্ট্র তথা প্রশাসনকে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের পরাকাষ্ঠা আরও বেশি করিয়া স্থাপন করিতে হইবে। দোষারোপ কিংবা আত্মপক্ষ সমর্থনে সাফাই, কোনওটাই সুপ্রতিবেশীসুলভ সম্পর্কের রক্ষাকবচ নয়। কাঁটাতারের বেড়ার নিশ্ছিদ্রতা তো নয়ই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.