সম্পাদকীয় ১...
দুঃসংবাদ
যে কারণেই ধর্মঘট ডাকা হউক না কেন, তাহা যে কার্যক্ষেত্রে বন্ধের চেহারা লইবে, এবং সরকারি কর্মীদের নিকট দিনটি ছুটিতে পরিণত হইবে, ইহা পশ্চিমবঙ্গে নিয়মে পর্যবসিত। বেসরকারি কর্মীদের চাকুরি বড় দায়, ফলে তাঁহারা ঝুঁকি লইয়াও বাহির হইতে বাধ্য হন। সরকারি কর্মীদের এত দিন একটি ছুটির আবেদন ঠুকিয়া দিলেই চলিত। ২৮ ফেব্রুয়ারি বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নগুলি যে ধর্মঘট ডাকিয়াছে, তাহাতেও ছবিটি পৃথক হইবার কারণ ছিল না। কিন্তু বাদ সাধিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি ঘোষণা করিয়া দিলেন, ওই দিন সকল সরকারি কর্মীকে দফতরে হাজির থাকিতে হইবে, কোনও ছুটি মঞ্জুর করা হইবে না। নিঃসন্দেহে অতি কঠোর সিদ্ধান্ত। অতি জরুরিও বটে। সিদ্ধান্তটির জনপ্রিয় না হইবার সম্ভাবনা প্রবল। মুখ্যমন্ত্রীও নিশ্চয় তাহা জানেন। তবুও তিনি এই সিদ্ধান্তটি করায় কিঞ্চিৎ আশা জাগে, হয়তো তিনি সুপ্রশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করিতেছেন। সরকারি কর্মীদের ট্রেড ইউনিয়নের অধিকার নাকচ করিবার সিদ্ধান্তে যে সাহসের প্রমাণ ছিল, বর্তমান সিদ্ধান্তটিতেও তাহা আছে। মুখ্যমন্ত্রী এই পথেই চলুন। এই পরিবর্তন জরুরি।
বামফ্রন্টে অবশ্য পরিবর্তনের চিহ্নমাত্র নাই। ব্রিগেডের সমাবেশে বিপুল জনসমাগম দেখিয়া নেতারা সিদ্ধান্ত করিয়া ফেলিলেন, ২৮ তারিখের ধর্মঘটটিই তাঁহাদের পেশিশক্তি প্রদর্শনের পরবর্তী ধাপ হইবে। ধর্মঘট এবং বন্ধের মধ্যে যে চরিত্রগত প্রভেদ আছে, এই কথাটি সব দলের নেতারাই বিস্মৃত হইয়াছেন, বামপন্থীরা ব্যতিক্রম নহেন। শাসনক্ষমতায় থাকিলে ধর্মঘটকে বন্ধে পরিণত করা সহজ, তাঁহারা গত ৩৪ বৎসরে সেই কাজটি বহু বার করিয়াছেন। এখন তাঁহারা বিরোধী, ফলে শাসক হইলে যে সামান্য চক্ষুলজ্জার বালাই থাকে, তাহারও আর প্রয়োজন নাই। সর্বভারতীয় ধর্মঘটের দিন গোটা দেশে যখন তাহার বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়িবে না, তখন পশ্চিমবঙ্গকে অচল করিয়া বামপন্থী নেতারা নিজেদের বাহুবল প্রদর্শন করিবেন। তাহাই প্রথা। প্রশ্ন হইল, পেশিশক্তি প্রদর্শনের একটি অজুহাত তৈরি করা ভিন্ন এই ধর্মঘটটির কি আদৌ কোনও প্রয়োজন ছিল? শ্রমিক সংগঠনগুলি যে দাবিগুলি আদায় করিবার অছিলায় এই ধর্মঘট ডাকিয়াছে, তাহার কোনটি ধর্মঘটের মাধ্যমে আদায় করা সম্ভব হইবে? পাইকারি সূচকের নিরিখে মূল্যবৃদ্ধির হার যে সময় গত দুই বৎসরের মধ্যে সর্বনিম্ন, সেই সময় মূল্যবৃদ্ধি রোধ করিবার দাবিতে ধর্মঘট হাস্যকর। ধর্মঘট ডাকিবার উদগ্র বাসনায় কারণ লইয়া ভাবিতে সম্ভবত সময় হয় নাই।
ধর্মঘটের এই রাজনীতিটি ভারতের নিজস্ব। সভ্য দুনিয়া হইতে এমন অকারণ ধর্মঘট ডাকিবার রীতি বহু কাল আগেই কার্যত উঠিয়া গিয়াছে। ইউরোপের দেশগুলিতে শ্রমিক সংগঠনগুলির ডাকা ধর্মঘটের কারণ বিশ্লেষণ করিলে এই কথাটি বুঝিতে নেতাদের সমস্যা হওয়ার কথা নহে। কিন্তু, অত ভাবিলে শক্তি প্রদর্শনের রাজনীতির ক্ষতি হয়। কাজেই, অকারণের ধর্মঘটকে বাংলা বন্ধে পরিণত করিতে নেতারা উদ্গ্রীব হইয়াছেন। প্রমাণ করিয়াছেন, রাজ্য সম্মেলনে যতই আত্মশুদ্ধির বাণী শোনা যাউক, সি পি আই এম আসলে সি পি আই এম-এই আছে। বন্ধের আত্মঘাতী রাজনীতির বিরোধিতা করিয়া এক সময় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য দলের বিরাগভাজন হইয়াছিলেন। তিনি বলিয়াছিলেন, দুর্ভাগ্যজনক ভাবে তিনি এমন একটি দলের সদস্য, যাহারা বন্ধ ডাকে। রাজ্য সম্মেলনের মঞ্চে এই কথাটি তিনি প্রত্যাহার করিয়া লইলেন। বলিলেন, বন্ধের বিরোধিতা করা তাঁহার ভুল হইয়াছিল। অতঃপর, শান্তিকল্যাণ। বন্ধের ন্যায় একটি সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক বিষয়েও দলের অভ্যন্তরে আর কোনও বিরোধী কণ্ঠ থাকিল না। পশ্চিমবঙ্গের মানচিত্রে সি পি আই এম-এর অস্তিত্ব অদূর ভবিষ্যতে সম্পূর্ণ মিলাইয়া যাওয়ার সম্ভাবনা নাই। ফলে, দলের অভ্যন্তরের এই নিরঙ্কুশ মতৈক্য রাজ্যের পক্ষেও দুঃসংবাদ।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.