কাছাড়ে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীদের হামলায় কাল রাতে একই সঙ্গে নিহত হলেন পিতা ও পুত্র। ঘটনার পর থেকেই নিখোঁজ স্ত্রী-কন্যা-সহ তিন জন। একজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। পুলিশের অনুমান, পারিবারিক কলহ বা জমি সংক্রান্ত বিবাদ থেকে এই ঘটনা ঘটেছে।
কাছাড়ের পুলিশ সুপার দিগন্ত বরা আজ জানিয়েছেন, পঞ্চাশ বছর বয়সি বিশ্বনাথ গোয়ালার মূল বাড়ি শিলচর থানার আতালবস্তিতে। বছর তিনেক ধরে তিনি ওই থানারই কাঁঠাল গ্রাম পঞ্চায়েতের মারোয়া গ্রামে জমি-বাড়ি করেন। দুই বিয়ে বলে প্রথম স্ত্রী মিলনননী থাকেন পুরোনো বাড়িতে। সঙ্গে ছেলে বিশাল (২৫)। মারোয়া গ্রামে থাকেন দ্বিতীয় স্ত্রী ময়নাসিং ও তাঁর আট বছরের কন্যা ডেপলি। বিশ্বনাথ থাকতেন দুই জায়গাতেই।
কাল রাতে বিশালও থেকে যান মারোয়ার বাড়িতে। শিবচতুর্দশী উপলক্ষে পিতা-পুত্র গিয়েছিলেন তিন হাজার ফুট উঁচু ভুবন পাহাড়ে। সেখান থেকে ফিরে থেকে যান এক বাড়িতেই। কমলাপ্রসাদ বাউরি নামে বিশ্বনাথের এক বন্ধুও ছিলেন অতিথি হিসেবে। আচমকা রাত দেড়টা নাগাদ ২০-২২ জনের দুষ্কৃতী দল বাড়িতে চড়াও হয়। বিশালকে বিছানাতেই কুপিয়ে মারে। বিশ্বনাথকে টেনেহিঁচড়ে তলায় নিয়ে আসে। ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায় তাঁর পুরো শরীর।
ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পিতা-পুত্র দু’জনই ঘটনাস্থলে মারা যান। কমলাপ্রসাদ গুরুতর জখম অবস্থায় পালিয়ে যান। তিনি শিলচর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ডাক্তাররা জানিয়েছেন, কমলাপ্রসাদের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। ও দিকে, ঘটনার পর থেকে ময়নাসিং এবং ডেপলির খোঁজ মিলছে না। নিখোঁজ বিশ্বনাথের ভাই নন্দলালও।
সকালে খবর পেয়ে ম্যাজিস্ট্রেট ধ্রুবজ্যোতি হাজরিকা ও শিলচর সদর থানার ওসি এস সি শর্মা অকুস্থলে যান। প্রাথমিক তদন্তের পর তাঁরা নিশ্চিত, প্রচণ্ড প্রতিহিংসায় পিতা-পুত্রকে খুন করা হয়েছে। নইলে হাত আলাদা বা সারা দেহ ক্ষতবিক্ষত করার যুক্তি নেই। ফলে পারিবারিক বা জমি সংক্রান্ত বিবাদ থেকে এই ঘটনা ঘটতে পারে। মিলনননী জানান, ক’ দিন আগে একটি বিলের মালিকানা নিয়ে মারোয়াতেই বিশ্বনাথ বিবাদে জড়িয়ে পড়েছিলেন। পরে তা মীমাংসাও হয়ে যায়। এর রেশ ধরেই এই হামলা কিনা পুলিশকে তা খতিয়ে দেখতে বলেন তিনি।
তবে পুলিশেরই একটি সূত্রের অনুমান, বিশ্বনাথের দ্বিতীয় স্ত্রী ময়নাসিং এই ঘটনায় জড়িত থাকতে পারেন। সঙ্গে মারোয়ার দুই জন।
তাদের গ্রেফতারের জন্য এখন চতুর্দিকে জাল বিছানো হয়েছে। |