আমূল বদলেছে জঙ্গলমহল, মত জয়রামের
মাওবাদী অধ্যুষিত জঙ্গলমহলে আদিবাসীদের রাজনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসার যে কাজ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেটাই এ বার গোটা দেশের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় করতে চাইছে মনমোহন সরকার। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী জয়রাম রমেশ আজ বলেছেন, “পুলিশি অভিযানের পাশাপাশি মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় মূল স্রোতের রাজনৈতিক দলগুলির কাজকর্ম বাড়াতে হবে। উন্নয়নে সামিল করতে হবে স্থানীয়দের। গত ক’মাসে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মাওবাদীদের পুরনো ঘাঁটি জঙ্গলমহলে সেটাই করে দেখিয়েছেন। তার ফলে ওখানকার পরিস্থিতিতে আমূল বদল এসেছে।”
আজ সন্ধ্যায় দিল্লির রেস কোর্স রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে যখন মনমোহন-মমতা বৈঠক চলছে, ঠিক সেই সময়ই ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতার ভূয়সী প্রশংসা করেন জয়রাম। কিছু দিন আগেই তিনি জঙ্গলমহলের বেশ কিছু এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সেই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই তিনি এ দিন জঙ্গলমহলের পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, মাওবাদী অধ্যুষিত দেশের ৭৮টি জেলায় পরিকাঠামো উন্নয়নে ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করা হয়েছে। এর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ থেকে শুরু করে রাজস্থান পর্যন্ত মধ্য ভারতের ১৭০টি আদিবাসী অধ্যুষিত জেলায় ‘রুরাল লাইভলিহুড ফাউন্ডেশন’ প্রকল্পও চালু করতে চলেছে কেন্দ্র। শীঘ্রই এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হবে। জয়রাম জানান, “আদিবাসীদের উন্নয়নের কাজে সামিল করার জন্য বিভিন্ন এনজিও ও নাগরিক সংগঠনকে জড়িয়ে নেওয়ার জন্যই এই প্রকল্প। কারণ, একা সরকারের পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়। ছত্তীসগঢ়ে বা ঝাড়খণ্ডে যেখানে প্রশাসন পৌঁছতে পারছে না, সেখানে খুব ভাল কাজ করছে রামকৃষ্ণ মিশন, খ্রিস্টান সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলি।”
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যগুলির পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের বৈঠকেও উন্নয়ন ও মাওবাদীদের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার উপরে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের তরফে ওই বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব জ্ঞানদত্ত গৌতম, ডিজিপি নপরাজিত মুখোপাধ্যায় ও ডিআইজি (মেদিনীপুর) বিনীত গোয়েল। রাজ্যের তরফে বৈঠকে জানানো হয়, কিষেণজির মৃত্যুর পরে জঙ্গলমহলে মাওবাদী কাজকর্ম এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেই মাওবাদীদের অস্ত্র-সমর্পণের জন্য অতিরিক্ত অর্থ ও পুনর্বাসনের উপর জোর দিয়েছিলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য, মাওবাদীদের অস্ত্র-সমর্পণের বদলে এখন এক-এক রাজ্যে এক-এক রকম অর্থ-পুরস্কার দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সারা দেশে একটি সাধারণ নীতি চালু করতে চায় কেন্দ্র। চিদম্বরম জানিয়েছেন, অস্ত্র-সমর্পণে মাওবাদীদের উৎসাহিত করতে আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ-পুরস্কার ঘোষণা করা হবে। যাঁরা আত্মসমর্পণ করছেন, তাঁদের ঠিক মতো পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দিকেও রাজ্যগুলিকে গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি। এ বিষয়ে কেন্দ্রও রাজ্যগুলিকে অর্থ সাহায্য করতে তৈরি। গ্রামোয়ন্ননমন্ত্রী জয়রাম রমেশ বলেন, “ওড়িশার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বেশ কিছু মাওবাদী ক্যাডার নির্বাচিত হয়ে এসেছেন বলে অনেকে উদ্বিগ্ন। এর থেকে ভাল কিছু হয় না। কারণ মাওবাদীরা নিজে থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিচ্ছেন।”
রাজ্যে রাজ্যে যৌথ অভিযানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সাফল্য মেলার পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এখন চাইছে, মাওবাদীরা সরকারের বিরুদ্ধে যে সব বিষয়ে প্রচার চালিয়ে আদিবাসীদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে, সে সব বিষয় নিয়ে পাল্টা প্রচার চালানো হোক। খনন বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করতে হলে স্থানীয় আদিবাসীদের কী ধরনের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে, সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থান বা আয়ের কী ধরনের সুযোগ তৈরি হবে এবং প্রতিশ্রুতির কতটা পূরণ হয়েছে, তা ব্যাপক ভাবে প্রচার করা প্রয়োজন বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এপ্রিলে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী-সম্মেলনে এই ‘প্রচার-যুদ্ধ’ নিয়ে আলোচনা হবে। মাওবাদীরা যাতে প্রচারের অস্ত্র পেয়ে না যায়, তার জন্য যৌথ অভিযানের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যথাসম্ভব সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে।
আজ রাজ্যগুলির তরফে দাবি উঠেছে, ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান’-এ জেলাগুলিকে যে অর্থসাহায্য দেওয়া হচ্ছে, তা দ্বাদশ পঞ্চবার্ষিকী যোজনাকালের শেষ অবধি, অর্থাৎ ২০১৭ সাল পর্যন্ত চালু রাখা হোক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এতে নীতিগত আপত্তি নেই। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে যোজনা কমিশন। তবে সড়কের মতো প্রাথমিক পরিকাঠামো তৈরিতে কেন্দ্রীয় টাকা যাতে পুরো ব্যয় হয়, আজ সে বিষয়ে জোর দেন চিদম্বরম। উন্নয়নের অগ্রগতি নিয়ে ২ মার্চ মাওবাদী অধ্যুষিত জেলাগুলির প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও-বৈঠক করবেন তিনি।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.