সকালে উঠে স্নান, পুজো সেরে বিনুনি বেঁধেই ছুট।
জন্মভিটের কোল ঘেঁষে পরিক্রমা করছেন। মন পড়ে রয়েছে সেখানে। কিন্তু যাওয়ার জো নেই। যেন কেউ দ্বীপান্তরের সাজা দিয়েছে। কমিউনিস্ট বাবার সন্ন্যাসী মেয়ে ছোটবেলায় সীমানা পেরিয়ে উত্তরপ্রদেশেও আসতেন। বুন্দেলখণ্ড এ পারে, ও পারেও। বুন্দেলখণ্ডের বেটি তিনি। কিন্তু কখনও কি ভেবেছেন, পাশেই মধ্যপ্রদেশের ছেলেবেলার গ্রামের গলি, খেতের আল এ ভাবে আলগোছে হারাতে হবে?
|
ইসকুলের গণ্ডি কখনও পেরোননি। কিন্তু কথার ঝাঁঝে তাঁর সঙ্গে পেরে ওঠা মুশকিল। এক ঘর নেতা আর ক্যামেরার সামনে তাঁর ঝাঁঝালো বিদ্রোহের পরেই বিজেপি উমা ভারতীকে পরিত্যাগ করেছিল। ছ’বছর নির্বাসনের পর আবার ফিরেছেন দলে। শর্ত একটাই। আর মধ্যপ্রদেশের ত্রিসীমানায় নয়। নতুন কর্মভূমি হবে উত্তরপ্রদেশ। লোধ নেত্রী। আবার হিন্দুত্বের মুখ। এ বারের ভোটে উমাই বিজেপির তুরুপের তাস। দলের কাণ্ডারী। অঘোষিত মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীও।
যে রাজ্যে ধুলো-কাদা মেখে খেলতে খেলতে বড় হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন, আজ সেখানেই ব্রাত্য। তাই সই। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে আসন পছন্দের সময়ও উমা বেছে নিয়েছেন তাঁর গাঁয়ের বাড়ির লাগোয়া কেন্দ্রই। অতীতে মধ্যপ্রদেশের বুন্দেলখণ্ডের খাজুরাহো কেন্দ্র থেকেই লড়তেন তিনি। এখন লড়ছেন তার পাশে উত্তরপ্রদেশের চারখারি থেকে। তবে শত হোক নতুন কেন্দ্র তো বটে! সকাল থেকে বেরিয়ে পড়ছেন নিজেকে চেনাতে। সকলকে চিনতেও।
লালকৃষ্ণ আডবাণী যে বাসটিতে চড়ে রথযাত্রা করেছেন, উমা সেটিই চেয়ে নিয়েছেন। সেই রথে চড়েই ঘুরছেন মহল্লায়-মহল্লায়। যে রাস্তায় বাস ঢোকে না, সেখানে গাড়িতে। হাতে একটা মাইক। জটলা দেখলেই “জয় শ্রী রাম।” কোমরে ব্যথা। যেখানেই যান, কাঠের পাটাতনে বসেন। তার মধ্যে আবার পায়েও চোট লেগেছে। “সোনায় সোহাগা বুঝলেন। এই পা আর সারবে না। তার মধ্যেই সকাল থেকে রাত দুটো পর্যন্ত ছোটাছুটি, লোকের সঙ্গে দেখা করা। আমাকে এঁরা সকলে নামে চেনেন। তবুও নতুন কেন্দ্র। কেক-ওয়াক তো নয়। আমাকেও তো সকলকে চিনতে হবে।” গাড়িতে বসে বললেন উমা।
পথে মন্দির দেখলেই ড্রাইভারকে বলেন ‘দাঁড়াও।’ পূজারিকে ডেকে বলেন, “জয় শ্রী রাম। মন্দিরে ক’টা সিঁড়ি?” “দিদি, চারটি।” “তা হলে চড়তে পারব না। আমার নামে মানত করে একটি নারকেল দিন ঠাকুরকে। বলবেন, জিতলে আসব। ততক্ষণে পা-টাও হয়তো ভালো হয়ে যাবে।” পূজারি উমার পা ছুঁতে গেলেন। “আহা! পা ছোঁবেন না। আমি প্রণাম নিই না।” হাতজোড় করে প্রণাম উমার। আর একটু এগোতেই গাঁয়ের আলে দু’টি মেয়ে। উমাকে দেখেই ছুটে এল। হাতে কিছু নেই, খিলখিল করে মাটির তিলকই পড়িয়ে দিল উমার কপালে। “নাম কী?”, জিজ্ঞেস করলেন উমা। পিপলি আর তিতলি। মাথায় দু’হাত দিয়ে আশীর্বাদ করলেন বিজেপি। তার পরেই মুখ ঘুরিয়ে বললেন, “জানেন, যদি রাজনীতিতে না আসতাম, তা হলে অণ্ণা হজারের মতো কেউ হতাম। মানুষ আমাকে টানে। আমি খুব সহজেই মিশে যেতে পারি সকলের সঙ্গে।” |
অনেকক্ষণ ঘোরার পর লোভ সামলাতে না পেরে বলেই ফেললাম, “আপনি যখন ফের দলে এলেন, অনেকেই ভেবে ছিলেন আবার কোনও অঘটন ঘটাবেন! ফের আপনার কোনও বিদ্রোহ দেখবে গোটা দেশ...” প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই আকাশের দিকে আঙুল তুলে বললেন, “ভগবানে বিশ্বাস করেন? সব ভগবানের কৃপা। কথায় কথায় আমার রাগ হত বটে। জীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি ঠিক করেছি, সব সময় মনের কথাই শুনব। মনের কথাই বলব। কিন্তু আর বাইরে নয়। যা বলার দলে বলব। তবে সত্যি কথা বলতে কী, আমি ভেবে দেখেছি, ব্যক্তিগত জীবনে তো সবই পেয়েছি। কোনও আক্ষেপ নেই। দুঃখ নেই..,” এক নাগাড়ে বলে চললেন উমা।
তবুও যে পাশের রাজ্য মধ্যপ্রদেশের হাত ধরেই আপনার যাবতীয় পরিচিতি, সেখানে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে না?
চোখের দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসি। তার পরেই চমকে দিলেন। চার দিকে ধু-ধু মাঠ। ধুলো উড়িয়ে এগোচ্ছে উমার কনভয়। সামনের জিপে পুলিশ গোটা যাত্রা হ্যান্ডিক্যামে বন্দি রাখছে। হাইপ্রোফাইল প্রার্থীর প্রচার। নির্বাচন কমিশনে রিপোর্ট করতে হবে। উমা গান ধরলেন। জন ডেনভার। কান্ট্রি রোডস। “কান্ট্রি রোডস, টেক মি হোম
টু দ্য প্লেস আই বিলং
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া, মাউন্টেন মমা
টেক মি হোম, কান্ট্রি রোডস....”
উমা মানেই চমক। কখন কী করবেন, কেউ জানে না। জোর-জবরদস্তি উত্তরপ্রদেশে পাঠিয়েছে দল। মন এখনও মধ্যপ্রদেশে।
মোহন ভাগবত, নিতিন গডকড়ীরা শুনলেন কি? |