এ মাসের শেষেই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ শুরু করতে চায় কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন (কেএমআরসি)। সব কিছু ঠিকঠাক চললে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে আগামী ২৫ ফেব্রুয়ারি সুভাষ সরোবরের কাছে সেই কাজ শুরু হবে। ‘টানেল বোরিং’ যন্ত্রের মাধ্যমে মাটি কাটা এবং একই সঙ্গে রেলের সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ পূর্ব ভারতে এই প্রথম হবে।
পাশাপাশি, আগামী এপ্রিলের মধ্যেই ট্রেনের কোচের বরাত দেওয়ার জন্য সংস্থা নির্বাচনের কাজও সম্পূর্ণ করতে চায় কেএমআরসি। এ জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র প্রক্রিয়ায় যারা অংশ নিয়েছিল, তাদের মধ্যে থেকে প্রাথমিক পর্বে তিনটি সংস্থাকে ফেব্রুয়ারির গোড়ায় নির্বাচিত করেছে তারা। সেগুলি হল মিৎসুবিশি-কাওয়াসিকি কনসর্টিয়াম, রোটেম-টয়ো ডেনকি কনসর্টিয়াম এবং ক্যাফ।
কেএমআরসি-র এমডি সুব্রত গুপ্ত জানান, মার্চের মধ্যে ওই তিন প্রতিযোগী সংস্থার প্রযুক্তিগত দক্ষতা খতিয়ে দেখা হবে। এপ্রিলের মধ্যে আর্থিক অবস্থা খতিয়ে দেখে সেই মাসেই একটি সংস্থাকে চূড়ান্ত করার চেষ্টা হবে। নির্বাচিত সংস্থাটি ৮৪টি কোচ তৈরির (১৪টি ট্রেন) বরাত পাবে।
কলকাতার প্রথম মেট্রো রেলের পরিকাঠামো নির্মাণের চেয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিকাঠামো নির্মাণের পদ্ধতি সম্পূর্ণ আলাদা। আগে মাটি কেটে তা সরিয়ে ধাপে ধাপে সুড়ঙ্গ তৈরি হত। তার পরে ফের সেই কাঠামোর উপরে মাটি চাপা দেওয়া হত। গোটা প্রক্রিয়াটির জন্য মাটির উপরের অংশের যান চলাচল ও যাবতীয় কাজ বন্ধ রাখতে হত।
এ বার আধুনিক প্রযুক্তিতে মাটি কাটার সঙ্গে সঙ্গেই সুড়ঙ্গ তৈরি হবে মাটির উপরের জীবনযাত্রা সচল রেখেই। প্রসঙ্গত, মোট ১৮.৫৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যপথের মধ্যে মাটির উপর দিয়ে ট্রেন যাবে ৫.৭৪ কিলোমিটার। বাকি ৮.৮৪ কিলোমিটার পথ (ফুলবাগান থেকে হাওড়া ময়দান) যাবে মাটির নীচে, সুড়ঙ্গ দিয়ে।
এই সুড়ঙ্গপথ নির্মাণে জার্মানি থেকে আনা হয়েছে দু’টি টানেল বোরিং যন্ত্র। দ্বিতীয় যন্ত্রটি হাওড়ার দিকে জুলাই থেকে কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা সংস্থা-কর্তাদের। একই ভাবে গঙ্গার নীচে প্রায় দশ তলা বাড়ির সমান গভীর দিয়ে যাবে সুড়ঙ্গটি। সেই পথের দৈর্ঘ্য প্রায় আধ কিলোমিটার।
মেট্রোর সুড়ঙ্গটি যেখান দিয়ে যাবে, তার আশপাশে অনেক পুরনো বাড়ি থাকায় সতর্কতার সঙ্গে কাজটি করবে কেএমআরসি। সুব্রতবাবু জানান, যন্ত্রটি দৈনিক ১০-৩৫ মিটার গভীরতায় মাটি কাটতে সক্ষম হলেও আপাতত ১০ মিটার মাটি কাটা হবে। এর সঙ্গে সঙ্গেই সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য কাঠামো জোড়া লাগানো হবে। ইতিমধ্যেই রাজারহাটে এ রকম প্রায় দু’হাজার কাঠামোর অংশ তৈরি হয়ে গিয়েছে। সুড়ঙ্গে যাতে জল না ঢোকে, সে জন্য বিশেষ ধরনের ‘গ্যাসকেট’ লাগানো হবে। উল্লেখ্য, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো-র ১২০ বছরের স্থায়িত্বের কথা মাথায় রেখেই তৈরি হয়েছে নকশা। |